পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা । জায়গা খালি রাখা ; লম্বালম্বি সার দিয়ে কতকগুলি চেয়ার পাতা, রাজা, কবি,আর অন্য অভ্যাগতদেরর বসবার জন্য ; আর অভ্যাগতদের পিছনে আর সামনে আসরের পাশে স্থানীয় লোকেরা আর রাজার অম্লচরের দাড়িয়ে’ । মিষ্টি গামেলানের বাজনা শুরু হ’তে আমরা গিয়ে ব’সলুম। নাটক অভিনয় হ’ল, অনেকট। আমাদের যাত্রার মতন। খালি এই পার্থক্য যে, অভিনেতারা মুখস প’রে । মুখস প’রে যাত্র বা নাটক করার রীতি ভারত থেকেই গিয়েছে । হয় তো বা মূল অস্টক জাতির মধ্যেই এই ধরণের চিত্তবিনোদন বা ধৰ্ম্মাঙ্গুষ্ঠানের উপায় উদ্ভূত হ’য়েছিল। এখনও পশ্চিমের রামলীলায় রাক্ষস আর বানরদের মুখে এই রকম মুখস পরবার, আর রাম সীতা লক্ষ্মণের মুখে বর্ণ-চুর্ণ মাখিয়ে অভিনয় করার প্রথা প্রচলিত আছে । আসাম অঞ্চলে মুখস প’রে অভিনয় এথনও হ’য়ে থাকে,—ধৰ্ম্মোৎসবের অঙ্গ হিসাবে, বৈষ্ণব সত্রগুলিতে ; আসামী ভাষায় মুখসকে ছে।' আর মুখস পরে নাট্রাভিনয়কে "ভাওনা’ বলে ; বাশের চাচাড়ীর কাঠামের উপর এই সব মুখস চিত্রিত হয়। আবার ওদিকে স্থদুর কেরল দেশে মালবারেও মুখস প’রে বা মুখের উপরই রঙচঙ লাগিয়ে মুখস একে ‘কথা-কলি' ব’লে একরকম নাটকের অভিনয় প্রচলিত আছে ; মুখস প’রে বা মুখসের পরিবৰ্ত্তে মুখে রঙ মেখে নাচও কেরলের সংস্কৃতির একটী বিশিষ্ট বস্তু । বলিদ্বীপ আর যবদ্বীপের মুখসগুলি কাঠের তৈরী হয় ; হালকা শক্ত কাঠে কুদে তৈরী, তাতে নানান রকম রঙ চঙ করা থাকে, চোখ দুটোতে ছেদা থাকে তাই দিয়ে অভিনেতা দেখতে পায়, আর মুখসের ভিতরদিকে একটা ক’রে চামড়ার জীভ মতন থাকে, অভিনেতা সেটা নিজের মুখের ভিতরে পুরে মুখসটা ঠিক ক’রে আটকে রাখে। যবদ্বীপ বলিদ্বীপের এই সব কাঠের মুখস এদের শিল্পের একটা চমৎকার নিদর্শন-বস্তু হ’য়ে থাকে। মুখস পরে অভিনয় জাপানের প্রাচীন ‘নে’ নাটকের একটি অতি - বিশিষ্ট ব্যাপার ; জিনিসটী চীনে ও আছে, আর চীনের নাটকে মুখে নানান রঙ মেথেও মুখসের কাজ চালায়। এছাড়া কম্বোজ আর শু্যাম দেশেও আছে। দ্বীপময় ভারত Ե-Ե-Q: gনাটকটা হচ্ছিল, শুনলুম তার আখ্যান-বস্তু যব - দ্বীপের প্রাচীন ঐতিহ্য নিয়ে—মজপহিত নগরের রাজা হৰ্ষ-বিজয়ের চরিত্রের কোন ঘটনা অবলম্বন ক’রে । সবট। ভালো বুঝতে পারলুম না। নাটকের আরম্ভে জন আষ্টেক সঙ এল,এরা বেশ হাস্যরসের অবতারণা করতে লাগল— এদের কথাবাৰ্ত্ত একটুও বুঝতে পারছিলুম না, তবে এদের কথায় শ্রোতৃবর্গের ঘন ঘন হাসি থেকে বুঝলুম যে অভিনয়ের উদ্দেশ্যসিদ্ধি ভালোই হ’চ্ছে—যদিও আমাদের কাছে একটু বেশী অঙ্গভঙ্গি যুক্ত, একটু খোচা মেরে আর চিমটা কেটে হাসানো গোছ লাগছিল। নাটকের কথাবার্তা চ’লছে ; সঙ্গে সঙ্গে গামেলান বাজনার ও বিরাম নেই। দর্শক আর শ্রোতার নিবিষ্ট চিত্তে শুনছিল । একটা বিষয় বেশ লক্ষ্য করলুম- আর ব্যাপারটা কবিরও দৃষ্টি আকর্ষণ কুরেছিল—এত-মেয়েপুরুষ কাচ্ছা-বাচ্ছ এসেছে, কিন্তু হৈচৈ চেঁচামেচি किङ्कड़े নেই, ছেলেপুলেরাও বেশ গম্ভীর ভাবে ভব্যতার সঙ্গে বসে বা দাড়িয়ে । আসরে বাজে গোলমাল মোটেই নেই। জা’তটাকে বেশ সুসভ্য আর আত্মসমাহিত ব’লে বোধ হ’ল, এদের চরিত্রের এই গুণটী বারবার রবীন্দ্রনাথের সাধুবাদ অর্জন করলে । যাত্র। চ’লতে লাগল, ঘণ্টাখামেক পরে আমরা আহার ক’রতে গেলুন। রাজার অতিথি হয়ে এসেছেন একজন G5. f5TFM – Charles Eugene Henri Sayers i গুণী যুবক ; বলিদ্বীপ আর যবদ্বীপ বড়ে ভালো লেগেছে, বাদুঙ-এ গত দুমাস ধ’রে আছেন, বলিতে আরও ছ-সাত মাস থাকবেন, খুব ছবি আঁকছেন। এর সঙ্গে আলাপ ক’রে বেশ খুশী হওয়া গেল । আহারের মধ্যে দ্রেউএস রাজাকে ধন্যবাদ দিয়ে আর কবিকে সংবৰ্দ্ধনা ক’রে মালাই ভাষায় একটি বক্তৃত৷ দিলেন । রাজা তার উত্তর দিলেন, দ্রেউএস আমাদের জন্য ইংরিজিতে তরজম। ক’রে দিলেন। রাজার প্রধান বক্তব্য—বলিদ্বীপের লোকেরা অার ভারতের লোকের একই বংশের ; ভারতের সঙ্গে এই সংযোগ তাদের কাছে গৌরবের বস্তু ; কবির আগমনে এই গৌরববোধ আর তদনুসারে কার্য্য ক’রে যাওয়া বলিদ্বীপের লোকদের মধ্যে