পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৯২৮ যুদ্ধ আরম্ভ হয়, এবং ১৭৮১ সালের ১৯শে অক্টোবর ইংরেজ-সেনাপতি কর্ণওয়ালিস আত্মসমর্পণ করার পর যুদ্ধের অবসান হয়। সন্ধি হইতে আরও দুই বৎসর লাগিয়াছিল। যাহা হউক, যুদ্ধ চলিয়াছিল সাড়ে ছয় বৎসর । বিপক্ষকে কাবু করিতে পারিলে হিংসাত্মক সংগ্রামে জয়লাভ করা যায়। কিন্তু মহাত্মা গান্ধী তাহার প্রবর্তিত অহিংস সংগ্রামে সফলকাম হইতে চান, ইংরেজ-জাতি ও গবন্মেণ্টের হৃদয়ের পরিবর্তন দ্বারা। কিন্তু এই পরিবর্তনের এপর্য্যস্ত কোন লক্ষণ দেখা যাইতেছে না। তিনি মনে করেন, সত্যাগ্রহীদের নানাবিধ দুঃথে ইংরেজ-জাতির হৃদয় দ্রবীভূত হইবে। কিন্তু ভারতবর্ষের সমুদয় ঘটনার প্রকৃত সংবাদ ইংলণ্ডে না পৌছায়, অস্তত: শীঘ্র না পৌছায়, এই উপায়ে হৃদয় পরিবর্তন হইবে কি'না, অথবা কথন হইবে, বলা যায় না। ভারতীয় উদারনৈতিক ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের লোকের সত্যাগ্রহ নীতি অবলম্বন করেন নাই। র্তাহারা যুক্তিতর্কের দ্বারা ইংরেজকে বুঝাইয়া স্বরাজ পাইতে চান। যুক্তিতর্ক প্রায় পঞ্চাশ বৎসর ধরিয়া চলিতেছে ; এপর্য্যন্ত ইংরেজকে কেহ ইহা বুঝাইতে পারে নাই; যে, ভারতবর্ধের স্বরাজ পাওয়া উচিত। যে অল্পসংখ্যক ইংরেজ ভারতবর্ধের স্বরাজ পাওয়ার পক্ষে মত প্রকাশ করিয়াছেন, তাহার বেসরকারী লোক। যখন বৰ্ত্তমান প্রধান মন্ত্ৰী মিঃ ম্যাকডোন্যান্ড বেসরকারী লোক ছিলেন, তখন তিনি ভারতীয় স্বরাজের পক্ষে মত প্রকাশ করিয়াছিলেন। কিন্তু তিনি ও র্তাহার দলের লোকেরা “গবন্মেণ্ট” হইয় পড়িবার পর আর বলিতেছেন না, যে, তাহারা ভারতবর্ষকে স্বরাজ দিবার জন্য নিশ্চয়ই পালেমেণ্টে আইনের খসড়া পেশ করিবেন। অতএব তর্কযুক্তির পথে কখন উদেখা সিদ্ধি হইবে, বলা যায় না। সত্যাগ্রহ এবং তর্কযুক্তি ছাড়া আর একটা অহিংসাত্মক পথ আছে। তাহা ভিক্ষ । কিন্তু ভাহাতে বিশ্বাসবান কোন ভারতীয় রাজনৈতিক দল আছে বলিয়া আমরা জানি না। ব্যক্তিগতভাবে কাহারও কাহারও এরূপ বিশ্বাস থাকিতে পারে। উদারনৈতিক দলের বিশ্বাস এইরূপ প্রবাসী-আশ্বিন, ১৩৩৭ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড বলিলে তাহাদের প্রতি অবিচার করা হইবে। র্তাহাদের প্রসিদ্ধতম নেতা শ্ৰীযুক্ত শ্ৰীনিবাস শাস্ত্রী সেদিন বিলাতে এক বক্তৃতায় বলিয়াছেন, ট্রাবল ( "trouble" ) উৎপন্ন না করিলে রাষ্ট্রিক উন্নতি লাভ করা যায় না। ট্রাবলের মানে বিরক্ত উত্ত্যক্ত করা, অস্ববিধায় ফেলা, কষ্ট দেওয়া ইত্যাদি । তিনি ঠিক্‌ কি অর্থে উহা ব্যবহার করিয়াছিলেন জানি না, কিন্তু ইহা বলিয়াছিলেন, যে, বর্তমান সত্যাগ্রহ প্রচেষ্টা ঠিক রকমের ট্রাবল নহে ; অথচ ঠিক্‌ রকমের ট্রাব লট যে কি,তাহা তিনি বলেন নাই। বিলাতী জিনিষ না কিনিলে ইংরেজদিগকে অসুবিধায় ফেলা হয় বটে। এই চেষ্টাকে কেহ হিংসাত্মক বলিতে পারেন না । কিন্তু বর্জনকারীদের মনে ইংরেজ বণিকদের উপর রাগ থাকিলে ইহা আধ্যাত্মিক অর্থে সম্পূর্ণ অহিংসাত্মক ন হইতে পারে—যদিও তাহা হইলেও সাধারণ অর্থে ইহা নিশ্চয়ই অহিংসাত্মক । বিলাতী পণ্য বর্জনের পথে চলিলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের সিদ্ধি কত দিনে হইবে, বা চেষ্টার বিফলতা কত দিনে বুঝা যাইবে, কেহ বলিতে পারে না । বিলাতীপণ্যবর্জন ও স্বরাজ কাহারও কথায় বা কাজে যদি এইরূপ অভিপ্রায় প্রকাশ পায়, যে, স্বরাজ লব্ধ হইলেই বিলাতীপণ্যবর্জন নীতি পরিত্যক্ত হইবে ও হওয়া উচিত, তাহা হইলে তিনি ভ্রান্ত । স্বরাজ লব্ধ হইবার পর “বয়কট” কথাটার ব্যবহার পরিত্যক্ত হইতে পারে, কিন্তু স্বদেশী পণ্যদ্রব্য উৎপাদন, ক্রয় ও ব্যবহার কখনও পরিত্যক্ত হইতে পারে না। এবং স্বদেশী যে-যে রকম জিনিষ কেহ কিনিবেন, তিনি বিদেশী সেই সেই রকম জিনিষ নিশ্চয়ই কিনিবেন না ; স্বতরাং স্বদেশী জিনিষ ব্যবহার বিদেশী জিনিষ পরিহারের উল্টা পিঠ চিরকালই থাকিতে পারে। অতএব স্বরাজ পাইলেই আমরা স্বচ্ছন্দে খুব বিলাতী জিনিষ কিনিতে থাকিব, সাক্ষাৎ বা পরোক্ষ ভাবে ইংরেজদের মনে এরূপ ধারণা জন্মান কাহারওঁ উচিত নহে।