পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

సిలరి বিপরীত হওয়া ভাল নয়। আপত্তিকারীরা অবশু বলিতে পারেন, ভারতবর্ষের সরকারী ব্যবস্থা এখনও এই মতের অনুযায়ী হয় নাই এবং এদেশে অনেক নিরপরাধ লোকও আইন ও শৃঙ্খলা রক্ষা এবং অন্ত উপলক্ষ্যে হতাহত হয় । কিন্তু ভারতবর্যের অবস্থা যাহাই হউক, আমরা শ্রেষ্ঠ যাহা তাহারই আলোচন ও অনুবর্তন করিতে চাই । লৌকিক ব্যবহারে কোন জাতি বা কোন গবন্মেন্টের দ্বারাই এ পর্য্যস্ত শাস্ত্রের ও মহাপুরুষদের উচ্চতম উপদেশ পালিত হয় নাই। তথাপি তাহ পালনীয় মনে করি বলিয়া উল্লেখ করিতেছি । মহাভারতে উপদেশ আছে, প্রেমের দ্বার অপ্রেমকে পরাজয় করিতে হইবে ; বুদ্ধদেবের উপদেশও তাই । যীশু খ্ৰীষ্টের উপদেশও সেইরূপ । রাজনৈতিক বিষয়ের আলোচনার মধ্যে এইরূপ কথা তোলায় অনেকে হাসিবেন । কিন্তু হাসিলেও, মহাপুরুষেরা যাহা’ বলিয়াছেন, তাহা সত্য বলিয়া স্মরণ করিতে হইবে । বিশেষ করিয়া তাহা স্মরণ করিতে হইবে এইজন্য, যে, জগতের ইতিহাসে এই প্রথম ভারতবর্ষে অহিংসার পথে স্বাধীনতালাভের চেষ্ট হইতেছে। মহাপুরুষদের বাণী মহাত্মা গান্ধীর জীবনে মূৰ্ত্তি পরিগ্রহ করিয়াছে, এখন আর তাহা পুস্তকের পৃষ্ঠায় আবদ্ধ নাই । সত্যগ্রহ অহিংসার উপর প্রতিষ্ঠিত বলিয়া এবং হাজার হাজার সত্যাগ্রহী ভীষণ যন্ত্রণ সত্ত্বেও প্রতিশোধের চেষ্টা করেন নাই বলিয়া ভারতবর্ষ বিদেশে সন্মানিত হইতেছে। এবং ভারতবষের আদর্শ সম্মানিত হইতেছে বলিয়াই আমাদের যাহারা বিরোধী তাহারা জগতকে ইহা বুঝাইতে যথাসাধ্য চেষ্টা করিতেছে, যে, হিংসাত্মক কাজ ভারতে যাহা কিছু হইতেছে, তাহা সত্যাগ্রহীদের দ্বারাই হইতেছে । শ্রেষ্ঠ পথ যাহা, তাহা শ্রেষ্ঠ পথ বলিয়াই অবলম্বনীয়। তাহার উপর, মহাত্মা গান্ধী যখন তাহার সাধ্যায়ত্ততা প্রমাণ করিয়া দিয়াছেন, তখন তাহ আরও অবলম্বনীয় । । উপরে যাহা লিখিলাম, তাহা মহাপুরুষদের উপদেশ ও প্রবাসী---আশ্বিন, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, »ལ་ બંજી আচরণ অনুসারে লিখিলাম। নিজের সাধন এবং জীবনের অভিজ্ঞতা হইতে এই সব কথা লিখিতে পারিলে অধিকতর তৃপ্তিলাভ করিতাম, এবং আরও জোরের সহিতু কথা কহিতে পারিতাম। কিন্তু তাহ পারিলাম না বলিয়া মহাপুরুষদের বাণী ও দৃষ্টাস্তের মূল্য কম হইয়৷ যাইতে পারে না। র্যাহারা আপনাদিগকে প্র্যাক্টিক্যাল মনে করেন, কাজ উদ্ধার কিসে হয় কেবল তাহাই দেখিতে চান, মহাপুরুষদের উপদেশ শুনিতে চান না, তাহারা বলিবেন, “অহিংস চেষ্টার দ্বারা দেশ স্বাধীন হইয়াছে, তাহার দৃষ্টান্ত দেখান।” তাহার উত্তরে আমরা বলি, অতীত ইতিহাসে যাহা ঘটে নাই, তাহ ঘটতে পারে না, কেন মনে করেন ? দু-হাজার, এক হাজার, পাচশত, একশত, পঞ্চাশ বৎসর আগে যাহা ঘটে নাই, আজকাল সেরূপ অনেক ব্যাপার ঘটিতেছে । সুতরাং অহিংস চেষ্টা সফল হইবে না, অতীত ইতিহাস হইতে তাহ প্রমাণ হইতে পারে না। যাহা করিতে চাই, আত্মা তাহাতে সায় দেয় কি না দেখুন। শান্ত সমাহিত ধীরভাবে চিস্তার পর যাহা শ্রেষ্ঠ বলিয়া বুঝিব, নিশ্চয়ই সেই পথে সিদ্ধিলাভ হইবে— যদিও তাহাতে বিলম্ব হইতে পারে। র্যাহার। ঐতিহাসিক প্রমাণ চান, র্তাহাদিগকে জিজ্ঞাসা করি, দু-এক জন, দু-দশ জন, বিশ-পঞ্চাশ জন বিদেশী বা স্বদেশী সরকারী কৰ্ম্মচারীকে বধ করিয়া কোনও পরাধীন দেশকে স্বাধীন করা গিয়াছে, তাহার একটাও ঐতিহাসিক দৃষ্টাস্ত দেখাইতে পারেন কি ? ইংরেজদের দৃষ্টান্তই ধরুন। তাহারা যত যুদ্ধ করিয়াছে, তাহাতে তাহাদের অনেক সেনানায়ক ও সাধারণ সৈনিক মারা পড়িয়াছে। কিন্তু কোন যুদ্ধেই মৃত লোকদের স্থান পূরণের জন্য ভয়ে অন্য কেহ অগ্রসর হইতেছে না, এরূপ শুনা যায় নাই। ইংরেজরা অন্ত জাতিদের চেয়ে সাহসী, বলিতেছি না । যে-কোন জাতি যুদ্ধ করে, তাহাদেরই অনেক লোক মরে, আবার মৃত লোকদের জায়গায় অন্যেরা আসিয়া দাড়ায় । ইংরেজ কৰ্ম্মচারীদিগকে মারিয়া যাহারা ইংরেজ মহলে আতঙ্ক জয়াইতে চান, র্তাহারা জানিবেন, ইংরেজ কৰ্ম্মচারীরা মনে করিবে