পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૧૭ প্রবাসী—আশ্বিন, ১৩৩৭ [ ৩eশ ভাগ, ১ম খণ্ড মুখে পান্ধী অব্যবহৃত অবস্থায় পড়িয়া আছে। দেখিয়া মনে হয় এক সময়ে ইহাদের অবস্থা খুবই ভাল ছিল, বর্তমানে পলার-হীন ডাক্তারের দ্বারসংযুক্ত অনাদৃত পিতলের পাতের মত শ্ৰীহীন ও মলিন । 'পুলু এসেচে, পুলু এসেচে’—‘এই যে পুলু'—এটা কে সঙ্গে ’ ‘ও ! বেশ, বেশী, ষ্টীমার কি আজ লেট, ? ওরে নিবারণকে ডাক ব্যাগটা বাড়ির মধ্যে নিয়ে যা’, ‘আহা থাক থাক, এস এস দীর্ঘজীবি হও । প্রণব তাহাকে একেবারে বাড়ির মধ্যে লইয়া গেল। অপু অপরিচিত বাড়ির অন্দরমহলে যথারীতি অত্যন্ত লাজুক মুখে ও সঙ্কোচের সহিত ঢুকিল। প্রণবের বড় মামীম আসিয়া কুশল প্রশ্ন জিজ্ঞাসাবাদ করিলেন। অপুকে দেখিয়া বলিলেন—এ ছেলেটিকে কোথেকে আনলি পুলু? এ মুখ যেন চিনি— প্রণব’হাসিয়া বলিল-কি করে চিনবেন মামীম ? ও কি আর বাঙ্গাল দেশের মানুষ ? প্ৰণবের মামীম বলিলেন—ত নয় রে কতবার পটে আঁকা দেখেচি, ঠাকুরদেবতার মুখের মত মুখ—এস এস দীর্ঘজীবী হও— প্ৰণবের দেখাদেখি অপুও পায়ের ধূলা লইয়৷ প্ৰণাম করিল। —এস এস, বাব! আমার এস-দেশ কোথায় বাবা ? তার পরে উপরের ঘর। ডাব, চিনির সরবং, সন্দেশ, ছানা। ছেলেমেয়ের ভিড় পূৰ্ব্ববং । সন্ধ্যার পরে সারাদিনের গরমট একটু কমিল। দেউড়ির বাহিরে আরতির কাসর ঘণ্টা বাজিয়া উঠিল, চারিদিকে শাখ বাঞ্জিল । উপরের থোলাছাদে শীতলপাটী পাতিয়া অপু এক বসিয়াছিল, প্রণব ঘুম হইতে সন্ধার কিছু আগে উঠিয়া কোথায় গিয়াছে। কেমন একটা নতুন ধরণের অনুভূতি-সম্পূর্ণ, নতুন ধরণের, কি সেটা ? কে জানে হয় তো শশখের রব বা আরতির বাজনার দরুণ -- কিংবা হয়ত— - মোটের উপর এ এক অপরিচিত জগৎ । কলিকাতার কৰ্ম্মব্যস্ত, কোলাহলমুখর ধুমখুলিপূর্ণ আবহাওয়া হইতে সম্পূর্ণ পৃথক এক ভিন্ন জীবন-ধারার জগৎ । মারিকেল শ্রেণীর পত্রশীর্ষে নবমীর জ্যোৎস্ব ফুটিয়াছে এইমাত্র ফুটিল, অপু লক্ষ্য করে নাই । কি কথা যেন সব মনে আসে। অনেক দিনের কথা । পিছন হইতে প্রণব বলিল —কেমন, গাছপালা গাছপাল করে পাগল, দেখলি তো গাছপালা নদীতে আসতে ? কি রকম লাগল বল শুনি— অপু বলিল—সে যা লাগল তা লাগল—এখন কি মনে হচ্ছে জানিস্ এই আরতি শুনে ? ছেলেবেলায় আমার দাদু ছিল, ভক্ত বৈষ্ণব, তার মুখে শুনতাম *বংশী বটতট কদম্ব নিকট, কালিন্দী ধীর সমীর’—যেন— সিড়িতে কাহাদের পায়ের শব্দ শোনা গেল। প্রণব ডাকিয়া বলিল—কেরে ? মেনী ? শোন— একটি তেরো চৌদ্দ বছরের বালিকা হাসিয়৷ দরজার কাছে দাড়াইল । প্রণব বলিল—কে, কে, রে ? মেয়েটি পিছন ফিরিয়া কাহীদেরদিকে একবার চাহিয়া .দেখিয়া বলিল—সবাই আছে, ননীদি, দাসী-দি, মেজ-দি, সরলী—তাস খেলুব চিলেকোটার ঘরে – অপু মনে মনে ভাবিল—এ বাড়ির মেয়েছেলে সবাই দেখতে ভারী সুন্দর তো ? 纖 প্রণব বলিল—এটি মামার ছোট ਾਂ, এরই মেজ বোনের বিয়ে । ক বোনের মধ্যে সে-ই সকলের চেয়ে স্বত্র আর ভারী চমৎকার মনটি—মেনী ডাক তো একবার অপর্ণকে ? মেনী সিড়িতে গিয়া কি বলিতেই একটা সম্মিলিত মেয়েলি কণ্ঠের চাপা হাস্যধ্বনি শুনিতে পাওয়া গেল এবং অল্পক্ষণ পরেই একটি যোল-সতেরো বছরের নতমুখী স্বন্দরী মেয়ে দরজার কাছে আসিয়া দাড়াইল। প্রণব বলিল—ও আমার বন্ধু, তোরও স্ববাদে দাদা—লজ্জা কাকে এখানে রে ? এইটি মামার মেজ মেয়ে অপর্ণী—এরই— মেয়েটি চপল নয়, মৃদু হাসিয়া তখনই সরিয়া গেল, অথচ কেমন একটা ধীর, শাস্ত ভাব। মুখের ভাব দেবীমূরি মুখের মত পবিত্রত মাখানে, সিদ্ধ ধরণের সৌন্দৰ্য্য। কিছুদিন আগে পড়া একটা ইংরাজী উপন্যাসের একটা লাইন বার-বার তাহার মনে আসিতে