পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

tూసెషి ইচ্ছা কিন্তু এতদিন সময়ও পায় নাই, অর্থও ছিল না। এখন দুইটার ব্যবস্থাই এক রকম হইয়াছে, ধ ভাবনা নাই। মায়া এবং নিরঞ্জনের সঙ্গে মুখোমুখি পরামর্শ করিয়া কাজ করাই ভাল, না হইলে চিঠি লেখালেখি করিয়া অনর্থক সময়ও যাইবে, এবং কাজও ভাল করিয়া হইবে না। মায়ার আর একটা ভাবনা আসিয়া জুটিল । মায়ের স্মৃতি-মন্দির স্থাপনের মধ্যে নিরঞ্জনকে না জড়ানই তাহার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু প্রভাসের চিঠিতে বুঝিল তাহা হইবার নয়। রেঙ্গুনে আসিলে, সে তাহাদের বাড়ীতেই আসিবে এবং নিরঞ্জনকে বাদ দিয়া কোনো কথাই সেই বলিবে না, এবং সম্ভবও হইবে না। কাজেই যেমন করিয়া হোক, কথাটা তাহাকে আগে পাড়িয়া রাথিতেই হইবে। তাহার. শরীর মর্ন অকারণেই অত্যন্ত ক্লান্ত হইয় পড়িয়াছিল। আর কিছু ভাবিতে তাহার ইচ্ছা করিতেছিল না। সে চিঠিখান দেরাজে রাখিয়া গিয়া শুইয়া পড়িল । সে রাত্রে আর আহারাদি করিতেও উঠিল না। f ( ७8 ) নিরঞ্জন সকালে অপিসঘরে বসিয়া কাগজপত্র দেখিতেছিলেন। আগের দিন রাত্রে ফিরিতে র্তাহার অত্যন্ত দেরি হইয়া গিয়াছিল, আসিয়া আর মায়ার সঙ্গে দেখা হয় নাই । জিজ্ঞাসা করিয়া জানিয়াছিলেন, সে শুইতে চলিয়া গিয়াছে, কাজেই আর ডাকেন নাই । ছোকরা আসিয়া খবর দিয়া গেল চা দেওয়া হইয়াছে। কাগজপত্র রাখিয়া নিরঞ্জন খাবার ঘরে চলিলেন । মায়া নামিয়া আসিয়াছে । তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “কাল দেবকুমার এসেছিল ত?’, মায়া চোখ নীচু করিয়াই উত্তর দিল, “ই, এসেছিলেন ।” নিরঞ্জন বলিলেন, “এমন কাজের তাড়া পড়েছে যে, কিছুতেই আগে আসতে পারলাম না। আজও ঐ রকম রাত হবে। এ সপ্তাহটাই বোধ হয় যাবে এইভাবে । তা অজয় ছিল ত ?” প্রবাসী—আশ্বিন, ১৩৩৭ [ ৩eশ ভাগ, ১ম খণ্ড মায়া বলিল, “হা, অজয় এসেছিল। দেবকুমার বাবু বলছিলেন খুব ভাল একটা Russian ballet এসেছে । তিনি যাবেন, আমরাও যাব কিনা তাকে জানালে তিনি টিকিট করে রাখবেন কালকের জন্যে ।” নিরঞ্জন বলিলেন, “সময় পাওয়া শক্ত। দেখি অাপিসে গিয়ে যদি ব্যবস্থা করতে পারি।” খানিকক্ষণ আর কিছু কথাবাৰ্ত্ত হইল না। নিরঞ্জন খবরের কাগজ পড়িতে লাগিলেন, এবং মায়া চা লইয়া নাড়াচাড়া করিতে লাগিল। প্রভাসের কথা বাবাকে না বলিলেও নয়, অথচ কেমন করিয়া যে সে কথাটা পাড়িবে, তাহা ভাবিয়াই পাইতেছিল না। অবশেষে আর কিছু ভাবিয়া না পাইয়া বলিল, “কালকে আমাদের গ্রামের প্রভাস-দার একটা চিঠি পেয়েছি।” নিরঞ্জন মুখ তুলিয়া বলিলেন, “ও প্রভাসের ? সে তোকে মাঝে মাঝে চিঠি লেখে বুঝি ? কি লিখেছে সে ?” মায়া বলিল, “না, আগে ত লিখতেন না; এবার গিয়ে তাকে একটা কাজের ভার দিয়ে এসেছিলাম, তারই জন্যে লিখেছেন।” নিরঞ্জন বলিলেন, “কি কাজ ? গ্রামে গিয়ে তাই বুঝি আসতে দেরি হচ্ছিল ?” আর না বলিলে নয় যখন, তখন মায়া বলিয়াই ফেলিল। "মায়ের স্মৃতিরক্ষার জন্যে গ্রামে একটা কিছু করব, ঠিক করেছিলাম। আমার হাতে কিছু টাকা জমেছে। তাই কি রকম জিনিষ হ’লে সব চেয়ে ভাল হয়, সেটা জানতে প্রভাস-দাকে বলে এসেছিলাম। সেই বিষয়ে লিখেছেন, এখানে কিছুদিন পরে একবার আসবেন এবং মুখোমুখি সব আলোচনা করবেন, তার ইচ্ছে।” কথাটা বলিয়াই মায়া একবার ভয়ে ভয়ে পিতার মুগের দিকে তাকাইল। তিনি বিরক্ত হইবার কোনো লক্ষণ না দেখাইয়া বলিলেন,“তা বেশ ত । কবে আসছে ?” মায়া বলিল, “দিন পনেরো কুড়ি পরে বোধ হয়। র্তার ছোট ভাইয়ের বিয়ে এই সময়, সেটা হয়ে গেলেই আসবেন ।”