পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্য। ] ব্ৰহ্ম ও আত্মাকে নিত্য পদার্থ বলিয়া প্রচার করিয়াছিলেন, এবং এইখানেই মহাবীরের প্রতিদ্বন্দ্বী বুদ্ধ, যে উপদেশ দিয়াছিলেন তাহার সার কথা এই, যে, কিছুষ্ট নিত্য নহে। বাহজগতের এবং আমাদের মনোজগতের গভীরতার মুধ্যে একটি অদ্বিতীয় নিতা সত্য আছেন, উপনিষৎকারগণ সেই বৃহৎ সত্যটি উপলব্ধি করিয়াছেন। সেই সত্তার সহিত অন্ত সমস্তের যে কি সম্বন্ধ সে বিষয়ে তাহারা সুস্পষ্টরূপে কিছু বলেন নাই । কিন্তু কোন পূৰ্ব্ব সংস্কার না লষ্টয়া যে কেন্ঠ উপনিষদ পড়িবেন তিনিই দেখিবেন যে উপনিষদ প্রাকৃতিক জগতের সত্যতাকে অস্বীকার করেন নাই। কিন্তু নিত্য ও অনন্তস্বরূপ ব্ৰহ্মতত্ত্বের বিরুদ্ধে বুদ্ধ আত্মবাদকে গুরুতর ভ্রম বলিয়া প্রচার করিয়াছেন । তাহার মতে কাঠিন্ত শৈত্য প্রভৃতি কতকগুলি ধৰ্ম্মমাত্রই আছে কিন্তু সেই ধৰ্ম্মগুলি কোন ধৰ্ম্মীকে আশ্রয় করিয়া নাই। জৈনেরা বলেন সৎ পদার্থের তিনটি গুণ আছে :-- উৎপত্তি, ধ্রুবতা, ও বিনাশ । ( সদ্যুৎপাদ-ঞ্জেীব্য-বিনাশযুক্তম্। ) তাহারা আপন মতবাদকে ‘অনেকান্তবাদ’ বলিয়া অভিহিত করেন। তাহারা বলেন জগতে যত কিছু দ্রব্য আছে তাহার মূল বস্তুটি নিত্য কিন্তু এই বস্তুটির গুণগুলি উৎপত্তি ও বিনাশশীল। বস্তু (matter) বস্তুরূপেই চিরকাল থাকে। যেমন মৃত্তিক বস্তুরূপে নিত্য, কিন্তু ঘটৰূপে তাহার উৎপত্তি ও ধ্বংস আছে । যে মতবাদের উপর জৈন-ধৰ্ম্মতত্ত্ব প্রধানতঃ নির্ভর করে তাহার নাম স্তাদ্বাদ । জৈনেরা বলেন যে এই স্তাদ্বাদ কুতর্কের অরণ্য হইতে আমাদিগকে উদ্ধার করে । স্তাদ্ধাদের সার কথা এই যে সৎ পদার্থ যখন উৎপত্তি, ধ্রুবতা ও বিনাশ এই তিনটি পরস্পরবিরোধী গুণযুক্ত তখন কোনো দ্রব্য সম্বন্ধে যে কোনো প্রতিজ্ঞাই (proposition) করা যাকৃ না তাহাতে তাহার অনির্দেগুত দূর হইবে না। অর্থাৎ সেটি একদিক দিয়া সত্য অথচ অন্ত দিক দিয়া সত্য নহে। এই মত অনুসারে তত্ত্বজ্ঞানঘটিত প্রতিজ্ঞার সাত প্রকারের রূপ আছে এবং প্রত্যে কটিতেই এই ‘স্তাৎ’ পদের যোগ আছে ; যথা, স্তাদস্তি সৰ্ব্বম্, স্তান্নাস্তি সৰ্ব্বম্ (অর্থাৎ সমস্ত আছেও বা, সমস্ত নাইও বা । ) স্থাৎ শব্দের অর্থ-—“ছবেও সংকলন ও সমালোচন—জৈনধৰ্ম্ম-তত্ত্ব }')(t বা” । তাহাকে “কথঞ্চিৎ” এই শব্দের দ্বারাও কখনো কখনো ব্যাখ্যা করা হয়—“যেমন ঘটটি কথঞ্চিৎ আছে” এবং “ঘটটি কথঞ্চিৎ নাই” অর্থাৎ তাঙ্ক। ঘটরাপে আছে কিন্তু বস্ত্ররূপে নাই। অর্থাৎ তাহার মধ্যে, আছে এবং নাই এই দুই ক্রিয়াপদেরই স্থান আছে ; সুতরাং থাক এবং না থাকা কোনটাই তাহার পক্ষে একান্ত নহে। এই কারণেই ইহাকে অনেকান্তবাদ কহে । ঘট যে কেবল ঘটমাত্র, তাহা বস্ত্র নহে, এরূপ বাহুল্য উক্তির কারণ এই যে, বেদান্তীরা বলে যে, সকল দ্রব্যের মধ্যেই একই সত্তা আছে, আর দ্বিতীয় কিছু নাই। সেই জষ্ঠ জৈনদর্শনে দ্রব্য মাত্রেরই দুইটি পরস্পর সম্বন্ধবিশিষ্ট লক্ষণ স্বীকার করা হয়, অস্তি এবং নাস্তি ; তাহার আর একটি তৃতীয় লক্ষণ আছে তাহার নাম অবক্তব্য। কারণ, যেহেতু সৎ এবং অসৎ একই কালে একই দ্রব্যকে আশ্রয় করিয়া আছে এবং যেহেতু এরূপ পরস্পরবিরোধী গুণের একত্র সমাবেশ কোন ভাষার দ্বারাই প্রকাশ করা যাইতে পারে না, এই জন্ত দ্রব্য মাত্র সম্বন্ধে “আবক্তব্য” এই বিশেষণ প্রয়োগ করা হইয়া থাকে। এই তিন লক্ষণের বিচিত্র যোগাযোগের দ্বারাই স্ত্যাদ্ধাদের সপ্তভঙ্গী অর্থাৎ সাতটি প্রতিজ্ঞা নিৰ্ম্মিত হইয়াছে । সাংখ্যযোগের সহিত জৈনদর্শনের কি সম্বন্ধ সে বিষয়ে আমি এখনও কিছু বলি নাই। ইহাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগ আছে বলিয়া আমরা আশা করিতে পারি, কেন না এই দুই দর্শনই শ্রমণ নামধারী সন্ন্যাসীদের ( ইহাদের আধুনিক নাম যোগী ) হইতে উৎপন্ন হইয়াছে। ব্রাহ্মণ, জৈন ও বৌদ্ধ-সম্প্রদায়ের যোগসাধনা পরস্পর সম্বন্ধযুক্ত, স্বতরাং ইহাদের মূল যে একই তাহ প্রমাণিত হইয়াছে। সাংখ্য বলেন পুরুষ অর্থাৎ আত্মাসকল নিত্য ও নিৰ্ব্বিকার, প্রকৃতি পরিবর্তনশীল । সাংখ্য-মতে পুরুষ বা আত্মা ভিন্ন অন্ত সমস্তই প্রকৃতি হইতে জাত। জৈনেরাও বলেন যে অর্থাৎ আত্মা ব্যতীত সমস্তই পুদগল হইতে উৎপন্ন— এই পুদগল বস্তু একই কিন্তু ইহা সৰ্ব্বপ্রকার দ্রব্যেই পরিণত হইতে পারে। অতএব দেখা যাইতেছে সাংখ্য এবং জৈনদর্শন একই প্রকার ধারণা লইয়া মুরু করিয়া পরে ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করিয়াছে। সাংখ্যদর্শনে বলে একটি ffo