পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পিতা নোহসি মানুষ যতক্ষণ বাইরের শক্তিকে বাইরের সামগ্রীকে বড় ক’রে দেখবে ততক্ষণ কোন ব্যবস্থায় কোনো বিধানে তার বিরোধ মিটবে না। জগৎ যতক্ষণ আমাদের কাছে শক্তির জগৎ দ্রব্যের জগৎ ততক্ষণ স্বভাবতই সে আমাদের স্বার্থের জগৎ ; এই স্বার্থকে শুধুমাত্র শাস্তির দোহাই দিয়ে কিম্বা শাসনের ভয় দেখিয়ে চিরদিন ংযত রাখা অসম্ভব। একদিকে তার বাধ বাধলে আর একদিকে তার ধারা বইবেই।... মানুষের প্রকৃতির মধ্যে শক্তির লোভ স্বার্থের টান আছে, তাতেই সে কাড়ে, মারে, ঠেলাঠেলি করে ; কিন্তু মানুষের প্রকৃতির সব চেয়ে বড় সত্য হচ্চে প্রেম, তাতেই সে আপনাকে ত্যাগ করে, মৃত্যুর উপরে ক্ষতির উপরে জয়ী হয় । জগতে যতক্ষণ শক্তির রূপকেই স্বার্থের রূপকেই একাগু ক’রে দেখি, তার চেয়ে বড় আর কিছুকে দেখতে পাইনে, ততক্ষণ আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় সত্য যে প্রেম, বিশ্বনিয়মের মধ্যে তার কোনই আশ্রয় পাইনে ; মানুষের মনের মধ্যে সে একটা খাপছাড়া জিনিষ হয়ে থাকে । তাই সে অবস্থায় আমাদের ব্যবহারে তার প্রভাব ক্ষীণ হয় । জীববিজ্ঞান কিছুদিন আগে এই কথাই বলেছিল যে, শক্তিই হচ্চে জগতের মূল নীতি, স্বার্থের সংঘাতই হচ্চে প্রাকৃতিক নির্বাচনের পদ্ধতি । যার জোর আছে সে-ই জিতবে সেই টি কৃবে । এই সত্যই বিশ্বের সত্য একথা মানুষ যেদিন স্থির করলে সেদিন থেকে আপনার প্রকৃতির পরম সত্য ষে প্রেম তাকে ভিতরে ভিতরে অশ্রদ্ধা করতে লাগল। তখন থেকে যুরোপীয় সভ্যতার প্রতাপ নিষ্ঠর হয়ে সমস্ত পৃথিবীকে পীড়িত করচে । এই পীড়া যথন স্বয়ং য়ুরোপকে আজ স্পশ করেচে তখন সে আপনাকে প্রশ্ন করতে প্রবৃত্ত হয়েচে কি করলে এই পাড়া দূর হয় । প্রশ্নের উত্তরে নানা কৌশলের কথা তার মনে উদয় হচ্চে । একট। কথা এখনো সে সম্পূর্ণ বুঝচে না যে, সত্যের উপলব্ধি যতক্ষণ পয্যন্ত আমাদের অসম্পূর্ণ থাকে ততক্ষণ দুঃখ দেওয়া এবং দুঃখ পাওয়৷ থেকে কেউ আমাদের বাচাতে পারবে না। যতক্ষণ বিশ্বপ্রকৃতির মধ্যে শক্তিকেই প্রধান ক’রে দেখব ততক্ষণ স্বার্থকেই আশ্রয় ব’লে আঁকড়ে ধরব । অবশেষে "স্বার্থের সমাপ্তি অপঘাতে ।” মানব প্রকৃতির সব চেয়ে বড় সত্য ষে প্রেম সে যদি একটা স্বষ্টিছাড়া পদার্থ না হয়, বিশ্ববিধানে সেও যদি সবচেয়ে বড় সত্যু হয় তবে এই প্রেমের আশ্রয় ও উৎস বিশ্বের মূলে কেউ আছেন। কেন না প্রেম-পদার্থ ব্যক্তিগত। ব্যক্তির সঙ্গে সত্য সম্বন্ধ ছাড়া প্রেমের আর কোনো অর্থ থাকৃতে পারে না। শক্তির উদ্ধে সেই ব্যক্তিকে সেই পরমপুরুষকে যদি দেখতে পাই তাহলেই আমাদের প্রকৃতির পরম সত্য আপন চরম পরিতৃপ্তি লাভ করতে পারে। সেই পরিতৃপ্তি স্বার্থকে ত্যাগের দ্বারাই আপনাকে প্রকাশ করে। এই পরিতৃপ্তিতেই 夺可f国1... মানুষের পক্ষে সকলের চেয়ে অশিব কি ? বিশ্বকে জড়শক্তির ক্রিয়া বলে জানা । কেননা, তাতে ক’রে সমস্ত জগতের সঙ্গে মানুষের একেবারে গোড়ায় তফাৎ ঘটে। সেই ভয়ঙ্কর অসামঞ্জস্তে মনুষ্যত্বটা একটা মুলহীন পদার্থ হয়ে দেখা দেয় ; কাজেই ধৰ্ম্মকে একটা বানানে জিনিষ মনে করায় তার দাম ক’মে যায়, ত্যাগমাত্রকে নিতান্ত ফাকি ল’লে মনে হয় । মানুষের একটি ব্যক্তিত্ব আছে অথচ যে জগতে তার জন্স, যেখানে তার স্থিতি, সেখানে সৰ্ব্বত্র বস্তু অসীম, শক্তি অমর, তথাপি সেখানকার আদি অস্তে ব্যক্তিত্বের লেশ নেই, এই কথা যদি মনে করি,- অর্থাৎ যে আয়াকে নিজের মধ্যে একাত্ত উপলব্ধি করচি, যে আত্ম। কেবল যে আপনাকে জানে তা নয় আপনার স্বরূপে স্বভাবে যার আনন্দ, এবং সেই আনন্দে যে আপনাকে নানা কৰ্ম্মে ও নানা সম্বন্ধে দান করে সেই আমার আত্মার সঙ্গে বিরাট বিশ্বে কোথাও আত্মিক সম্বন্ধের কোনো আশ্রয় নেই, এই কথাটা যদি স্বীকার করি তবে তার মত এমন ভয়ঙ্কর অকল্যাণ মানুষের পক্ষে আর কিছু হ’তে পারে না । আমাদের বা কিছু পাপ, পরস্পরের প্রতি যা কিছু অন্যায় সমস্তেরই মুল এইপানে । আধ্যাত্মিক সত্যকে জগতে জীবনে যে পরিমাণে কম উপলব্ধি করূচি সেই পরিমাণেই বেশি ক’রে নিজের ও অপরের পক্ষে ঃখের কারণ হয়ে উঠচি । বিচিত্র।--শ্রাবণ, ১৩৩৭ শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর & বর্তমান যুগের নারীসমস্যা স্ত্রীপুরুষ লইয়। সংসার-উভয়ের সমবেত চেষ্টায় সংসারযাত্র। নিৰ্ববাহিত হয় । এ দুইয়ের শিক্ষা, দীক্ষা, রীতি যদি একরূপ না হয়, তবে সংসার কতকটা অচল হয়, একপায় খুড়াইয়। খুড়াইয়া কোনরকমে চলিতে পারা যায় বটে কিন্তু তা বেশীক্ষণ নয় ।••• পূৰ্ব্বকালে এরূপ ছিল না। আমাদের দেশের উচ্চশিক্ষ। টুলো পণ্ডিতদের মধ্যেই আবদ্ধ ছিল । তাহীদের মেয়েরাও অনেক সময়ে খুব উচ্চশিক্ষা পাইতেন । ফরিদপুরের বৈজয়ন্তী দেবী বিবিধ সংস্কৃতগ্রন্থ লিখিয়া যশস্বিনী হইয়াছিলেন ; লাল জয়নারায়ণের ভ্রাতুপুত্রী, লাল রামগতির কন্য। আনন্দময়ী দেবী রাজবল্লভের অগ্নিষ্টোম যজ্ঞের কুণ্ড কিরূপ হইবে, তাহ শাস্ত্ৰ দেখিয়া স্বয়ং আঁকিয় দিয়াছিলেন ; ষোড়শ শতাব্দীতেবংশীদাসের কন্য। চন্দ্রাদেবী রামায়ণের যে সুললিত বঙ্গানুবাদ করেন তাহ মৈমনসিংহের মহিলারা বিবাহ-উৎসবে এখনও গান করিয়া থাকেন । এরূপ বিদুষী মহিলাদের অনেকের নাম আমরা জানি । কিন্তু সাধারণ ভদ্রসমাজের মহিলারা উচ্চশিক্ষা মা পাইলেও তাহুদের অনেকেই রামায়ণ, মহাভারত পড়িতে পারিতেন ; পুরাণের উপাখ্যান সকলেই জানিতেন, গৃহস্থ ভদ্রলোকদের বিদ্যার দৌড়ও তাহা হইতে বড় বেশ ছিল না । স্ত্রী, পুরুষ ইহাদের উভয়ের আদর্শ ও জ্ঞান অনেকট একরূপ ছিল। উাহারা উভয়ে মিলিয়। স্বচ্ছন্দে