পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত ঐবিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় & বৎসর দুই কোথা দিয়া কাটিয়া গেল । অপু ক্রমেই বড় জড়াইয়া পড়িয়াছে, খরচে আয়ে কিছুতেই আর কুলাইতে পারে না । নানাদিকে দেন— কত ভাবে হুলিয়ার হইয়াও কিছু হয় না। এক পয়সার মুড়ি কিনিয়া দুই বেলা খাইল, নিজে সাবান দিয়া কাপড় কাচিল, লজেঞ্চুস ভুলিয়া গেল, কিন্তু হঠাৎ একদিন নব-আগস্তুক এক হিন্দুস্থানী হালুইকরের নতুন দোকানে তাহার পকেট হইতে সদ্যপ্রাপ্ত স্কলারশিপের টাকার যে ংশ উড়িয়া গেল—তাহার ভোজ-তৃপ্ত, প্রফুল্লমুখ বন্ধুদলের নিকট তাহা যতই সামান্য বলিয়া মনে হউক না কেন, তাহার নিজের পক্ষে সেটা আদৌ উপেক্ষার বিষয় হইতে পারে না। পরদিনই আবার বোডিংয়ে ছেলেদের দল চাদা করিয়া হালুয়া খাইবে। অপু হাসিমুখে সমীরকে বলিল—দু আন ধার দিবি সমীর, হালুয়া খাবো ?..ছু আন কোরে চাদী—ওই ওরা ওখানে করচে–কিস্মিস্ দিয়ে বেশ ভাল কোরে কোবৃচে— সমীরের কাছে অপুর দেন অনেক। সমীর পয়সা দিল না। প্রতি বার বাড়ী হইতে আসিবার সময় সে মায়ের যৎসামান্ত আয় হইতে টাকাটা আধুলিট প্রায়ই চাহিয়৷ আনে—ম না দিতে চাহিলে রাগ করে, অভিমান করে, সৰ্ব্বজয়াকে দিতেই হয় । - ইহার মধ্যে আবার পটু মাঝে মাঝে আসিয়া ভাগ বসাইয়া থাকে। সে কিছুই স্থবিধা করিতে পারে নাই পড়াশুনার। নানাস্থানে ঘুরিয়াছে, ভগ্নীপতি অৰ্জ্জুন চক্রবর্তী তো তাহাকে বাড়ী ঢুকিতে দেয় না, বিনিকে এ সব লইয়া কম গঞ্জনা সহ্ করিতে হয় নাই বা কম চোখের জল ফেলিতে হয় নাই ; কিন্তু শেষ পৰ্য্যস্ত পটু নিরাশ্রয় ও নিরালম্ব অবস্থায় পথে পথেই ঘোরে, যদিও পড়াশুনার আশা সে এখনও অবধি ছাড়ে নাই । অপু তাহার জন্য অনেক চেষ্টা করিয়াছে, কিছু সুবিধা করিতে পারে নাই।” দু তিন মাস হয়ত দেখা নাই, হঠাৎ একদিন কোখা হইতে পুটুলি বগলে করিয়া পটু আসিয়া হাজির হয়, অপু তাহাকে যত্ন করিয়া রাখে, তিন চারদিন ছাড়ে না, সে না চাহিলেও যখন যাহা পারে তাহার হাতে গুজিয়া দেয়—টাকা পারে না, সিকিট, দুয়ানিটা। পটু নিশ্চিন্দিপুরে আর যায় না—তাহার বাবা সম্প্রতি মারা গিয়াছেন—সংমা দেশের বাড়ীতে তাহার দুই মেয়ে লইয়া থাকেন, সেখানে ভাইবোন কেহই আর যায় না। পটুকে দেখিলে অপুর ভারী একটা সহানুভূতি হয়, কিন্তু ভাল করিবার তাহার হাতে আর কি ক্ষমতা আছে ? পৌষ মাসের প্রথমে অপুর নিজের একটু সুবিধা ঘটিল। নতুন ডেপুটীবাবুর বাসাতে ছেলেদের জন্য একজন পড়াইবার লোক চাই। হেড পণ্ডিত তাহাকে ঠিক করিয়া দিলেন। দুটি ছেলে পড়ানো, থাকা ও খাওয়া । দুই তিন দিনের মধ্যেই বোর্ডিং হইতে বাসা উঠাইয়া অপু সেখানে গেল। বোডিংয়ে অনেক বাকী পড়িয়াছে, সুপারিন্টেণ্ডেণ্ট তলে তলে হেডমাষ্টারের কাছে এসব কথা রিপোর্ট করিয়াছেন, যদিও অপু তাহ জানে না। বাহিরের ঘরে থাকিবার জায়গা স্থির হইল । বিছানা-পত্র গুছাইয়া পাতিয়া লইতে সন্ধ্যা হইয়। গেল। সন্ধ্যার পরে খানিকট বেড়াইয়া আসিয়া রাধুনী ঠাকুরের ডাকে বাড়ার মধ্যে খাইতে গেল। দালানে ঘাড় গুজিয়া খাইতে খাইতে তাহার মনে হইল একজন কে পাশের দুয়ারের কাছে দাড়াইয়া অনেকক্ষণ