পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রেম ও জীবন শ্ৰীমোহিতলাল মজুমদার ( 'চপল প্রেম, থির জীবন দুরন্ত–গোবিন্দদাস । ) আজ রাতে ঘুম নাই, ফাঙ্কনের দোল-পূর্ণিমা যে ! রজনী পরেছে শাড়ী নীলাম্বরী জ্যোৎস্না-বারাণসী, দু’চারি তারার কুঁড়ি জড়াইয়া ওঢ়নার ভাজে, কালে সে শাড়ীর পাড় লুটায়েছে বনান্ত পরশি । নয়নে লেগেছে আজ অবনীর বৃন্দাবনী মায়া, যে জীবন-যৌবনের ক্ষয় নাই, খেদ নাহি যা’য়— হাসি অশ্রু দুই-ই এক, একই শোভা—গোলাপে শিশির, —আজিকার আলো আর ছায়া মিলায় মধুর করি তারি রস প্রাণের সীমায়, জীবন-বসন্ত শেষ, শেষ নাই পূর্ণিমা-নিশির ! ૨ ভেসে আসে হাহ-হাসি রহি রহি, গীতবাদ্য রোল— জনপদ-যুবজন মাতিয়াছে মদন-উৎসবে ; সে শব্দ-তরঙ্গ যেন দূর হতে হানিছে হিল্লোল হেথাকার স্তব্ধ তটে, রাত্রি ওঠে রোমাঞ্চিয়া নভে ! জীবনের জয়গাথা গাহে মুগ্ধ মৃত্যুভয়হীন অধীর যৌবন-মদে ; রাধা শু্যামে আজি হোরী খেলা— বনে বনে শীর্ণ শাখা শু্যাম-রূপে উঠিছে শিহরি,’ মরণের বদন মলিন – জর কেহ মানিবে না, আজ সমবয়সীর মেলা— পল্পীপথে হুলাহুলি, উথলিছে পুলক-লহরী ! \ు রজনী গভীর হ’ল ; এ নির্জন নিরাল কুটারে এক জাগি, সমুখে সে যতদূর দৃষ্টি মোর ধায়— জ্যোৎস্নাম্বর তৃণভূমি, মাঝে মাঝে শ্বসিছে সমীরে তন্দ্ৰাহত ছায়া-তরু, দূরে দূরে প্রহরীর প্রায় । চাহিনু আকাশ পানে, মনে হ’ল এ-কোন স্বপন রচিছে নিশুতি-রাতি ?—হোলি খেলা পলকে হারাই । রাধার ফাগের থারি কোথা গেল, কে লইল হরি – শূন্ত করি সারা বৃন্দাবন শ্যামরূপহ্রদে বুঝি ডুবিয়াছে উন্মাদিনী রাই— নীল জলে জলে রূপ, ভেসে ওঠে সোনার গাগরী ! 8 ঢুলে আসে আঁখিপাত, যামিনীর মায়া-যবনিকা খুলে গেল ক্ষণতরে, ঘনতর অন্ধকারে ঘেরি’ ভুলাইল দেশ-কাল ; নিমীলিত নেত্র-কনীনিক ফুরিল অরূপ-রসে, নেপথ্যের নাট্যশালা হেরি’ ! ভুলে গেল্প নীলাকাশে হেম-কাস্ত কৌস্তুভ-আভাস— শ্যাম-দেহে লীনাঙ্গিনী রাধিকার বরণ-মাধুরী ; মনে হ’ল, উদ্ধে ওই অকম্পিত চন্দ্ৰাতপ-তলে —স্তব্ধ যেথা নিশার নিঃশ্বাস, যেন কারা মেলিয়াছে অভিজ্ঞান-তারক-অঙ্গুরী অতীতের, মৃত্যুর ময়ুরকষ্ঠ উত্তরীয় গলে । 岔 সহসা পশিল কানে শতাব্দীর সঙ্গীত-মৰ্ম্মর— আলোকের কুঞ্জে কুঞ্জে জাগিল কি শত পিকরব ! শুনিম্ন গাহিছে গাখী—পুরাতন ব্যথর নিঝর— চিরযুগজীবী কবি, বাঙ্গালার বাউল-বৈষ্ণব । সেই স্বর —যার রসে যুগযুগ গোঙাইল কাদি’ জীবন-পূর্ণিমানিশি, হেরি’ রূপ মনোহারিকার ‘নয়ন না তিরপিত, ঘুচিল না স্থচির বিরহ— বক্ষে চাপি, বাহুপাশে বাধি’ ! সেই স্বর –ভাষা যার বাণী-কণ্ঠে গজমোতিহার— ‘প্রেম সে চপল, থির এ জীবন দুরন্ত অসহ’!