পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা ] কিল পড়ে পিঠে । মা বলে দস্তি মেয়ে, মরেও না যে আপদ চুকে যায়, কবে যাবে ষষ্ঠীর মাঠে। কবে তোমায় রেখে এসে খুকী-খুকী বলে কাদতে কাঁদতে আসবে।— ওঘর হইতে বড়-জা বলিয় ওঠে –আচ্ছা ওসব কি কথা সকালবেলা ছোট বেী ?...বলি মেয়েটার ষষ্ঠীর মাঠে যাবার আর তো দেরী নেই –ওর শরীরে আর আছে কি ?. তার ওপর রোগ মেয়েটাকে—ওই রকম করে মার ? ছি ছি, একটা পেটে ধরেই এত ব্যাজার—তবুও যদি আর দু-একটা হ’ত !...এসে উমা, আমার দাওয়ায় এসো তো মাণিক ? এসে এদিকে ?-- তাহার মা পাণ্ট জবাব দিয়া বলে—বেশ করচি—আমি আমার মেয়েকে বলবো তাতে পরের গা জ্বলে কেন ? যাসনে ওখানে যেতে হবে না—সেখীন কথা সকলে বলতে পারে – যখন জর হয়ে পড়ে থাকে, তখন যত্ন করতে তে কাউকে এগুতে দেখিনে—তখন তো রাত জাগতেও আমি-ডাক্তার ডাকৃতেও আমি–ওষুধ খাওয়াতেও আমি—মুখের ভালোবাসা অমন সবাই বাসে– দুই জায়ে তুমুল ঝগড়া বাধিবার কথা বটে এ অবস্থায়, কিন্তু বড়-জা হয়মোহিনী বড় ভালমাতুষ । সাতেপাচে থাকিতে ভালবাসে না, খুকীর ওপর একটা স্নেহও আছে, সে কিছু না বলিয়া নিজের ঘরের মধ্যে ঢুকিয়া যায়। পূজার সময় খুকীর মামা আবার আসিল । তাহারও বয়স এই কুড়ি একুশের বেশী নয়, এই দিদিটি ছাড়া সংসারে তাহার আর কেহ নাই। এতদিন কলিকাতায় চাকুরির চেষ্টায় ছিল, পূজার কিছুদিন মাত্র পূৰ্ব্বে কোন ছাপাখানায় মাসিক আঠারো টাকা বেতনে লিনোটাইপের শিক্ষানবিস করিতে ঢুকিয়াছে। অনেক খাবারদাবার, খুকীর জন্যে ভাল ভাল দুতিনটা রঙীন জামা, ছোট ডুরে শাড়ী ও জাপানী রবারের জুতা আনিয়াছে। তাহার দিদি বকে—এসব বাপু কেন আনতে যাওয়া, সবে তো চাকরি হয়েচে – নিজের এখন কত খরচ রয়েচে, দু-পয়সা হাতে জমাও, ভাল খাও-দাও-- শরীর তো এবার দেখচি বডডই খারাপ—অসুখ-বিসুখ হয় নাকি ? .. ছেলেটি হাসিয়া বলে—না দিদি অস্বথ-বিসুখ তো নয়, খুকীর কাণ্ড b~ది 9 বড় খাটুনি, সকাল ন’টা থেকে সারাদিন বিকেল ছ’টা অবধি—এক একদিন আবার রাত আটটাও বাজে –এক একদিন আবার রবিবারেও বেরুতে হয়—তবে তাতে ওপর-টাইন পাওয়া যায় বারে আন ক’রে — এবার গুড় উঠলে এক কলসী গুড় নিয়ে যাবোই এখান থেকে, ভিজে ছোলা আর গুড় সকালে উঠে বেশ জল খাবার হবে— তারপর সে চীনামাটির খেলনা বাহির করিয়া খুকীকে ডাকে-ও উমা, দেখে যা কেমন কাচের ঘোড়া সেপাই— এদিকে আয়— খুকী নাচিতে নাচিতে ছুটিয়া আসিল, মামা আসাতে খুকীর খুব আহলাদ হুইয়াছে, এসব ধরণের খাবার মামা না আসিলে তো পা ওয়া যায় না ? পূজার কয়দিন খুকী মামার কাছেই সৰ্ব্বদা থাকিল। সকাল হইতেনা-হইতে খুকী চোখ মুছিয়া আসিয়া মামার কাছে বসে, মাঝে মাঝে বলে—এবার কলকাতায় নিয়ে যাবে না মামা ? পূজা ফুরাইয়া গেলে খুকীর মামা দিদির কাছে প্রস্তাবটা উঠায়। দিদি সহোদর বোন নয়, বৈমাত্রেয়, তবুও তাহাকে বেশ ভালবাসে, যত্ন করে । সেও ছুটিছাট পাইলে এখানেই আসে। স্বামী-স্ত্রীতে পরামর্শ করিয়া দিন-দশেকের জন্য আপাততঃ খুকীকে কলিকাতায় ঘুরাইয়া আনিবার সম্মতি দিল । খুকীর মামা খুশি হইয়া বলে—আমি ওকে লেখাপড়া শেখাবে।---সেখানে গিয়ে মহাকালী পাঠশালায় ভৰ্ত্তি ক’রে দেবো—দেখতে পাই কেমন গাড়ী আসে, বাড়ি থেকে ছেলে মেয়েদের তুলে নিয়ে যায়—গাড়ীর গায়ে নাম লেখা আছে ‘মহাকালী পাঠশালা । ভগ্নীপতি হরিশ মুখুয্যে বলেন—পাগল আর কি ! অতটুকু মেয়ে ইস্কুলে ভৰ্ত্তি আবার কি হবে ?...হুজুগে পড়ে যেতে চাচ্চে—ছেলেমানুষ, ও কি আর গিয়ে টিকৃতে পারে ? যাও নিয়ে দু-দিন—এখানে তো ম্যালেরিয়ায় ম্যালেরিয়ায় হাড় সার করে তুলেচে–যদি দু-দিন হাওয়া বদলাতে পারলে সেরে যায়— • ট্রেনে কলিকাতা আসিবার পথে উমারাণী খুব