পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা ] সাক্ষাৎ করিতে আসিয়াছেন। ডাঃ মকৃফি অবাক হইয়া উঠিয়া পড়িলেন, ভদ্রমহিলা অকস্মাৎ তাহার বাড়ীতে আসিয়া হাজির হইলেন কেন ? বিশেষ কোনো বিপদে পড়িয়া আসিয়া থাকিবেন, মনে করিয়৷ তিনি বাহিরের ঘরের দিকে অগ্রসর হইলেন, বেহারাকেও হুকুম দিলেন মহিলাটিকে উক্ত ঘরে লইয়া গিয়া বসাইতে । ডাঃ মরফি ঘরে ঢুকিতেই আগস্তুক মহিলাটি চেয়ার ছাড়িয়া উঠিয়া চলনসই ইংরেজিতে অনর্গল কথা বলিয়া যাইতে লাগিলেন । ডাক্তার তাহাকে বসাইয়া, নিজেও বসিলেন, এবং রূপসী ব্রহ্মবাসিনীকে একবার ভাল করিয়া দেখিয়া লইলেন। দেখিতে সুন্দরী বটে, এবং অলঙ্কারের ঘটা যে রকম, তাহাতে ধনশালিনী বলিয়াই মনে হয়। যাহা হউক ভদ্রমহিলা তাহাকে নিজের রূপ দেখিবার খুব বেশী অবসর দিলেন না । তাহার কথার স্রোতে হাবুডুবু খাইতে খাইতে ডাক্তার আবিষ্কার করিলেন যে ভদ্রমহিলার স্বামীটি অসুস্থ, তাহাকে দেখিবার জন্য ডাক্তারকে লইয়া যাইতেই শ্ৰীমতীর আগমন । ডাক্তার জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি অস্থখ তার ?” মহিল উত্তর দিলেন, নানারকম অস্বখেই এতকাল ভুগছিলেন, কিছু দিন থেকে মস্তিষ্কের গোলমাল স্বরু হওয়াতে আমরা বড় বিপদে পড়েছি । বাড়ীতে কেবল দুটি মেয়ে মানুষ আমরা, আমি এবং আমার মেয়ে, কিছুতেই তাকে সামলাতে পারি না ।” ডাঃ মরফি জিজ্ঞাসা করিলেন, "তাকে এত দিন ডাক্তার দেখান হয়নি ?” ● মহিলা উত্তর করিলেন, “তা হয়েছে বৈ কি ? কিন্তু এক একজন পাগল মাকুষ কি রকম চালাক হয় জানেন ত ? বাইরের লোক দেখলেই আমার স্বামী এমনভাবে কথাবার্তা বলতে স্বরু করেন যে তাকে পাগল বলে কেউ বিশ্বাসই করে না। আমি তাকে বিকৃতমস্তিষ্ক প্রমাণ করে নিজের কোনো স্থবিধা করতে চাই, এই সকলের ধারণা হয়।” ডাক্তার বলিলেন, “হ্যা, এরকম অনেক পাগলের কথা শোনা যায় বটে। তা আমাকে কি করতে বলেন ?” So 8 — a রূপের ফাদ b^్చలి অভ্যাগতা বলিলেন, “আপনি যদি দয়া করে আমার বাড়ী কাল বিকালে যান, এবং তাকে পরীক্ষা করেন ত বড় ভাল হয় । আপনি বহুদশী অভিজ্ঞ ডাক্তার, আপনাকে তিনি ফাকি দিতে পারবেন না। আমার সাধ্য নেই তাকে সামূলাবার, কিন্তু পাগল বলে ডাক্তারে সার্টিফিকেট না দিলে, কোনো পাগলা গারদে তাকে দিতে পারব না। সঙ্গে যদি দু’ একজন লোক নিয়ে যান ত আরো ভাল ।” ডাক্তার জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেন ? তিনি কি খুব বেশী উৎপাত করেন ?” ভদ্র মহিলা বলিলেন, “সব সময় নয়। তবে বহুকাল আগে তার কিছু জহরৎ চুরি যায়, সেইগুলোর কথা মনে হ’লেই ভয়ানক ক্ষেপে ওঠেন এবং ‘আমার হীরে কই ? সৰ্ব্বনাশ হয়ে গেল’ বলে চেঁচামেচি করতে থাকেন, তখন তাকে ঠাণ্ডা কর দায় হয়। রাস্তায় ছুটে যেতে চান, মানুষকে মাৰ্বতে যেতে চান, এই সব কাণ্ড । আপনার যা ফিস্ তা আমি দেব, লোকগুলিকেও কিছু কিছু দেব। আশা করি, আপনি দয়া করে যাবেন।” ডাক্তার বলিলেন, “অবশুই যাব । এর ভিতর আর দয়ার কথা কি ? এই ত আমাদের কাজ ।” মহিলাটি উঠিয়া বলিলেন, “আচ্ছা, এখন তবে আসি। কাল বিকাল চারটায় তাহলে আমি আপনার জন্যে অপেক্ষ করব।” ভদ্রমহিলার গাড়ীটা ছাড়িয়া দিল। ডাঃ মরফি একটা গানের স্বর শিষ দিতে দিতে আবার পড়িবার ঘরে ফিরিয়া গেলেন । পরদিন মঙজী সবেমাত্র আপিস হইতে ফিরিয়াছে, এমন সময় একটা ট্যাক্সি আসিয়া মা সানদের বাড়ীর সম্মুখে দাড়াইল। মঙজী তাড়াতাড়ি বারান্দায় আসিয়৷ দাড়াইল । ট্যাক্সি হইতে সেই গুজরাট রত্নবণিককে নামিতে দেখিয়া সে একেবারে হতবুদ্ধি হইয়া গেল। এ কি ব্যাপার। মা সানের মাও কি এমনি নীচ, যে, টাকার লোভে এই বৃদ্ধের কাছে কন্যাকে বলি দিতে যাইতেছেন । ইহার পর কোনো মানুষকে বিশ্বাস করাই অসম্ভব হইয়া উঠিবে দেখা যাইতেছে। কি