পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা ? ঘোমটাটি সম্মতির ভঙ্গিতে ছলিল । মৌন হইলেও এ-উত্তরটুকু শব্দের এত কাছাকাছি যে আমি প্রায় আত্মবিস্তৃত হইয়া গেলাম। পকেটে বন্ধুর-দেওয়া বিদায়ের স্মৃতিচিহ্ন, থার্টিরূপার একটা জরদার কৌট ছিল-মিনার কাজ করা এবং মাঝখানে সোনার একটি পান বসান। একটু জরদা নিজের জন্য ঢালিয়া রাখিয়া কৌটাটা দিবার জন্য উঠিয়া গেলাম, বলিলাম—“রাখুন আপনার কাছে, পান খাওয়া হ’য়ে গেলে দিলেই হবে।” আবার একবার পাচটি সোনার আঙুল প্রসারিত হইল । সামান্ত একটা রাঙা রেলটিকিট পড়িয়া যেখানে অপূৰ্ব্ব সৌন্দর্য্যের সৃষ্টি করিয়াছিল, সেখানে কারুমণ্ডিত সেীখীন সেই সোনা-রূপার পাত্রটি সে কী মোহ রচনা করিল কি করিয়া জানাই ? দেখিলাম একটু। কিন্তু আশ মিটিবার পূৰ্ব্বেই আঙুল ক’টি চাদরের মধ্যে অন্তহিত হইল। আর, কতক্ষণে—কতদিনেই বা মানুষের এ আশ মিটে ? কবেষ্ট বা মিটিয়াছে ?... একটি দীর্ঘনিঃশ্বাস আপনি বাহির হইয়া আসিল । নিজের সীটে আসিয়া বসিলাম এবং বেদনাটাকে চাপা দিবার জন্য বইটা খুলিয়া বসিলাম । গল্প শেষ হইয়া আসিয়াছে,—পড়িয়া চলিয়াছি—“আর সমস্ত জলমগ্ন হইয়া গেছে কেবল হাত পাচ-ছয় দ্বীপের উপর আমরা দুইটি প্রাণী আসিয়া দাড়াইলাম ।---আজ সমস্ত বিশ্বসংসার ছাড়িয়া সুরবাল আমার কাছে আসিয়া দাড়াইয়াছে। আজ আমি ছাড়া স্বরবালার আর কেহ নাই।...আমি এই এক রাত্রে মহাপ্রলয়ের তীরে দাড়াইয়৷ অনস্ত আনন্দের আস্বাদ পাইয়াছি । ...আমার পরমায়ুর সমস্ত দিনরাত্রির মধ্যে এই একটি মাত্র, রাত্রিই আমার তুচ্ছ জীবনের একমাত্র চরম সার্থকতা...” —বই মুড়িলাম। ভাবিতে লাগিলাম, সেই মহাসঙ্কট, পুথিবীর আর সত্যমিথ্যা সমস্ত বন্ধন মুছাইয় দিয়া কবেকার একটা তুচ্ছ সম্বন্ধকে মৃত্যুর চিরান্ধকারের সম্মুখে মুহূৰ্ত্তের জন্ত এমন উজ্জলভাবে সত্যের আলোকে ফুটাইয়া তুলিল কেন ? কোন রহস্যময়ের ইঙ্গিতে স্বরবালা আজ সমস্ত জীবনের সম্বলস্বরূপ একটি রাত্রির নিবিড় একরাত্রি br8న সান্নিধ্যের উপহার দিবার জন্ত সেই ব্যর্থজীবন স্কুলশিক্ষকের পাশে আসিয়া দাড়াইঙ্গ? সেই অদৃশ্ব শক্তির নির্দেশেই কি আজিকার রাত্রে এই মায়ারূপিণী আমার পথে আসিয়া পড়িয়াছে ? কয়েক দণ্ড মাত্র লইয়া এই যে , নীরব মিলন, ইহার মধ্যে কত যুগ, কত জন্মজন্মাস্তরব্যাপী সাধনার সিদ্ধি কি পুঞ্জীভূত হইয়া উঠিয়াছে ?—কে জানে ? আমার স্বরবালা তখন একেবারে মাথা উন্টাইয়া চার আঙলে মোটা রকম জর্দা লইয়া একটু গদ্যময় ভঙ্গিমায় মুখবিবরে চালান দিতেছিলেন। কিন্তু তাহাতে আমার কাব্যের রসটুকুকে একটুও বিস্বাদ করিতে পারিল না। অত কথা কি, ক্ষিদেয় যে নাড়ী জোট পাকাইয়া যাইতেছিল - সেইদিকেই বড় একটা ভ্ৰক্ষেপ ছিল না । জামুই ষ্টেশনে নামিয়া একটু দূরে গিয়া তাড়াতাড়ি এক ঠোঙা ছোলার অথা ঘুঘনি চিবাইয়া লইলাম,তাহার পর গাড়ি ছাড়িলে সঙ্গিনীর নিকট জলের ঘটীটি ডিক্ষা করিয়া লইয়া তাহার পানের পর যেটুকু অবশিষ্ট ছিল, সমস্ত দেহমন দিয়া সেটুকু পান করিয়া লইলাম। তিনি আলগোছে পান করিলেও জলটুকু একহিসাৰে উচ্ছিষ্টই ছিল । মানি–ছিল ; এবং সেইজন্যই তখন বোধ হইল যেন দুইটি প্রাণীর মধ্যে একটা মুস্পষ্টই যোগ স্থাপিত হইয়া গেল, আমাদের মধ্যে কোথায় যে একটা পার্থক্যের রেখা ছিল ঐ একঘটা জলে সেটা ধুইয়া, মিটাইয়া দিল । * . ~ -- নিজেকে এটুকু প্রশ্রয় দিবার ফল এই হইল ষে এই যোগটুকুকে আরও ঘনিষ্ঠ করিয়া লইবার গুন্য-মনটা উৎকট রকম চঞ্চল হইয়া উঠিল । জল পান করিয়াই যে ফিরিয়া আসা উচিত ছিল সেটা মনেই পড়িল না। পড়িবে কোথা হইতে ? তখন সমগুণ মন জুড়িয়া এই একট। আকাঙ্ক্ষাই তোলপাড় করিতেছিল--হে কুন্দরি, আর কিছু নয়, দুটি কথা দাও—তা সেনযেমনই হোক ম৷ —তা’তে আমাক এ-কাব্য-রজনীর ৯ রঙীম স্বপ্ন এক নিমেষে চুরমার হইয়াই যাক্ - বা সেল্বপ্নের-মোহ ১ জামায় আরও -আরও হতচেতন করিয়া দিক-কিছুই যায় • - - -" -