পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একরাত্রি শ্ৰীবিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় S. ঘটনাটির সূত্রপাত হয় মোকামাঘাটে । ভিড় ছিল, তবে এমন নয় যে উঠিতেই পারিতাম না—একলা লোক—তায় লটবহর নাই। স্থান হইল না অন্য কারণে ; আসলে মনটা কাব্যরসে সিক্ত হইয়া অভ্যস্ত উদার হইয় পড়িয়াছিল, কেমন যেন মনে হইতেছিল এপর্য্যন্ত পৃথিবীর যথেষ্ট উপকার করা হয় নাই । তাই নিজে সরিয়া দাড়াইয়া অার সকলকেই উঠিবার স্ববিধা করিয়া দিতেছিলাম। এমন সময় গাড়িটা ছাড়িয়া দিল । যে বাবুটিকে সবার শেষে সপরিবারে উঠতে সাহায্য করি তিনি চলতি গাড়ির দুয়ার আগলাইয়। বলিলেন, “খবরদার মশায়, ঠেলে দিতেও পেছপা হব না, হুঁ, দেখচেন গাড়ির অবস্থা ? এতক্ষণ দাড়িয়ে দাড়িয়ে করছিলেন কি ? * * * * * * py এক্সপ্রেস্ট মিস্ করিলাম, বলিলাম—“যাক্গে, প্যাসেঞ্চারে দিব্যি শুতে শুতে যাওয়া যাবে।' ষ্টিমারের জেটির উপর গিয়া আসন্নসন্ধ্যার স্তিমিত আলোকে বইটা খুলিয়া আবার পড়িতে লাগিয়া গেলাম। রবিবাবুর গল্পগুচ্ছ । “একরাত্রি’ গল্পটা চলিতেছিল,— যেখানটায় নুতন স্থলমাষ্টারি লইয়। আবার স্বরবালার বড় কাছাকাছি আসিয়া পড়িয়াছি সেইখানট । নিজেকেই নায়কের পদে বসাইয়া দিলাম বলিয়া কেহ যেন কিছু মনে না করেন—অবস্থাটা তখন প্রায় এমনই হইয়া পড়িয়াছে। গাড়ি আসিলে বইয়ের পাতায় আঙল গুজিয়া দিয়া অলস গতিতে গিয়া এক ইণ্টার ক্লাসে উঠিলাম । গুছাইয়া-মুছাইয়া বসিয়া এইবার বইটি খুলিব, এমন সময় সামনের দিকে নজর পড়ায় একটু সচকিত হইয়া উঠিলাম। গাড়ীর ও-পাশটায় কোণে জড়সড় হইয়া একটি রমণী । ভাবেও, এবং বিদ্যুতের আলোয় সযত্ন আচ্ছাদিত হস্তপদাদির যেটুকু দেখা গেল তাহ হইতেও বোঝা গেল রমণী যুবতী। পোষাক-পরিচ্ছদ সম্বন্ধে বেশ ধারণ পাওয়া গেল না, তবে সমস্ত অঙ্গটি বেড়িয়া আলগ। ভাবে যে একখানা রেশমী চাদর জড়ান ছিল, তাহ হইতে বেশ বোঝা গেল সে কোন অবস্থাপন্ন ঘরেরই মহিলা ;– ইণ্টার ক্লাসে বসার ব্যাপারটাও এ-অকুমানটুকুর পরিপোষণ করিল। ভাবিলাম মরুক গিয়া, আমার এ কৌতুহলের অধিকার কি ? মনের লাগাম কষিয়া পুস্তকের অক্ষর-পথে চালিত করিবার চেষ্টা করিলাম। কিন্তু ক্রমেই বিষয়টার অপূৰ্ব্বত্ব আমায়ু নাছোড়বান্দা হইয় যেন পাইয়া বসিল । তখন অধিকার লইয়া তৰ্কটুকুই অন্য আকারে আসিয়া দেখা দিল, মনে হইল এ-ক্ষেত্রে এমন উদাসীনভাবে বসিয়া থাকিবারই কি আমার কোন অধিকার আছে ? এই ব্যাট ছেলেদের গাড়িতে আমি আর একটিমাত্র স্ত্রীলোক—সে অপরিচিত । এই তো গাড়ি আসার সঙ্গে সঙ্গেই আমি উঠিয়া বসিয়াছি, কই কেহ তো নামিয়া যার নাই । তবে এ অভিভাবকহীনা কে ? যদিই বা অভিভাবক ছিল, দৈবযোগে সঙ্গচ্যুত হইয়া পড়িয়াছে, তাহা হইলে একবার প্রশ্ন করিয়া বিষয়ট। জানা উচিত নয় কি আমার ? ইহাতেও একটু সন্দেহ হইল—এই কি বিপদে পড়ার ভাব ? বিশেষ . করিয়া স্ত্রীলোকের পক্ষে ? যাহোকৃ, ভাবিলাম গাড়িটা খুলিয়া যাক না, শেষ পয্যন্ত যদি কেহ না আসিয়া পৌছায় তো ব্যাপারটা তখন একদিকে স্পষ্ট হইয়া উঠিতে পারে। প্যাসেঞ্জার ট্রেন, পরের ষ্টেশনেই তো থামিতেছে , এত তাড়াতাড়ি কিসের ?