পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা ] অমন ধারা বিশ্বেস হয় ? অার একটু কেঁদে উঠলেই সবাই দৌড়ে আস । আমি কি মারি ?” বকুলের অনেকক্ষণ তন্দ্রা ভাঙিয়া গিয়াছে । হইয়া সবই সে শুনিল, কিন্তু চুপ করিয়া রহিল । সন্তানের জন্য মায়ের অস্তর কঁাদিয় ওঠে কিন্তু নিরুপায় মাতার চোগের জলেই সব শেষ হইয়া যায় । ভাবিতে ভাবিতে দম আর্টু কাইয়া আসে–আবার কাশি ওঠে । কাশির শব্দে নরেন ছবির খাওয়া ফেলিয়াই উঠিয়া আসিয়া বকুলের কাছে বসিল । জিজ্ঞাসা করিল, “কষ্ট হচ্চে ?” বকুল বাষ্পরুদ্ধকণ্ঠে জবাব দিল, “আমার কষ্ট কে বুঝবে ? কেন আর জিগেস কর—” বলিয়াই কঁাদিতে কাদিতে পাশ ফিরিয়৷ মুখ লুকাইয়া শুইল । নরেন অপরাধীর মত চুপ করিয়া বসিয়া রহিল । উৎকর্ণ মৃত্যুর স্নানছায়া গাঢ়তর হইয়। আসিল । ডাক্তার, কবিরাজ, সন্ন্যাসী, ঠাকুরদেবতা সকলেই পরাস্ত হইল । সবাই"বোঝে কোন অাশাই নাই । কঙ্কালসার দেহখানি বিছানার সঙ্গে* একেবারেই যেন মিশিয়া গিয়াছে— চোখ-দুটির উজ্জলতা আরও বাড়িয়াছে। হঠাৎ দেখিলে ধেন কি রকমই মনে হয়—একটু ভয় ভয়ও করে । সারাদিন কেবল অনর্গল বকে—বকিয়াই যায় । বলে, “কি নিষ্ঠর গো–উ একটু কষ্টও হয় না ? এ কেমন লোক ” বলতে বলিতে কঁাদিয়া ফেলে, কাদিয়া বলে, “মাগে। আমায় কোথায় পাঠিয়ে দিলে,—এখানে আমি থাকৃতে পারব না—না—না—না—তারপর যেন স্বামীর উদ্দেশেই বলে, “ওগে, তুমি অমন কোরো না, সত্যি বলছি আমাকে ভুল বুঝে না—” যাহার কাছে বসিয়া থাকে তাহারী কিছুই বুঝিতে পারে না । ছবি গিয়া মায়ের কাছে দাড়ায় । একটু-গায়ে একটু মাথায় হাত দেয় । নরেন বলে, “ছবি, ওঘরে ষা ও । কোরো না ।” বকুল বলে, “থাক ন ও—” —না বিরক্ত করবে। >- هج الإحسسـدوان الاج الاج এখন বিরক্ত তৃণাঙ্কুর ১৯ ছবি একদিকে চলিযা যায়। কিন্তু গিয়াও থাকিতে পারে না। বার-বার দুয়ারের কাছে মুখ বাড়াইয়া দেখে, কি দেখে, সে-ই জানে, হয়ত তার সমস্ত অস্তর ওই ক্ষুদ্র দেহের ভিতর হইতে বাহির হইয়। মায়ের শয্যাপার্শ্বে পড়িয়া থাকিতে চায়, তাড়াইলেও যায় না । বকুল এক-একবার তার পানে তাকায়, ছবি ওই একটি দৃষ্টিতেই যেন আত্মহারা হইয় ওঠে । নিষেধমান ভুলিয়া গিয়া আবার আগাইয়া আসে, বকুল হাত বাড়াইয়া বোধ করি বা তার হাতখনি ধরিতে চেষ্টা করে, কিন্তু শিথিল হাতখানি ঝরাফুলের মত বিছানায় পড়িয়া যায়, হতাশায় বুকের ভিতর কান্নার সমুদ্র ফুলিয়া ফুলিয় ওঠে, ভাবে, আর হয়ত দেরি নাই! মৃত্যুর হিমম্পর্শ একটু একটু করিয়া দেহে ছড়াইয়া পড়িতেছে— কখন এক সময় সৰ্ব্বাঙ্গ একেবারে শীতল ও নিস্তরঙ্গ করিয়া রাখিয়া যাইবে । * * * * ভাবিতেও যেন কষ্ট ইয় এত তাড়াতাড়ি ! - এখনও ত আশ মিটে নাই –অপূর্ণতার বেদনা সারা বুকেই যেন খচখচ করিয়া বিধিতেছে। প্রভাতের প্রথম অরুণোদয়ে প্রভাতীর স্বরেই কি বিদায়-সঙ্গীত গাহিয়৷ যাইতে হইবে ? কিন্তু এই যে তৃণাঙ্গুর পৃথিবীর আঙ্গিনায় একটি দুটি পাতা মেলিয়া শু মিশল্পের সারিতে আসিয় দাড়াইয়াছে, তাহাকে ফেলিয়৷ কিছুতেই যে যাওয়া চলে ন! ! . কিন্তু যাইতেই হয় – ইচ্ছ। বা অনিচ্ছায় কিছু আসে যায় না । কঙ্কালসার ভগ্নদেহে কতদিনই বা ছিন্নতারে তড়িৎশক্তি ধরিয়া রাখা যায় মা । বকুলের প্রাণ যাই-যাই করিয়াও যায় নাই । রোগের যন্ত্রণ, অত্যাচারের মত প্রতিক্ষণ দুঃসহ বেদন দিয়াই চলিয়াছে, এ যন্ত্রণার চেয়ে মৃত্যুও হয়ত বাঞ্ছনীয়। এ যেন কোন এক অকরুণ বিচারকের দ গুদাম — অসহ্য ! হাত প! অবশ হইয়া গিয়াছে। চৈতন্য মাঝে মাঝেই লোপ পায় । এক-একবার স্বামীর দিকে তাকায়, আবার এদিক-ওদিক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে । দিনরাত কি যেন ভাবে, কি যেন দেখে । অচৈতন্য অবস্থায়ও প্রাণ থা কৈ ।