পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Rఏe প্রবাসী—আশ্বিন, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড মশায়, আপনার ভীমরতি ধরেচে, ভদ্রমহিলার কাছে গিয়ে অসভ্যতা করবেন দেখচি ? e আমার বড় রাগ হ’ল । নাম বলতে একটু ভুল করেচি তাতে কী এমন মহাভারত অশুদ্ধ হয়েচে ? বললুম —“দেখ, ঘন, তুই আর আমার কাছে সভ্যতার বড়াই করিস না । ক’ট মহিলা দেখেচিস তুই ? জানিস, আমার তিন খুড়শাশুড়ী, চার শালাজ, সাত শালী, আর গিন্নী ত আছেনই—এই চল্লিশ বৎসর তাদের সঙ্গে কারবার করে আসচি ? ঝি ফিরে এসে আমাদের নিয়ে গেল দোতলার একটি ছোট ঘরে । জিগীষা দেবী টেবিলের কাছে ব’সে খানকতক মোটা-মোট হিসেবের খাতা উলটচ্চেন। বললেন —“আমাকে এখনি একটা কমিটি মিটিং-এ যেতে হবে, আপনারা.একটু তাড়াতাড়ি বক্তব্য শেষ করলে বাধিত হব ? * জিগীষা দেবী বেশ দশাসই মহিলা, জবরদস্ত চেহারা, পরিপাটি সাজগোজ । পাউডারের স্তর ভেদ ক’রে স্বগোল মুখের নিবিড় শ্যামকাস্তি উকি মারচে, কালিদাস যদি দেখতেন ত লিখতেন—যেন খড়িপড়া ছাচিকুমড়ে । আমি একটু ঘবড়ে গিয়েছিলুম, কাবণ এরকম ডেপুটেশনে আসা আমার অভ্যেস নেই। কিন্তু ছেলেরা যখন আমাকেই মুখপাত্র স্থির করেচে তখন কথা কইতেই হবে। বললুম—'মা লক্ষ্মী, এই যে দেখচেন পাচজন ছোকরা, এরা হচ্চে পাচটি তরুণ । এটির নাম কাত্তিক, চমৎকার ছেলে, কিন্তু এর বাপ চরণ ঘোষ একে বলেচে শুয়োর-কা-বাচ্চা, তাতে বাবাজীরা সকলেই বড় মৰ্ম্মাহত হয়েচেন । আমরা ছেলেবেলায় বাপ-জ্যাঠার গালাগাল বিস্তর থেয়েচি, সোনা-পারা মুখ ক’রে সমস্ত সয়েচি। কিন্তু সেদিন আর নেই মশায়। তখন এই কলকাতায় ঘোড়ার ট্রাম চ’লত, ছেলেরা গোপ রাখত, কোটের ওপর উড়নি ওড়াত, মেয়ের নোলক প’রত আর নাইবার ঘরে লুকিয়ে গান গাইত, গভৰ্ম্মেন্টকে লোকে তখন ব’লত সদাশয় সরকার বাহাদুর।’ জিগীষা দেবী বাধা দিয়ে বললেন—“তরুণদের দলে আপনি কেন ? শক্ত সমস্ত। কিন্তু কেদার চাটুয্যে ঠকবার ছেলে নয়, বল্লুম—“আজ্ঞে আমি একজন প্রবীণ তরুণ।’ বাটলে এক্সপ্লেন ক’রে দিলে—‘ও’র বয়েস হয়েচে বটে, কিন্তু মনটি একদম কাচ।।’ জিগীষা দেবী কিন্তু খুশী হলেন না। আমি উপমা দিয়ে বুঝোবার চেষ্টা করলুম।–“কি রকম জানেন ? এই গুজরাট ডাব আর কি, ওপরে ঝুনে ভেতরে নেয়াপাতি ।” ঘনে তখন রেগে কাই হয়েচে । আমাকে ধমকে বললে—“চুপ করুন চাটুয্যে মশায়, কেবল আবোলতাবোল বকচেন। কেলো, তুই বল । কেলে তখন হোটেলের সমস্ত কাণ্ড বর্ণনা ক’রে বললে—‘দেখুন, আমরা বড়ই অপমানিত উৎপীড়িত নিৰ্য্যাতিত হয়েচি ৷ বাড়িতে অধীনতার আবেষ্টনে আর থাকতে চাই না, নিজেদের একটা স্বাধীন আশ্রম বানাতে চাই। পিজরে-ভাঙা চন্দন! চায় পাখনা মেলে বাচতে রে, অরুণ-রাঙা মুক্তাকাশের তক্তাপোষে নাচতে রে। আপনি যদি একটু চেষ্টা করেন তবে অনায়াসে একটা আশ্রম গ’ড়ে উঠবে। এখন এ সম্বন্ধে একটি বাণী আমরা আপনার কাছে প্রার্থনা করি।” জিগীষা দেবী কিছুক্ষণ ধ্যানস্থ হয়ে রইলেন। তারপর শিস দিয়ে ডাকলেন—‘সুষ, স্বয —’ একটি ছোট্ট প্রাণী গুটুগুট্‌ ক’রে ঘরে এল। কুত্ত৷ নয় । ইনি স্থযেণবাবু, জিগীষা দেবীর স্বামী । রোগ, বেঁটে, চোখে চশমা, মাথায় টাক, কিন্তু গোপজোড়াটি বেশ বড় আর মোম দিয়ে পাকানো । সতীসাধবী যেমন সর্বহার হয়েও এয়োতের লক্ষণ শাখাজোড়াটি শেষ পর্য্যন্ত রক্ষা করে, বেচারা সুষেণবাবুও তেমনি সমস্ত অধিকার খুইয়ে পুরুষত্বের চিহ্নস্বরূপ এই গোপজোড়াটি সযত্বে বজায় রেখেচেন। ঘরে এসে ঘাড় নীচু ক’রে সবিনয়ে বললেন—“ডেকেচ ? জিগীষা দেবী ছেলেদের দেখিয়ে বললেন—‘এরা বাণী নিতে এসেচেন ।” স্বষেণবাবু চোখ কপালে তুলে বললেন—‘বানি? এই যে সেদিন ননী স্যাকরা বেয়াল্লিশ টাকা নিয়ে গেল ?