পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংথ্য } তদুপরি’। উত্তর-পশ্চিমে পৰ্ব্বতের নীচে একটা স্থান দেখাইয়া বলিল ঐ চক্রাট সহর, ঐখানে একটী ক্যান্টনমেন্ট আছে ; মুণ্ডরী হইতে একটা ইটাে পথ চক্রাটা হইয়া সিমলা পর্য্যস্ত গিয়াছে। অার একটা পথ টিহরি হষ্টয়া গঙ্গোত্রী গিয়াছে । অনেক সাহেব বিস্তর লোকজন সঙ্গে লইয়৷ মুগুর হইতে গঙ্গোত্রী, যমুনোত্রী, কেদারনাথ ও বদরীনাথ প্রভৃতি দেখিয়া আসেন এবং ফটো লইয়৷ আসেন । দীর্ঘ ও অল্পবিস্তার মুগুরী ও লাণ্ডেীর সহরের সকল স্থানই স্পষ্ট দেখা যাইতে লাগিল । উহার দক্ষিণে দুন উপত্যক, তাহার দক্ষিণে শিবালিক পৰ্ব্বতশ্রেণী । একদিকে হিমালয় ও অন্ত দিকে শিবালিক, মধ্যে স্বাস্থ্যকর ও উর্বর দুন উপত্যকা ( উচ্চতা সাগরপৃষ্ঠ হইতে ২৩০০ ফুট মাত্র । ) শিবালিক পৰ্ব্বতের দক্ষিণেও দৃষ্টি চলে ; সেখানে রুড়কী ও সাহারাণপুর পর্য্যন্ত দেখা যায়। দক্ষিণপশ্চিমে যমুনার জল স্বৰ্য্যকিরণ-সম্পাতে ঝকঝক করিতে লাগিল। দক্ষিণ-পূৰ্ব্বে একটা পাৰ্ব্বত্য নদী এবং রেললাইন হৃষিকেশ ও হরিদ্বার অভিমুখে চলিয়া গিয়াছে। কিন্তু সৰ্ব্বাপেক্ষ সুন্দর দেখিতে এই দুন উপত্যক। কে যেন একটা দেশের ম্যাপ চক্ষের সম্মুখে বিস্তৃত করিয়া রাখিয়াছে। ঐ আঁকাবাক রাস্তাট ধরিয়া আমরা ডেরাদূন হষ্টতে রাজপুর আসিয়াছিলাম ; ঐ বৃক্ষপুঞ্জের দ্যায় স্থানট ডেরাদুন সহর ; ঐ সকল মাঠ ; ঐ সকল বৃক্ষাচ্ছাদিত গ্রাম ; এইট শুষ্কপ্রায় পাহাড়ী নদী, গর্ভের মধ্যে একটু জল ঝির ঝির করিয়া বহিতেছে । সমতল উপত্যকার অব্যবহিত পরেই হিমালয়ের প্রথম শিখর। এই মুণ্ডরী পৰ্ব্বত থাড়া ৫০০০ ফুট উঠিয়াছে। কয়দিনের মত একটা গাড়োয়ালী ব্রাহ্মণ চাকর রাথিয়ছিলাম। সে ভাত ডাল রাধিত, ফরমায়েস থাটিত এবং বাসন মাঞ্জিত । সে যথার্থ ব্রাহ্মণ কি না বলিতে পারি না, তবে তাহার উপবীত দেখিয়াছিলাম বটে। তাহার প্রধান পেশা ডাণ্ডি বহন । তাহাকে খোরাক ও প্রতিদিন ছয় আনা হিসাবে দিতে হইত। লোকটী কদাকার নহে ; তাহার মুখে আর একটু বুদ্ধির লাবণ্য থাকিলে তাহাকে একজন স্বত্র পুরুষ বলা ভ্রমণ-কাহিনী ১১৩ যাইতে পারিত। তাহার নিকট শুনিলাম মুগুরীর যত । কুলি সকলে গুর্থ এবং যত ডাণ্ডি-বেহার সমস্ত গাড়োয়ালী। গুর্থীগণের শারীরিক বল সম্বন্ধে তাহার অগাধ বিশ্বাস । সে বলিল “উহার যেরূপ এক মণ দেড় মণ বোঝা পিঠে করিয়া পাহাড়ে উঠে তাহা গাড়োয়ালীর চাড়ে হইবে नां ।” বলবান ও সাহসী গুর্থ অতি সহজে ভীরু কুমায়ুনী ও গাড়োয়ালীকে পরাজিত করিয়া ভূটান হইতে কাশ্মীর পৰ্য্যস্ত সমস্ত পাৰ্ব্বত্য প্রদেশ অধিকার করিয়াছিল । এই গাড়োয়ালী ব্রাহ্মণ ও হৃষিকেশের সেই মাড়য়ারী ব্রাহ্মণের চীনবৃত্তির বিষয় ভাবিতে ভাবিতে কত কথা মনে আসিতে লাগিল । বর্ণাশ্রম ধৰ্ম্মের আজ কি শোচনীয় অধঃপতন ! ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয় এক্ষণে কুলি মজুর, বা চাকর নফর। যাহারা বর্ণাশ্রম ধৰ্ম্ম পুনঃপ্রতিষ্ঠা করিতে চাহেন তাহারা কি এ সকল কথা চিন্তা করেন না ? ধৰ্ম্মশালার ম্যানেজার পণ্ডিত হরনারায়ণ ডেরাদুনবাসী আর্য্যসমাজী । এই ধৰ্ম্মশালাটার জন্ত ভদ্রলোক বিশেষ পরিশ্রম করিয়া থাকেন । তিনি মুগুরীর একটা ব্যাঙ্কে কৰ্ম্ম করেন । প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় আমাদের খবর লইতেন । এই আদর্শ ভদ্রলোকটীর নিকট আমরা অনেক বিষয়ে ঋণী আছি । মুগুরীতে জনকয়েক বাঙালী অধিবাসী আছেন। বাস্তবিক, কেরাণী, শিক্ষক, উকিল, ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার রূপে দুই চারি জন বাঙালী নাই এরূপ বড় সহর ভারতবর্ষে নাই বলিলে অত্যুক্তি হয় না । কোয়েটাতে বাঙালী কেরাণী আছেন, মুলতানে বাঙালী উকিল আছেন, বাসীতে বাঙালীর ডাক্তারখানা আছে এবং খাণ্ডোয়াতে বাঙালী শিক্ষক আছেন । বাঙালী অতিথি পাইলে এই সকল প্রবাসী বাঙালী যথেষ্ট আদর যত্ন করিয়া থাকেন। আমরা কিন্তু কোনও ভদ্রলোককে বিত্রত করা অপেক্ষা ধৰ্ম্মশালায় বা কালীবাড়ীতে অবস্থান করা পছন্দ করি । e ঐসতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়।