পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

b-86 শহরে শহরতলীতে ঘরে ধাঁইৰে, হাটে বাজারে দস্তুরমত একটা সাড়া পড়ে গেল। পথের মোড়ে মোড়ে লোক জটল্প করে সন্ধ্যার বক্তৃতা আলোচনা করতে লাগল। ব্যাপারটা যারা বুঝতে পার্ল মা, অষ্ঠের তাদের বুঝিয়ে দিতে লাগল। সমস্ত দিন হাও বিলগুলি লোকের হাতে হাতে ঘুরতে লাগল । বাড়ী এসে বিষ্ট মামা পুলিশ-কমিশনারকে চিঠি লিখলেন। তিনি যে ইংরেজ গবর্ণমেণ্টের কত-বড় হিতার্থী বন্ধু, সমস্ত জীবন তিনি যে বিলাতী ভিন্ন অন্য কোনো-জাতীয় দ্রব্য স্পর্শ করেন নি, ইংরেজ-রাজত্বকে তিনি যে এদেশের কল্যাণের পক্ষে অপরিহার্য্য বলে’ বিশ্বাস করেন, এসমস্ত কথা বিশদভাবে ব্যক্ত করে তিনি প্তার সেদিনকার সন্ধ্যার বক্তৃতার উদ্দেশ্বের কথা সবিস্তারে লিখলেন ... তারপর • লিখলেন, ইংরেজ-সরকারের এতবড় বন্ধুর যাতে কোনো বিপদ না হয়,ইংরেজ-সরকারের তা দেখা উচিত ; এবং তিনি আশা করেন, তাকে সত্যস্থলে আততায়ীর আক্রমণ থেকে প্রয়োজন হলে রক্ষা করবার জন্যে উপযুক্তসংখ্যক অস্ত্রধারী পুলিশ দেহরক্ষী তাকে দেওয়া হবে । বক্তৃতার সময়ের ঘন্টা-দুই আগে পুলিশ-আপিসে গিয়ে খোজ নিয়ে জানলেন, তার ভয়ের কোনো কারণ নেই, সভায় পুলিশ রাখবার ব্যবস্থা তার চিঠি পৌছবার আগে থাকতেই করা হয়েছে, অস্ত্রধারী পুলিশও সেখানে থাকৃবে। বাড়ী ফিরবার পথে গোলদীঘির ধার হয়ে এলেন । দেখলেন, তত আগে থাকৃতেই কিছু কিছু করে’ লোক জমা হচ্ছে । বড় বড় তৈলপক বঁাশের লাঠি হাতে তিন দল পুলিশ স্কোয়ারের তিন দিকের পথের পাশে ঘাটি করেছে। নিশ্চিন্ততায়, সাহসে, গৰ্ব্বে বিষ্ট মামার বুক তিন হাত উচু হয়ে উঠল । মোটরে আয়েস করে’ গা এলিয়ে বসে তিনি এক পায়ের উপর আর-এক পা তুলে তাতে ঘনঘন হাত বুলাতে লাগলেন। সাড়ে-পাচটায় বক্তৃত৷ স্বক্ষ হলো । গোলদীঘি লোকে লোকারণ্য। বিষ্ট মামার মনে একটা বেদনা তৰু কাটার মত ধিধতে লাগল, গিন্ধিক্ষে এ দৃপ্ত তিনি প্রবাসী—আশ্বিন, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, > ཨ ક્ષ છે দেখাতে পারলেন না ! তা হোক ; খবরের কাগজগুলিতে যাতে র্তার বক্তৃতার রিপোর্ট ঠিক ঠিক বোরোয় রাত্রে সব-ক’টা কাগজের আপিসে ঘুরে তিনি তা দেখবেন । কোনো খুটিমাটি বাদ গেলে চলবে না। বক্তৃতার তোড়ের মুখে, ভারতবর্ষের ধৰ্ম্ম সাহিত্য সভ্যতা, তার বহুসহস্রবর্যব্যাপী ইতিহাস, তার রাজনীতি, সমাজনীতি, বিজ্ঞান, শিল্পকলা, কংগ্রেস, গান্ধী, অসহযোগ, সমস্ত-কিছু প্লাবনের মুখে তৃণের মত অবলীলায় ভেসে যেতে লাগল। এতদিন ধরে স্বাদেশিকতার বিরুদ্ধে যেখানে যতকিছু যুক্তি তিনি প্রয়োগ করেছেন আজ এক-এক করে সবগুলির পুনরুক্তি করলেন, কিন্তু এমন আশ্চৰ্য্য জোরের সঙ্গে, এমন মৰ্ম্মস্পর্শী ভাষায় মণ্ডিত করে করলেন, যে, নিজের কৃতবিদ্যতায় নিজেরই তার আশ্চৰ্য্য বোধ হতে লাগল। বলতে লাগলেন আর উণর মনের মধ্যে ছাপার হরফে সেগুলি সাজানো হতে লাগল, আর তার গিন্নি চর্ক ফেলে উদ্দীপনামণ্ডিত মুখে ঝুকে পড়ে তা পড়তে লাগলেন। জনসমুদ্রও কিসের উদ্দীপনায় থেকে থেকে চঞ্চল হয়ে উঠতে লাগল, কিন্তু তারপরই কানাকানি, চোখের ইসার, হাতের ইঙ্গিত—আবার মন্ত্রবলেই যেন সে চাঞ্চল্যও প্রশমিত হয়ে যেতে লাগল। বিষ্ট মামা নিঃসন্দেহে বুঝলেন, আজ আগে থাকতে পুলিশ রাখার ব্যবস্থা করাতেই এরকম হচ্ছে । উৎসাহে তার মনের বাধন মুখের বাধন আরোই আলগা হয়ে যেতে লাগল । দুইঘণ্টা ধরে আশ্চৰ্য্য বাগিতার সাহায্যে বহু বিচিত্র ও স্বল্প তর্কের জাল বিস্তার করে বিষ্ট মামা এই বলে’ সে জাল গুটিয়ে তুললেন, যে, অষ্ঠ-সব কথা ছেড়ে দিলেও, ইংরেজ যে দেশশাসনরূপ অতি গুরুতর দায়িত্বপূর্ণ ও গুরুভার বোঝা বহন করার থেকে আমাদের অব্যাহতি দিয়েছেন কেবল সেই কারণেই তাদের কাছে আমাদের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। ইংরেজ খেটে মরছে, আমর আরামে তাদের পরিশ্রমের ফল ভোগ করছি; তারা লড়াই করে মর্ছে, আমরা নিরুপক্ৰব শাস্তিতে জীবনধারণ করছি ; তারা কাপড় বুনছে, আমরা সেই ফিনফিনে কাপড়ে বাবু সেজে বেড়াচ্ছি । ইংরেজ শীতের দেশের