পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় স' খ্য। ] এবং কতকগুলি অস্থি—এ ছাড়া তাহার শরীরে আর কিছু ছিল না। র্তাহার চক্ষু দৃষ্টিশক্তিশূন্ত—অত্যন্ত অনুজ্জ্বল এবং বর্ণহীন হইয়। গিয়াছিল। তঁাচার মাথাব শুভ্ৰ কেশরাশি অসংস্কৃত এবং জমাট-বাধা ক্ষীণ শ্মশ্রুটি অমার্জিত, দেহ শত-ছিন্ন কস্থায় আবৃত ছিল। কালক্রমে পুরাতন বস্ত্র জীর্ণ চষ্টয়া গিয়াছিল। কিন্তু নূতন কোনো বস্ত্র তিনি পান নাই। এই সুদীর্ঘ উনসত্তর বৎসর কোনো দিন তিনি স্নান করেন নাই—নথও কাটেন নাই। বহুবর্ষ পূৰ্ব্বে তার কিশোর বয়সে অন্ধকার গুষ্ঠায় যে সন্ন্যাসীরা তাহাকে রাখিয়া আসিয়াছিল তাঙ্গাদের কেচষ্ট এখন বাচিয়া নাই, শূঙ্গ স্থান এখন নূতন সন্ন্যাসীরা আসিয়া অধিকার করিয়াছে, তিনি তাঙ্গদের কাছে এখন সম্পূর্ণ অপরিচিত ।—স্বৰ্য্যালোকে আসিতে না আসিতেই তাহার প্রাণবায়ু বহির্গত হইয় গেল । এইরূপ একটি আত্মার অবস্থা বিশ্লেষণ করিয়া দেখিতে গেলে আমাদের কল্পনাকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়া ছাড়িয়া দিতে হয়, কেননা এ সম্বন্ধে কিছুই আমরা জানি না । কাপটেন ইয়ংঙ্গজব্যাও এর লাসা অভিযানের সহযাত্রী ওয়াডেল এবং ল্যাণ্ডেল, নিয়াং-টো-কি-পু আশ্রমগুলি পরিদর্শন করিয়াছিলেন । র্তাহার বলেন, যে সন্ন্যাসীরা চিরান্ধকারে প্রবেশলাভ করিয়াছেন প্রথমতঃ আল্পদিনস্থায়ী নির্জনবাসের অভিজ্ঞতার ভিতব দিয়া তাঙ্গদিগকে চলিতে হয় । এই অভিজ্ঞতার স্থায়িত্বকাল প্রথমবার ছয় মাস, দ্বিতীয়বার তিন বৎসর তিরানব্বই দিন । এষ্ট দ্বিতীয় বারের নির্জনবাস সমাপ্ত করিয়া যাহারা আসিয়াছে তাহারা অন্তান্ত সন্ন্যাসীদের তুলনায় বুদ্ধিবৃত্তিতে নিকৃষ্ট হইয়া গেছে তাহার চিহ্ন দেখা যায়। কিন্তু এই ইংরাজ ভদ্রমহোদয় দুইটির কাছে যেরূপ শুনিলাম তাছাতে নিয়াং-টো-কি পুর নির্জনবাসকে, লিঙ্গায় আমি যেরূপ দেখিয়াছিলাম সেরূপ ভয়ঙ্কর বলিয়া মনে হইল না । নিয়াং-টো-কি-পুতে সংরুদ্ধ সন্ন্যাসীর আহারাদির ভার যে লামার উপর ছিল তিনি, যে প্রস্তরখণ্ডে মুড়ঙ্গের মুখ বন্ধ থাকিত যথাসময়ে তাহাতে অঙ্গুলি দিয়া আঘাত করিতেন । সন্ন্যাসী এষ্ট সঙ্কেতে সুড়ঙ্গের মধ্যে হস্ত প্রবেশ করাষ্টর দিতেন। এবং দ্বারের পাথরটি মুহূর্তের জন্ত সংকলন ও সমালোচন—সংরুদ্ধ সন্ন্যাসী XLV সরাইয়া দিয়া আহার-পাত্রটি গ্রহণ করিয়া আবার পাথরটিকে যথাস্থানে রাথিয়া দিতেন। যাহাক্ট হৌক এক্ষেত্রে দিনান্তে এক মুহুর্তের জন্তও ত সংরুদ্ধ ব্যক্তির চক্ষে আলোকের স্পর্শলাভ ঘটিত । ওয়াডেল “লামাতত্ত্ব” সমন্ধে অনেক কথা ভাল করিয়া নিভৃতে আত্মামুসন্ধান, জীবনের জটিল তত্ত্বজালের মীমাংসা প্রভৃতির জন্ত বৎসরে কোনো কোনো নির্দিষ্ট সময়ে সংসার হক্টতে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করিয়া লইবার যে বিধান ভারতবর্ষে বৌদ্ধদের ছিল, তাঙ্গাদের মতে তিব্বতের নির্জনে অন্ধকারে বাসের প্রথা তাহারই অনুকরণ–কিন্তু ভারতবর্ষের কাছে যাঙ্ক লক্ষ্যে পৌছিবার উপায়মাত্র ছিল, তিববতীরা তাহাকেই লক্ষ্য করিয়া তুলিয়াছে । এই সকল মতবাদ যে সত্য সে সম্বন্ধে সন্দেহ করা চলে না—কিন্তু শুধু এইটুকু পলিলেই যথেষ্ট বলা হয় না । সন্ন্যাস গ্রহণেচ্ছু হয় ত ধৰ্ম্মের মোহে অন্ধ হইয়া নিজেকে জীবন্ত কবর দিবার সংকল্পে আসিয়া উপস্থিত হয়, কিন্তু সে যে কি করিতে যাইতেছে তখন কি তাঙ্কা তাহার ধারণায় আসে ? কুঠরিব মধ্যে আবদ্ধ থাকিতে থাকিতে তাহার বুদ্ধি যদি সত্য সত্যই নিস্তেজ হইয়া যাইত, পশুর মত যদি তাহার বুদ্ধিশক্তি লোপ পাঠত, তবে তাঙ্কার উদ্যম, তাহার চচ্চ-শক্তিও মরিয়া যাইত—গুহার অন্ধকারে প্রবেশ করিবার সময় জাগ্রতভাবে যাহার জন্য চেষ্টা করিবার প্রয়োজন আছে বলিয়া তাহার মনে হইয়াছিল, ক্রমশঃ সে সমস্তের প্রতি তাহার ঔদাসীন্ত বাড়িয়া উঠিতে থাকিত । কিন্তু এরূপ ত হয় না--তাকার প্রথম সঙ্কল্পে সে শেষ পর্য্যন্ত দৃঢ় এবং অবিচলিত থাকে, তাহার উদ্যম তাঙ্কাকে ত্যাগ করিয়া গিয়াছে একথা কেমন করিয়া বলিব ? অচলা ভক্তি, লক্ষ্যের প্রতি স্থির আচপল একটি নিষ্ঠা নিশ্চয়ই তাছার থাকে, কারণ এই হৃদয়বৃত্তিগুলিকে গুচার বাহিরে যে পরীক্ষায় পড়িতে হয়-গুহার ভিতরের পরীক্ষা তাঙ্গর তুলনায় অত্যন্ত কঠোর—কারণ সেখানে সে একান্তই এক, সেখানে একমাত্র মৃত্যুর সচিতই তাহার সাক্ষাৎ হইবার সম্ভাবনা থাকে। ধীরে ধীরে হয় ত আত্মপ্রবঞ্চনা আসিয়া তাহাকে গ্রাস করে—তাহার সেই গুহার সুদীর্ঘরাত্রি অবসানের শেষ ঘণ্টার জন্ত তীব্র জানেন ।