পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

b-6 e আসে না । সমস্তর উপরে আমি ঐ দুটী বাণী পাওয়াকেই আমার জীবনের পরম সত্য করিয়ী-রাখিব । হঠাৎ চেতনা হইল। তাহাকে চেতনা বলি, কি ক্ষুব্ধ অভিমান বলি, কি নিরাশার আত্মপ্লানি বলি ?. নিজের জায়গায় আসিয়া বসিলাম । মনে মনে বলিলাম “ন। ; এই ঠিক করিয়াছ । আমার একরাত্রির সমস্ত প্ৰগল্‌ভতা এই বজ্রশাসনেই তুমি খৰ্ব্ব করিয়া রাখ, হে সম্রাজ্ঞি,--আমার কি অধিকার তোমার বাণীতে ? আর তোমার ধ্যানেই ব৷ আমি তৃপ্তি খুজি সে কিসের জোরে ? তোমার এই বিধানই উপযুক্ত । এই কঠিন নীরবতার বাধ দিয়া আমার এই তোমা-মুখী চিস্তা-স্রোতকে সারা রজনী এমনি করিয়াই নিরুদ্ধ করিয়া রাখ ।” নিজেকে ভাগ্যহীন তো মনে হইলই, সেই সঙ্গে এই অভিমানটা বুকের মধ্যে গুমরিয়া উঠিয়া নিজেকে প্রবল অপরাধী সাব্যস্ত করিয়া তবে শাস্ত হইলাম। নিজেকে লইয়া এই দারুণ দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়িয়া এমনি শ্রাস্ত হইয়। পড়িলাম যে স্থির করিলাম পরের ষ্টেশনে নিজে হইতেই কোন সঙ্গী ডাকিয়া লইব ; কিংবা এই কামরাটাই ত্যাগ করিয়া যাইব । এই গাড়ির মধ্যেকার অসহ্য গুমট আর যেন বরদাস্ত হয় না । — হায় রে মামুষের এত দম্ভের আত্মজ্ঞান আর এত আড়ম্বড়ের আত্মবিশ্বাস ! পরের ষ্টেশনে একটি বাঙ্গালী যুবক বোধ হয় তাহার বুদ্ধ পিতামাতা, স্ত্রী, একটি ছোট কন্যা ও দু' কুলি মালপত্র লইয়া খানিকদূর ছুটাছুটি করিয়া, শেষে আমার গাড়ির সামনে আসিয়া হস্তদন্ত হইয়া বলিল—‘মশায়, আর বোধ হয় এক মিনিটও সময় নেই, থার্ড ক্লাসে তো উঠতে পারলাম না, একটু দয়া করে যদি...নাও বাবা, তুমি আগে ওঠে। দিকিম্‌...” আমি একটু ভাবিলাম,—কি যে মাথামুণ্ড ভাবিলাম জানি না। পকেট হইতে রেলের চাবিট বাহির করিয়া আস্তে আস্তে কুলুপ ভরিয়া মোচড় দিতে দিতে নিৰ্ব্বিকারভাবে বলিলাম-“আজো না, এখানে ভিড় করলে চলবে না, এগিয়ে দেখুন।” প্রবাসী—আশ্বিন, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড ঈশ্বর আমার অসহ্য অবস্থায় করুণা করিয়া সঙ্গী দিলেন অকাপণ্যের সহিত ; আর আমি এমনই করিয়া র্তাহার সেই মহা দান প্রত্যাখ্যাল করিলাম। আজ ভাবি-কি ভূত যে মাথায় চাপিয়াছিল সেদিন ! সমস্ত রাত এই রকমে কাটিল—কখন আশার তীব্র উন্মাদনায়—সমস্ত শরীর মন জাগ্রত—এতটুক তন্দ্রার লেশ নাই মে কল্পনার মধ্যে অস্পষ্টতা আনিতে পারে ; আবার কখনও বা হতাশার অবসাদে ঘাহাতে জাগরণটাকেও যেন নিদ্রার মতই শিথিল বলিয়া বোধ হয়।. সঙ্গিনী খানিকটা দিব্য ঘুমাইয়া লইলেন। একটু হিংসা হইল। ভাবিলাম—“আচ্ছা ভাল তোমরা, যত মাথাব্যথা কি ভগবান আমাদেরই দিয়াছেন ?” 3 এই আমার একরাত্রির ইতিহাস । আমার অস্তরের বাসন রাত্রির সামান্ত ঘটনা-সমাবেশের গায়ে যেমন ভাবে রং ধরাইয়া আসিয়াছিল যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ করিবার প্রয়াস করিয়াছি। — শেষ পৰ্য্যস্ত একটা গভীর নিরাশার কাহিনী । এ শুনাইয়া কাহাকেও বিড়ম্বিত না করিলেই ভাল হইত। তবে, আমরা সবাই মায়াসঙ্কুল সংসৗর-পথের যাত্রী, আর যাত্রাট অনেক সময় আবার রেলপথে সাধিত হয়— যেখানে মায়ারাক্ষসী সহস্ররূপে সদাই ওখ পাতিয়া আছে, সেইজন্য যতটা পরিলাম সেই রাত্রের আমার দুৰ্ব্বল মনের ভাবটা লিখিয়া গেলাম। তখন ভাবিয়াছিলাম এ-কাহিনী কি এমনি অসম্পূণ থাকিয়া যাইবে ? দিনের আলো একে কি একটা বিপুল সার্থকতার মধ্যে পূর্ণ করিয়া দিয়া যাইবে না ? —আর এখন ভাবি- .যাক্‌, সেকথা তুলিতে আর প্রবৃত্তি নাই । সামান্য ভুলে সেদিন কি দুর্লভ সম্পদকে হারাইলাম,—কি তীব্র একটা অনুশোচনার দাগ যে সে আমার মনে মুদ্রিত করিয়া গিয়াছে—সে কথা ভাবিতে এখনও নিজের পৌরুষে ধিক্কার জন্মে। তাই এই দুঃখের কাহিনীটা শেষ করিতেই চাহি— খুব ভোর থাকিতে— তখনও অন্ধকারের পরদাট একেবারে গুটাইয়া যায় নাই— ট্রেনটা আসিয়া পানাগ