পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] আবিষ্কারের পর পূৰ্ব্বোক্ত জীবাণু-নাশক আলোকপাত করিয়া নর্দমা প্রভৃতির গলিত আবর্জনাগুলিকে শোধন করিবার এক নূতন বিধি প্রচলিত হইয়াছে। স্ববিখ্যাত ফরাসী-বৈজ্ঞানিক বেকেরেল ( Becquerel ) সাহেব ইহা দেখিয়া বলিতেছেন, আরেনিয়স সাহেব অপর গ্রহনক্ষত্রে যে স্বতঃজনন স্থাকুমান করিয়াছেন, তাছাকে সত্য বলিয়া মানিয়া লইলে, এবং আলোকের চাপে সেই সকল স্বতঃজাত জীবের আণুবীক্ষণিক বংশধরগণ পৃথিবীতে আসিয়া পড়িতেছে বলিয়া স্বীকার করিলে, গোড়ায় একটা প্রকাও গলদ থাকিয়া যায়। মহাকাশের সর্বাংশই সেই জীবাণুনাশক আলোকতরঙ্গে পূর্ণ রহিয়াছে, সুতরাং শুষ্ক ও প্রায় নির্জীব জীবাণুগুলি যখন আকাশের ঘোর শীতের ভিতর দিয়া পৃথিবীর দিকে ছুটিয়া আসে, তখন সেই আলোকরশ্মির ংস্পর্শে তাহাদের জীবনাস্ত হুইবারই সম্ভাবনা অধিক । এক সৌরজগতের আকাশই আলোকময় নয়। সমস্ত ব্ৰহ্মাণ্ডকে জুড়িয়া কোট কোটা চন্দ্রস্থৰ্য্যের আলোক সৰ্ব্বদ আনাগোনা করিতেছে, এবং এই সকল আলোকে জীবাণুনাশক রশ্মিরই পরিমাণ অধিক । সুতরাং অতি দুর জ্যেতিষ্কের জীব আলোকের চাপে যে, সজীব অবস্থায় ভূতলে পড়িবে তাহার সম্ভাবনা নাই । লোক-লোকান্তরকে সংযুক্ত করিয়া আলোকধারা যে সেতু রচনা করিয়াছে, তাহা অবলম্বন করিয়া জীব যাওয়া আসা করিতে পারে না। আচাৰ্য আরেনিয়ুস ও বেকেরেল, উভয়েই আধুনিক বৈজ্ঞানিকদিগের নেতা এবং মহা পণ্ডিত । এই বিতর্কের মীমাংসার পর সিদ্ধাস্তটি কি প্রকার আকার গ্রহণ করিবে, তাহা এখন বলা যায় না। প্যারিসের প্রধান বৈজ্ঞানিক ofist" (Academie des Sciences) est Istritast লইয়া সম্প্রতি খুব আলোচনা হইয়া গিয়াছে। ২ । জ্যোতিষীর মৃত্যু । গত কয়েক মাসের মধ্যে ইটালি ও জৰ্ম্মানির দুই জন বিখ্যাত জ্যোতিষীর মৃত্যু হইয়াছে। উভয়েই খুব বৃদ্ধ হইয়াছিলেন, এবং বিধাতা যে গুরু কর্তব্য র্তাহাদের উপর গুস্ত করিয়াছিলেন, তাহ সুসম্পন্ন করিয়া উভয়েই কোলাহলময় জগতের এক নিভৃত প্রাস্তে বসিয়া মৃত্যুর প্রতীক্ষা করিতে ংকলন ও সমালোচন—জ্যোতিষিক যৎকিঞ্চিৎ ) లిసి ছিলেন । সুতরাং এই মৃত্যুতে শোক করিবার কিছুই নাই । ইহার যে কঠোর সাধনা করিয়া গিয়াছেন, তাহার ফল মানবজাতি চিরদিন ভোগ করিতে থাকিবে। কৰ্ম্মীর জীবনের বোধ হয় ইহাই চরম সার্থকতা । ইটালীয় জ্যোতিষী সিয়াপেরেলি (Schiaparelli) প্রায় অৰ্দ্ধশতাব্দী পূৰ্ব্বে কাৰ্য্যক্ষেত্রে অবতীর্ণ হইয়াছিলেন। মিলান মানমন্দিরের সহকারী জ্যোতিষীরূপে কিছুকাল কাজ করিয়া ইনি ধূমকেতু ও উত্ত্বাবর্ষণ লইয়া দীর্ঘকাল গবেষণা করেন। ধূমকেতুর কক্ষ ভেদ করিবার সময়েই যে পৃথিবীতে অধিক উল্কাবর্ষণ হয়, এই তত্ত্ব, সিয়াপেরেলিরই প্রধান আবিষ্কার । অপর জ্যোতিষিগণ এই অদ্ভুত আবিষ্কারের সমাচার পাষ্টয়া মহা বিতর্কের সূত্রপাত করিয়াছিলেন। কিন্তু শেষে সিয়াপেরেলির আবিষ্কারই সত্য বলিয়া প্রতিপন্ন হুইয়াছিল । প্রতিদ্বন্দ্বী পণ্ডিত-সম্প্রদায় যুবক আবিষ্কৰ্ত্তাকে তাহাদের নেতৃত্বের আসনে বরণ করিয়াছিলেন । সিয়াপেরেলিও এই আসনের মর্যাদা নব নব আবিষ্কার দ্বারা শেষ পর্য্যস্ত অক্ষুণ্ণ রাখিয়াছিলেন। আগষ্ট মাসের উল্কাবর্ষণ যে ১৮৬২ সালের ধূমকেতুর দেহচু্যত পিণ্ডগুলি দ্বারা সংঘটিত তাহা ইনিই সুস্পষ্ট দেখাইয়াছিলেন । ইহার পর এপ্রিল ও নবেম্বর মাসের উল্কাপাতের সঙ্গে এক একটি সাময়িক ধুমকেতুর সম্বন্ধ একে একে আবিষ্কার হইয়াছিল । এষ্ট সকল গবেষণা ও আবিষ্কারের জন্ত ১৮৭২ সালে সিয়াপেরেলি ইংলণ্ডের আইনমিকাল সোসাইটির সুবর্ণপদক প্রভৃতি পাইয়৷ অশেষ প্রকারে দেশ বিদেশে সম্মানিত হইয়াছিলেন । গত ১৮৭৭ সালে মঙ্গলগ্রহ পৃথিবীর নিকটবৰ্ত্তী হইলে সিয়াপেরেলির পর্যবেক্ষণকুশলতার এক নূতন পরিচয় পাওয়া গিয়াছিল। ইনি মঙ্গলগ্রহের উপরে কতকগুলি রেখাময় চিকু দেখিয়া সেগুলিকে মঙ্গলের খাল বলিয়া প্রচার করিয়াছিলেন । এই আবিষ্কার জ্যোতিষীমহলে যে বিতর্কের স্বচনা করিয়াছিল, তাহার আজও অবসান হয় নাই। আজকাল জগতের বৃহৎ মানমন্দিরগুলির শত শত দূরবীক্ষণ মঙ্গলের দিকে সংযুক্ত থাকিয়া প্রতিবৎসরই যে নব নব তথ্য সংগ্ৰহ করিতেছে, সেগুলিকে সিয়াপেরেলির আবিষ্কারেরই ফল বলা যাইতে পারে ।