পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত ঐবিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি সব কলেজ খুলিয়া গেল, অপু কোনো কলেজে ভৰ্ত্তি হইল না। অধ্যাপক মিঃ বস্থ তাহাকে ডাকিয়া পাঠাইয়া ইতিহাসে অনাস কোস লওয়াইতে যথেষ্ট চেষ্টা করিলেন। অপু ভাবিল—কি হবে আর কলেজে পড়ে ? সে সময়ট ইম্পিরিয়াল লাইব্রেরীতে কাটাব, বি-এর ইতিহাসে এমন কোনো নতুন কথা নেই যা আমি জানি নে। ও দু-বছর মিছিমিছি নষ্ট, লাইব্রেরীতে তার চেয়ে অনেক পড়ে ফেলতে পারবো এখন । তা ছাড়া ভৰ্ত্তির টাকা, মাইনে, এসব পাই বা কোথায় ? . . - একটা কিছু চাকরি না খুজিলে চলে না। খবরের কাগজ বিক্রমের পুজি অনেক দিন ফুরাইয়া গিয়াছে, মায়ের মৃত্যুর পর সে কাজে আর উৎসাহ নাই। একটা ছোট ছেলে পড়ান আছে, তাতে শুধু দুটো ভাত খাওয়া চলে দুবেলা—কোনো মতে ইক্‌মিক্‌ কুকারের আলুসিদ্ধ, ডালসিদ্ধ ও ভাত । মাছ, মাংস, দুধ, ভাল তরকারী তে অনেক দিন আগে দেখা স্বপ্নের মত মনে হয়—যাক্‌ সে সব, কিন্তু ঘরভাড়া, কাপড় জামা, জল খাবার এসব চলে কিসে? তাহা ছাড়া অপুর অভিজ্ঞতা জন্মিয়াছে যে, কলিকাতায় ছেলে-পড়ান বাবার মুখে শৈশবে শেখা উদ্ভট শ্লোকের পদ্মপত্রস্থিত জলবিন্দুর মত চপল, আজ যদি যায়, কাল দাড়াইবার স্থান নাই। কয়েক দিন ধরিয়া খবরের কাগজ দেখিয়া দেখিয়া পাইওনিয়র ড্রাগ ষ্টোসে একটা কাজ খালি দেখা গেল দিনকতক পরে। আমহাই স্ত্রীটের মোড়ে বড় দোকান, পিছনে কারখানা। তখনও ভিড় জমিতে স্বরু হয় নাই,অপু ঢুকিয়াই এক স্থূলকায় আধাবয়সী ভদ্রলোকের একেবারে সামনে পড়িল। ভদ্রলোক বলিলেন, কাকে চান ? অপু লাজুক মুখে বলিল—আঞ্জে, চাকরি খালির বিজ্ঞাপন দেখে—তাই ~ ও ! আপনি ম্যাটিক পাশ । —আমি এবার আই-এ— ভদ্রলোক পুনরায় তাকিয়ায় ভর দিয়া হাল ছাড়িয়া দিবার স্বরে বলিলেন—ও আই-এ পাশ নিয়ে আমরা কি করব, আমাদের লেবেলিং ও মাল বট্‌লিং করার জন্যে লোক চাই। খাটুনিও খুব, সকাল সাতটা থেকে সাড়ে দশটা, মধ্যে দু ঘণ্টা খাবার ছুটি, আবার বারোটা থেকে পাচটা, কাজের চাপ পড়লে রাত আটটাও বাজবে – —মাইনে কত ? —আপাতক পনেরো, . ওভার-টাইম, খাটলে দু’ আনা জলখাবার - সে সব আপনাদের কলেজের ছোক্রার কাজ নয় মশায়—আমরা এমনি মোটামুটি লোক চাই। ইহার দিনকতক পরে আর একটা চাকরি খালির বিজ্ঞাপন দেখিয়া গেল ক্লাইভ ষ্ট্রীটে। দেখিল, সেটা একটা লোহা-লক্কড়ের দোকান, বাঙ্গালী ফাৰ্ম্ম । একজন ত্রিশ বত্রিশ বছরের অত্যন্ত চুল ফাপানো টেরি-কাট লোক ইঞ্জি-কর। কামিজ পরিয়া বসিয়া আছে, মুখের নীচে দিকের গড়নে একটা কৰ্কশ ও স্থূলভাব, এমন ধরণের চেহারা ও চোখের ভাবকে সে মাতাল ও কুচরিত্র লোকের সঙ্গে মনে মনে জড়িত করিয়া থাকে। লোকটি অত্যন্ত অবজ্ঞার সুরে বলিল—কি, কি এখানে ? অপুর নিজকেই অত্যস্ত ছোট বোধ হইল নিজের কাছে। সে সঙ্কুচিত স্বরে বলিল—এখানে একটা চাকুরী খালি দেখে আসচি– লোকটার চেহারা বড়লোকের বাড়ির উচ্ছস্থল অসচ্চরিত্র, বড় ছেলের মত। পূৰ্ব্বে এ ধরণের চরিত্রের সহিত তাহার পরিচয় হইয়াছে লীলাদের বাড়ী বৰ্দ্ধমানে থাকিতে। নিজের অজ্ঞাতসারে একটা ঘৃণা ও অসন্তোষে তাহার মন ভরিয়া উঠিল। এই টাইপট সে চেনে। লোকটা কর্কশ স্বরে বলিল—কি কর তুমি ?