পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৭৯৬ প্রবাসী—অশ্বিন, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড ব্রতী করিবার চেষ্টা তাহার অবশ্বকৰ্ত্তব্য । তিনি নিজের সঙ্কীর্ণতা ও পূৰ্ব্ব শত্রুত ভুলিয় তাহার পিতার পরম শত্রু রাজা শুভকরণ বুন্দেলার সহিতই প্রথমে দেখা করিলেন । শুভকরণ কয়েকদিন বিশেষ স্নেহ করিয়া ছত্রসালকে নিজের কাছে রাখিলেন এবং যুবকের উৎকণ্ঠী এবং বিষন্নতায় দয়াপরবশ হইয়া বাদশাহের কাছে তাহার জন্য উচ্চ মনসব এবং মহোবার জাগীর প্রার্থনা করিয়া উকীল পাঠাইতে চাহিলেন । এক সময়ে ইহা অপেক্ষা অল্পেও হয়ত ছত্রসাল আজীবন সম্রাটের সেবা করিতেন । কিন্তু স্বাধীনতা ছাড়া আজ র্তাহার প্রেয় কিছুই নাই । তিনি বিনা দ্বিধায় বলিয়া ফেলিলেন— আমি চাকরি করিব না—বাদশার সহিত যুদ্ধ করিব । দিল্লীশ্বরের সহিত বিবাদ ? এ যেন গলায় পাথর বাধিয়া সস্তরণের চেষ্টা । শুভকরণ ত অবাক ! আন্তরিক রাজভক্তি না থাকিলেও শুভকরণ সে কালের ‘মডারেট’–পাছে বিপদে পড়েন এই ভাবিয়া তিনি ছত্রসালকে তৎক্ষণাৎ বিদায় দিলেন । ধরাইয়া দিলে নিশ্চয়ই কিছু পুরস্কার মিলিত, কিন্তু বাদশ ঔরঙ্গজেবের হিন্দু-বিদ্বেষ হিন্দুগণকে এই নীচতার কিছু উৰ্দ্ধে টানিয়া তুলিয়াছিল । রাজদণ্ড কিংবা নেতৃত্বলাভের দুৰ্দ্দমনীয় আকাঙ্ক্ষা লইয়া ছত্রসাল এ কাৰ্য্যে অবতীর্ণ হন নাই—যোগ্যতর ব্যক্তির পরিচালনায় তিনি কাজ করিতে সৰ্ব্বদা প্রস্তুত । সুতরাং শুভকরণ র্তাহাকে এ ভাবে বিদায় দেওয়ায় র্তাহার দুঃখ কিংবা চিত্তের অবসাদ ঘটিল না । তিনি অন্যান্য হিন্দুরাজাদের কাছে গেলেন, কিন্তু সৰ্ব্বত্রই ব্যর্থমনোরথ হইলেন । দিল্লীশ্বরের সহিত যুদ্ধ করিয়া স্বাধীনাতলাভের দুরাশা কাহারও মনে স্থান পাইল না । ঠিক এই সময়ে ঔরঙ্গজেব ফিদাই থাকে ঔরছার মন্দিরগুলি ধবংস করিবার আদেশ দিলেন । শঙ্খধ্বনি কানে গেলে মুসলমানের নিস্তার নাই—এ কথা সম্রাট নূতন ভাবে ঘোষণা করিলেন— “জে কয় কান সংখ ধুনি আওবে । মুসলমান তে ভিস্ত ন পাওবে ॥ সিসে ঔটি কান জে নাওবে । তে দোজখ তে খুদা বচাবে ॥ তাতৈ চাহি দেবীলৈ দীঞ্জৈ । তিনকে ঠোর মসীদে দীক্তে ॥ মুলনা তই নিবাজ গুদারে। বাগ দেহি নিত সণঝ সকারে } স্বাউ চুকাবে ফাজিল কাজী। জাতে রহে গোসাই রাজী ॥৫ ফিদাই খ গোয়ালিয়র হইতে একদল সৈন্য লইয়া বাদশাহের হুকুম তামিল করিতে ঔরছায় আসিল । ঔরছার রাজা স্বজান সিংহ এ সময়ে বাদশাহের কাজে দাক্ষিণাত্যে গিয়াছিলেন । তিনি ঔরছায় উপস্থিত থাকিলে হয়ত তাহার পিতা (?) দেবীসিংহের মত মন্দিরধ্বংস-ব্যাপারে উদাসীন থাকিতেন, অন্তত বাধা দিতে সাহস করিতেন না । হিন্দু রাজা-মহারাজাদের মধ্যে যাহার মনসব যত উচু এবং রাজ্য যত বড়, র্তাহার মানসিক কাপুরুষতাও সে অকুপাতে বেশী ছিল। ভয়ভাবনা বা পাটোয়ারি বুদ্ধি জনসাধারণের স্বাভাবিক সাহস ও সৎকৰ্ম্মের প্রেরণাকে দমিত করে না । এজন্য ঔরছাবাসীর রাজার অনুমতির অপেক্ষ না রাখিয়া বকশী ধৰ্ম্মাঙ্গদের সেনাপতিত্বে মোগল সৈন্যকে গোয়ালিয়রের সীমা পর্য্যস্ত তাড়াইয়া দিল । এ সংবাদ রাজা স্বজান সিংহের কাছে পৌছিলে তিনি প্রমাদ গণিলেন । বাদশাহের সহিত শত্রুতায় পরিত্রাণ পাইবার উপায় নাই । জুঝার সিংহের শোচনীয় অবস্থা স্মরণ করিয়া তিনি অৰ্দ্ধমুত হইলেন । এ অপরাধের জন্য ঔরঙ্গজেবের ক্ষম লাভ করিতে হইলে, হয়ত মন্দিরগুলি নিজ খরচায় ভাঙিতে হইবে—যাহায়া ধৰ্ম্মরক্ষার জন্য ফিদাই খার সহিত যুদ্ধ করিয়াছে, তাহাদিগকে সম্রাটের নির্দেশমত শাস্তি দিতে হইবে । গোয়ার বুন্দেলাগণের এ হঠকারিতায় রাজার পশ্চাৎ অপসরণের পথ বন্ধ হইয়৷ গিয়াছিল। তিনি দায়ে পড়িয়া বুন্দেলখণ্ডের গৌরব ও হিন্দুর মালা-তিলক রক্ষার জন্য সচেষ্ট হইলেন। সুজান সিংহ শুনিলেন, ছত্রসাল মোগলদের সহিত যুদ্ধ করিবার

  • কানে শঙ্খধ্বনি আসিলে মুসলমান ত বেহেন্তে যাইতে পরিবে ন। এক্ষেত্রে যদি দুইটি কান ধরিয়া জমিতে মাথা ঠেকায় তবে থোদ। তাহণকে দোজখ হইতে বাচাইতে পারেন । দেবালয়গুলি ধ্বংস করিয়া উহার উপর মসজিদ তৈয়ার করা হোক, যেখানে মৌলানা নিত্য সকালসন্ধ্যায় আজান দিয়া নমাজ পড়িবে ; বিন্ধান কাজী স্থায় বিতরণ করিবে । এরাপ করিলে খোদাতালা রাঞ্জী থাকিবেন।