পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

* * * . ध्र-१.० জাসিলেই সে বলিল বাবু আপনি কত দিন এ কাজে নেমেচেন—কাজ তে কিছুই জানেন না আপনি দেখচি— অপু সে কথা স্বীকার করিল। লোকটি বলিল— আপনি লেখাপড়া জানেন, ওসব খুচ রে কাজ করে আপনার পোষাবে না । আপনি আমার সঙ্গে কাজে নামবেন ? “বড় মেসিনারীর দালালী, ইঞ্জিন, বয়লার এই সব । এক এক বারে পাঁচ শো সাত শো টাকা রোজগার হবে---বাৰু ইংরেজি জানিনে তাই, তা যদি জানতাম, এ বাজারে এতদিন গুছিয়ে নামবেন আমার সঙ্গে ? অপু হাতে স্বর্গ পাইয়া গেল। আনন্দের আতিশয্যে সে গাড়োয়ানকে ভাড়াটা ঘুে দণ্ড দিতে হইল, সেটাও গ্রাহের মধ্যে আনিল না । মুসলমানটির সঙ্গে তাহার অনেকক্ষণ কথাবার্ত হইল –অপু নিজের বাসার ঠিকানা দিয়া দিল, স্থির হইল, কাল সকাল দশটার সময় এইখানে মুসলমান দালালট তাহার অপেক্ষা করিবে । অপু রাত্রে শুইয়া মনে মনে ভাবিল—এতদিন পরে একটা স্ববিধ জুটেচে,—এইবার হয়ত পয়সার মুখ দেখব । মাসখানেক কিছুই হইল না। একদিন দালালটি তাহাকে বকিল—দুটোর পরে আর বাজারে থাকেন না, এতে কি হয় কখনো বাৰু? যান কোথায় ? অপু বলিল –ইম্পিরিয়াল লাইব্রেরীতে পড়তে যাই—দুটো থেকে সাতটা পৰ্য্যস্ত থাকি। একদিন যেও তোমায় দেখাবো কত বড় লাইব্রেরী। রোজ য়োজ বাজারের হৈ চৈ, মাড়োয়ারীদের ভিড়, চারিধারের অত্যন্ত হসিয়ারি দর-কসাকসি, শুধু টাকা, টাকা, টাকা সংক্রাস্ত কথাবাৰ্ত্ত—এসব অপুর কেমন ভাল লাগে না। লাইব্রেরীতে আসিয়া সে স্থাপ ছাড়িয়া বঁাচে । ইতিহাস খুব আগ্রহের সঙ্গে পড়ে, কোনো এক দরিদ্র ঘরের ছোটছেলের কাহিনী পড়িতে বড় ইচ্ছা যায়.সংসারে দুঃখকষ্টের সঙ্গে যুদ্ধ...তাদের জীবনের অতি ঘনিষ্ঠ ধরণের সংবাদ জানিতে মন যায়। প্রবাসী—আশ্বিন, ১৩৩৭ [ ৩eশ ভাগ, ১ম খণ্ড মাচুষের সত্যকার ইতিহাস কোথায় লেখা আছে ? জগতের বড় ঐতিহাসিকদের অনেকেই যুদ্ধ-বিগ্রহ ও রাজনৈতিক বিপ্লবের ঝাঝে, সম্রাট, সম্রাঞ্জী, মন্ত্রীদের সোনালী পোষাকের জাকজমকে দরিদ্র গৃহস্থের কথা ভুলিয়াছেন। পথের ধারের আমগাছে তাদের পুটলিবাধা ছাতু কবে ফুরাইয়া গেল, সন্ধ্যায় ঘোড়ার হাট থেকে ঘোড়া কিনিয়া আনিয়া পল্লীর মধ্যবিত্ত ভদ্রলোকের ছেলে তার মায়ের মনে কোথায় আনন্দের ঢেউ তুলিয়াছিল – ছ হাজার বছরের ইতিহাসে সে-সব কথা লেখা নেই—থাকিলেও বড় কম। রাজা যযাতি কি সম্রাট অশোকের শুধু রাজনৈতিক জীবনের গল্প সবাই শৈশব থেকে মুখস্থ করে—কিন্তু ভারতবর্ষের, গ্রীসের, রোমের যব, গম ক্ষেতের ধারে, ওলিভ বন্যপ্রাক্ষা, মার্টল ঝোপের ছায়ায় ছায়ায় যে প্রতিদিনের জীবন, হাজার হাজার বছর ধরিয়া প্রতি সকাল সন্ধ্যায় যাপিত হইয়াছে—তাদের সুখ-দুঃখ, আশা-নিরাশার গল্প, তাদের বুকের স্পন্দনের ইতিহাস সে জানিতে চায় । কেবল মাঝে মাঝে এখানে ওখানে ঐতিহাসিকদের পাতায়, সম্মিলিত সৈন্তব্যুহের এই আড়ালটা সরিয়া যায়, সারি বাধা বর্ষার অরণ্যের ফাকে দূর অতীতের এক ক্ষুদ্র গৃহস্থের ছোট বাড়ি নজরে আসে । অজ্ঞাতনামা কোনো লেখকের জীবন-কথা, কি কালের স্রোতে কূলে-লাগা এক টুকরা পত্র, প্রাচীন মিশরের কোন কৃষক শস্য কাটিবার কি আয়োজন করিতে লিখিয়াছিল,—বহু হাজার বছর পরে তাদের টুকরা ভূগর্তে প্রোথিত মৃন্ময়পাত্রের মত দিনের আলোয় বাহির হইয় আসে । কিন্তু আরও ঘনিষ্ঠ ধরণের, আরও তুচ্ছ জিনিষের ইতিহাস চায় সে। মাস্থ্য মাহুষের বুকের কথা জানিতে চায়। আজ যা তুচ্ছ, হাজার বছর পরে তা মহাসম্পদ ৷ ভবিষ্যতের সত্যিকার ইতিহাস হইবে এই কাহিনী, মানুষের মনের ইতিহাস, তার প্রাণের ইতিহাস । আর একটা দিক তার চোখে পড়ে। একটা জিনিষ বেশ স্পষ্ট হইয়া ওঠে তার কাছে—মহাকালের এই মিছিল । বাইজেণ্টাইন সাম্রাজের ইতিহাস গিবন