পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

b&e চিনে নিই, তারপর ত একলা যাব ! এখন কোথায় যেতে কোথায় গিয়ে উঠব তার ঠিকান নেই। আরো দুচার জায়গায় ঘুরে ফিরে দেখতে হবে, দুচার দিন । তাড়াতাড়ি করে লাভ কি ?” মা ডুরিয়ান ফলের একটা কোয় মুখে তুলিয়া দিতে দিতে বলিলেন, “তা অবিশুি । তাড়াতাড়ি করতে আমিও তোকে বলছি না। তবে দুজনে একসঙ্গে ঘুরে বিশেষ কোনো লাভ নেই, সেই কথাই বলছিলাম । চেনাশোনা জায়গাগুলোয় অন্ততঃ তুই একলা যেতে ত পারিস্ । না হয় ঝিটাকে নিয়ে যাস ।” মেয়ে বলিল, “যা তোমার ঝির বুদ্ধি ! ওকে নিয়ে কি পথে ঘাটে চলা যায় ? কি বলতে কি বলে তার ঠিক থাকে না, আমি শেষে অপ্রস্তুত হয়ে মরি।” থাওয়া দাওয়া শেষ হইল। চেয়ার ছাড়িয়া উঠিয়া পড়িয়া মেয়ে বলিল, “পাড়ার ছেলেগুলো স্বরু করেছে দেখ, ঠিক যেন সং । . আমি ওদের গান বাজনা শুনবার জন্যেই এখানে এসেছি আর কি ! সব এই বাড়ীর নীচেই ধরুন দিচ্ছে । ইচ্ছে করে, ওপর থেকে এক বালতি জল ঢেলে দিই।” মা বলিলেন, “ন, ন, ওসব করতে যাস্ না । মামুষের সঙ্গে সস্তাব রাখতে হয় । ওরা গান করছে করুক না, তোর ত গায়ে ফোস্কা পড়ছে না ? তুই নিজের কাজ কর গিয়ে । উপকার করতে না পারুক, অপকার করতে সব মানুষই পারে, যতই ছোট হোক। সেই জন্তে শুধু শুধু কাউকে চটাতে নেই ।” মা নিজের ঘরে গিয়া শুইয়া পড়িলেন, বৰ্ম্মা ঝি র্তাহার হাত পা টিপিয়া দিতে লাগিল । মেয়ে ঘরে বসিয়া মাসিক পক্স পড়িতে আরম্ভ করিয়া দিল । সেগুলি বৰ্ম্ম ভাষায় প্রকাশিত, চলচ্চিত্র জগতেরই পত্রিকা । ব্ৰহ্মদেশে আজকাল এ সবের প্রচারও যেমন, আদরও তেমন । —নং গলিটাতে সবই গরীব লোকের এবং মধ্যবিত্ত লোকের বাস । হঠাৎ কেহ কাহাকেও চমক্‌ লাগাইয় দিতে পারে না । সুতরাং এই দুজন নবাগতাকে লইয়া দিন কতক খুবই উৎসাহ সবাই দেখাইল । কিন্তু প্রবাসী—আশ্বিন, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড জগতের নিয়মে কোন বিষয়েই মানুষের উৎসাহ বেশী দিন স্থায়ী হয় না, কাজেই ইহাদের বিষয়েও সকলের ঔংস্থক্য ক্রমে ক্রমে কমিয়া আসিতে লাগিল । কেবল যুবক মঙজীর উৎসাহটা যেন বাড়িয়াই চলিল । সে একেবারেই হৃদয় হারাইয়া বসিয়াছিল। সে দরিদ্র কেরানী মাত্র, কিন্তু উচ্চাকাঙ্ক্ষাটা তাহার কিছুমাত্র কম নয়। বয়স প্রায় ত্রিশ হইতে চলিল, কিন্তু এত দিন পৰ্য্যন্ত বিবাহাদি কিছুই করে নাই। কাহাকেও তাহার মনেই ধরে না । সে যেমনটি চায়, তাহা এক বায়োস্কোপেই পাওয়া যায়, গৃহস্থ-ঘরে সে রকম জোট। অসম্ভব। মঙজীর মনে হইতেছিল, এতদিনে ভাগ্য বুঝি স্থপ্রসন্ন হইল । তেতলার রূপসী তরুণীটি যে-কোনো বায়োস্কোপের অভিনেত্রীকে সৌন্দর্য্যে হার মানাইতে পারে। এবং তাহাকে কেন্দ্র করিয়া যে-কোনো রকম রোম্যাটিক অবস্থা কল্পনা করা যায়। টাকাকড়িও প্রচুর পরিমাণে মেয়েটির থাক। সম্ভব, জমিদারের মেয়ে যখন । কিন্তু সে সব ত গেল পরের কথা, আসল কথা যুবতীর রূপ মঙজীর হৃদয়ে এমন তুফান তুলিয়াছিল, যে, মনে মনে সে জীবন পণ করিয়া বুসিয়াছিল, যেমন করিয়াই হউক, উহাকে তাহার চাইই । দিনের পর দিন কাটিতে আরম্ভ করিল। কিন্তু পাড়া প্রতিবেশীর সঙ্গে ধনী গৃহিণী বা তাহার রূপসী কন্যার বিশেষ ভাবসাব হইল না । তাহার জানালা বা বারান্দায় আসিয়া দাড়াইলে এপাশের ওপাশের বাড়ীর মেয়ের মধ্যে মধ্যে সাহস করিয়া দু একটা কথা বলিত । দু’ এক কথায় উত্তর পাইত, কাজেই আলাপট আর বেশী দূর অগ্রসর হইত না। তবে সেই দু একটি কথার সহিত যে মিষ্টি হাসিটুকু মিশান খাকিত, সেই টুকুর খাতিরে কেহ রাগ করিতে পারিত না । মঙজী অনেক চেষ্টা করিয়াও কোনো সুবিধা করিতে পারিল না। সকাল বিকাল যুবতী যখন বেড়াইতে যায়, সে কাছাকাছি দাড়াইয়া থাকে, যদিই তাহার প্রতি কৃপাদৃষ্টিপাত হয়, যদিই তাহার সামান্য একটু কাজ করিয়া দিবার স্বযোগ ঘটে। কিন্তু বিধাতা নিতান্তই বিরূপ, কোনো স্থযোগই ঘটিল না। চোর, ডাকাত, দুৰ্ব্বত্ত