পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

دو سb প্রবাসী—আশ্বিন, ১৩৩৭ [ ৩eশ ভাগ, ১ম খণ্ড রকম মানুষ নয়, তাহা ছাড়া এত লোক থাকিতে তাহাকে কেন ঠকাইতে যাইবে ? - কিন্তু এ ধারণা বেশীদিন টিকিল না । ক্রমে জানা গেল আবদুল দেশে যাইবে বলিয়া যাহার কাছে সামান্য যাহা কিছু পাওনা ছিল, সব আদায় করিয়া লইয়া গিয়াছে দিন-সাতেক আগে। কঁাটাপ্রেকের দোকানের বৃদ্ধ বিশ্বাস-মহাশয় বলিলেন—আশ্চর্য্যি কথা মশাই, সবাই জানে আবদুলের কাগুকারখানা, আর আপনি তাকে চেনেন নি দু-তিন মাসেও ? সেটা জুয়োচোরের ধাড়ী, হার্ডওয়ারের বাজারে সবাই চিনে ফেলেচে, এখানে আর স্থবিধে হয় না, তাই গিয়ে আজকাল জুটেচে মেসিনারির বাজারে । কোনো দোকানে তো আপনার একবার জিগ্যেস করাও উচিত ছিল । হার্ডওয়ারের দালালী করা কি আপনার মত ভালমানুষের কাজ মশাই ? আপনার অল্প বয়েস, অন্য কাজ কিছু দেখে নিন গে। এখানে কথা বেচে খেতে হবে, সে আপনার কৰ্ম্ম নয়, তবুও ভাল যে আটটা টাকার ওপর দিয়ে গিয়েচে— আট টাকা বিশ্বাস-মহাশয়ের কাছে যতই তুচ্ছ হোক অপুর কাহে তাহ নয়। ব্যাপার বুঝিয়া চক্ষে অন্ধকার দেখিল –গোটা মাসের ছেলে-পড়ানোর দরুণ সব টাকাটাই যে সে তুলিয়া দিয়াছে আবদুলের হাতে! এখন সারা মাস চলিবে কিসে ! বাড়ি ভাড়ার দেন। গত মাসের শেষে বন্ধুর কাছে ধার-এ সবের উপায় ? দিশাহারাভাবে পথ চলিতে চলিতে সে ক্লাইভ ষ্ট্রীটে শেয়ার মার্কেটের সামনে আসিয়া পড়িল । দালাল ও ক্রেতাদের চীৎকার, মাড়োয়ারীদের ভিড় ও ঠেলাঠেলি খর্নিক্রফট ছ’ আনা, থনিক্রফট ছ’ আনা, নাগরমল সাড়ে পাচ আনা—বেজায় ভিড়, বেজায় হৈ চৈ, বিলাসপুর চিনির কারখানার শেয়ারের বর্তমান দর লইয়া সবাই বেজায় ব্যস্ত। কেমন যেন দম বন্ধ হইয়া আসে । লালদিঘীর পাশ কাটাইয়। লাটসাহেবের বাড়ীর সম্মুখ দিয়া সে একেবারে গড়ের মাঠের মধ্যে কেল্লার দক্ষিণে একটা নির্জন স্থানে একটা বড় বাদামগাছের ছায়ায় জাসিয়া বসিল । ' ' - আজই সকালে বাড়ীওয়ালা একবার তাগাদ দিয়াছে, কাপড় একেবারে নাই, না কুলাইলেও ছেলে-পড়ানোর টাকা হইতে কাপড় কিনিবে ঠিক করিয়াছিল, রুম-মেট তো ধারের জন্য তাগাদার উপর তাগাদা করিতেছে। আবদুল শেষকালে এভাবে ঠকাইল তাহাকে ? চোথে তাহার জল আসিয়া পড়িল-দুঃখদিনের সার্থী বলিয়া কত বিশ্বাস করিত যে সে আবদুলকে ! রাত্রি অন্ধকার হয়, বড় দুৰ্য্যোগ আসে, ক্ষীণ প্রদীপের শিখা কঁাপিতে থাকে অনভিজ্ঞ, তরুণ হৃদয় একেবারে বিভ্রান্ত, দিশাহারা হইয়া পড়ে। তারা জানে না আবার সকাল হইবেই, আবার স্বৰ্য্য উঠিবেই, তখন মনেও হইবে না যে কোনো কালে আকাশভরা দিনের আলো মেঘের আড়ালে ঢাকা ছিল । অনেকক্ষণ সে বসিয়া রহিল । ঝ ঝণ করিতেছে দুপুর, বেলা দেড়টা আন্দাজ কেহ কোনো দিকে নাই, আকাশ মেঘমুক্ত, দূরপ্রসারী নিঃসীম নীল আকাশের গায়ে কালো বিন্দুর মত চিল উড়িয়া চলিয়াছে’-দুর হইতে দূরে সেই ছেলেবেলাকার মত ছোট হইতে হইতে ক্রমে মিলাইয়া চলিয়াছে.হঠাৎ একটু অপূৰ্ব্ব ব্যাপার ঘটিল –আকাশের দিকে চাহিয়া থাকিতে থাকিতে এক অপূৰ্ব্ব অদ্ভুত ভাব অপুর মনে আসিল, ঠিক এ ধরণের ভাব কখনো আর তাহার হয় নাই । কিসের দুঃখ, কিসের দৈন্য ? মা তো তাঁহাকে মুক্তি দিয়া গিয়াছে— সে-ই তো নিজে নিজের চারিদিকে গণ্ডী রচনা করিয়া রাখিয়াছে, কেন এদের হাতে স্বেচ্ছায় খাচার পার্থীর মত বন্দী---এই চারিধারের পরিপূর্ণ মহিমার মধ্যে. এই কম্পমান শ্রাবণ দুপুরের খর রৌদ্র.মাথার উপরে নিঃসীম অনন্ত নক্ষত্রশূন্য নীল আকাশ।...বিদ্যুৎ স্বৰ্য্য. রাত্রির তারা-প্রেম-মৃত্যুপারের দেশ - মা অনিল । চিররাত্রির অন্ধকারে যেখানে সাই সাই রবে ধূমকেতুর দল আগুনের পুচ্ছ জুলাইয়া উড়িয়া চলে...কোন স্বজনী শক্তির অসীম তেজে লক্ষ আলোকবর্ষ দূরের দেশে নীহারিকাপুঞ্জ দীপ্যমান হইয় ওঠে, গ্রহ ছোটে, তারারী মিটমিট করে, চন্দ্রসূৰ্য্য লাটিমের মত আপনার বেগে আপনি ঘুরিয়া বেড়ায়-তুহিন শীতল বোমপথে দূরে দূরে কোথায় দেবলোকের মেরুপৰ্ব্বত