পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা | খেলিয়া যায় তেমনি করিয়া তাহার মাথার ভিতব একটা মতলব হঠাৎ থেলিয়া উঠিল। হঁ, এই একমাত্র উপায় বটে ! ইহাই সব চেয়ে সহজ ও সরল পথ ;– হৌক তাঙ্গ জঘন্ত । মনস্তত্ত্বেৰ সুহ্মতা লষ্টয়া নাড়াচাড়া করিয়া আৰ কোনো ফল নাই ;–এখন চাই কাজ—শুধু কাজ ! আর তিলমাত্র পিলস্ব না করিয়া বাটি তখনই ঘর হইতে বাহির হইয়া পড়িল । যে কাজ করিতে উদ্যত হইয়াছে তার জন্ত তাহার নিজের প্রতি অত্যন্ত ঘৃণা বোধ ইষ্টতে লাগিল বটে, কিন্তু সে ঘৃণাকে সে কিছুতেই আমল দিতে চাঙ্কিল না । তখন রাত্রি সাড়ে দশটা ৷ তাড়াতাড়ি একথান গাড়ি ডাকিয়া ইভাদের বাড়ীর ঠিকানায় যাইতে বলিল । বলিতে গিয়া নিজের গলার করুণ কোমল স্বর শুনিয়া সে নিজেই চমকিয়! হাসিয়া উঠিল—সে স্বর তো তাহার স্বাভাবিক স্বর নয়, সে যেন নাট্যশালার বিশ্বাসঘাতকের ভূমিকা অভিনেতার বহু যত্নে শেখা কণ্ঠস্বর ! সে তাড়াতাড়ি গাড়ীর মধ্যে প্রবেশ করিয়া একটা কোণ ঘেঁসিয়া বসিল-কঁাধ দুটা কান পৰ্য্যন্ত তুলিয়া দিয়া অৰ্দ্ধনিমিলিত নেত্রে বাহিরের অন্ধকারের কুহেলিকার পানে চাহিয়া বসিয়া রহিল ;—তাহার হৃদয়ের অন্তরতম প্রদেশ হইতে একটা বিষাদ ঘনীভূত হইয়া উঠিতে লাগিল । ইভাদের বাড়ীর কাছাকাছি হইলে সে গাড়ী হইতে নামিয়া পড়িল, এবং কিছুদূর পদব্রজে গিয়া বাড়ীর দরজায় ধাক দিল । অনেকক্ষণ কোনো সাড়া পাওয়া গেল না । সেই রুদ্ধ দরজার বাহিরে নিস্তব্ধ অন্ধকারে অপেক্ষা করিতে করিতে তাহার মনে হইতে লাগিল সে যেন অনস্তকাল হইতে একটা কুহেলিকাচ্ছন্ন দারুণ হতাশার বিষন্নতার মাঝখানে দাড়াইয়া আছে। কোথায় তাহার শেষ, কি তাহার পরিণাম কে জানে ! চারিদিক নিস্তব্ধ - কেহ কোথাও নাই, অন্ধকারে কিছু চোখে পড়ে না ;—তাহার মনে হইতে লাগিল এ বিশাল জগৎসংসারের মধ্যে সে যেন আজ এক ! তাহার সমস্ত মনের চিন্তা সেই একারই উপর তখন কেন্দ্রীভূত হইয় পড়িল –কেবলই নিজের কথা ভাবিতে ভাবিতে নিজের উপর একটা ঘোর ঘৃণা ও বিতৃষ্ণায় চিত্ত ভরিয়া উঠিল ; সে বেশ বৃঝিতে পারিল সংকলন ও সমালোচন—ভাগ্যচক্র Ᏹ© Ꮍ তাহার অন্তরের মধ্যে যে পাপ ও কুটিলতা প্রচ্ছন্ন আছে তাহা সেই অন্ধকারের মধ্যে প্রকাশিত হইয়া তাঙ্গকে কী নিৰ্ম্মমভাবে বার বার আঘাত করিতেছে। এক ভূত্য আসিয়া কবাট খুলিল। এত রাত্রে আগন্ধক দেখিয়া সে বিস্মিত নয়নে চাহিল । তারপর যখন দেখিল বাটি একেলা, সঙ্গে ফ্র্যাঙ্ক নাই, তখন সে বিরক্তির সহিত নিতান্ত উদ্ধতভাবে বাটির পানে আর একবার চাহিল, এবং কোনরূপ নম্রতা না দেখাষ্টয়া বেগারঠেলা গোছের একটা অভিবাদন করিয়া বাটিকে বাড়ীর মধ্যে প্রবেশ করিতে দিবার জন্য দরজাটা খুলিয়া দিল । বাটি বলিল—“না ! তোমারই সঙ্গে কথা আছে।” ভূত্য অবাক হইয়া চাহিয়া রহিল । বাটি বলিল—“তোমাকে একটা উপকার করতে হলে—তোমার সাহায্য না হ’লে চলচে না ! গোপনে ছুটে কথা শোনবার কি অবসর আছে ?” ভৃত্য বলিল—“এখন ?” বাটি বলিল—“হুঁ, এখনই " ভৃত্য উচ্চকণ্ঠে বলিল—“তবে আমন আমার ঘরে ।” বাটি সে উচ্চকণ্ঠ শুনিয়া ভয়ে ভয়ে বগিল—“চুপ! চুপ!” তারপর বলিল—“না, সে হবে না। তুমিই বাইরে এস।” ভূত্য বলিল—“এখন তো বাক্টরে যেতে পারব না— এখন যে আমার প্রভুর শয়নের সময় ” বাটি বলিল—“আচ্ছা বেশ, আমি অপেক্ষা করচি— বাগানের রেলিঙের ধারে থাকবো—তুমি ঠিক এসো, বুঝলে । ভয় নেই আমি তোমায় খুন্সী করব ।” শেষের কথাটা শুনিয়া ভৃত্য উচ্চচান্ত করিয়া উঠিল,— বাড়ীব নিস্তব্ধতার মধ্য হইতে সে হাসির একটা ভয়ঙ্কর প্রতিধ্বনি বাজিয়া উঠিল, বাটি তাঙ্গ শুনিয়া ভয়ে সঙ্কুচিত হইয় পড়িল । ভূত্য বলিল—“তাহ’লে মশায় এখন বড়লোক !” বাটি জড়িতকণ্ঠে কঠিল—“হঁ—ষ্ঠী ! ঠিক এস : ভূত্য উৎসাহিত কষ্টয়া বলিল—“তবে রীতিমত দক্ষিণ काहे !” বাটি বলিয়া উঠিল—“আচ্ছা, আচ্ছ, সে হবে এথন । তুমি যত শীঘ্র পার এস।”__