পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سنان لا এতদ্ব্যতীত যে সব সুত্রে রাজকর সংগৃহীত হইত মেমুষী তাহারও উল্লেখ করিয়াছেন। একে একে তাহারও কথা নিম্নে উল্লিখিত হইতেছে । সে স্বত্রগুলি প্রধানতঃ এই :– ( ১ম ) মুক্তিপূজক প্রত্যেক ভারতবাসী প্রজার উপর একটী কর গৃঙ্গীত হৃষ্টত । এ করের নামই ইতিহাস-প্রসিদ্ধ “জেজিয়া” । সমদৰ্শী মোগলশ্রেষ্ঠ আকবর এ ঘৃণিত করগ্রহণ-প্রথা তুলিয়া দেন। তাঙ্গর অদুৰদৰ্শী প্রপৌত্র আওরঙ্গজেব এ কর পুনঃপ্রচলিত করিয়া মোগল সাম্রজ্যের ধ্বংসের বীজ স্বহস্তে পপণ করিয়া যান ! এ প্রসঙ্গে সত্যের মর্য্যাদা রক্ষা করিবার জন্ত এ কথা বলিতে আমরা বাধ্য যে আধুনিক ভারতে হিন্দু মুসলমানের ভেদনীতি অবলম্বন করিয়া রাজ্য করা যদি কেহ সুশাসন মনে করেন তবে তাহার অওরঙ্গজেবের মতই ভ্রান্ত ও অদুরদর্শী। সৰ্ব্বত্র সমদৰ্শী মহাকাল অভ্রান্ত অঙ্গুলিসঙ্কেতে ভারতের ভাগ্যফলকে এ কথা অনল-অক্ষরে অঙ্কিত করিয়া দিয়া গিয়াছেন ! দূরদর্শী বুদ্ধিমান স্বশাসকের সে বিষয়ে ভ্রান্ত হইবার কোনোও কারণ নাই ! যাহা হউক, মেমুখী বলেন যে এই “জেজিয়া” আদায়ের তালিকায় মৃত্যু, দেশান্তর গমন ও আগমন প্রভৃতি কারণের সত্তার প্রায় ভ্ৰম থাকিয়া যাক্টত । স্থানীয় ফৌজদারেরা এ সব কারণে যথার্থ সংগৃহীত আয় গোপন বা কমাইবার জন্ত এক মিথ্যা হিসাব (return) রচনা করিয়া দিতেন । সুতরাং এরূপ তালিকার, তাঙ্গর মতে, সত্যাসত্য নির্ণয় করিবার উপায় ছিল না । (২য়) মোগল-সম্রাটদের উক্ত মুক্তিপূজক প্রজারা যে সব পণ্যদ্রব্য রপ্তানি করিত, তাহার উপর শতকরা *N টাকা হিসাবে কর আদায় করা হইত। মুসলমানের আওরঙ্গজেব-কর্তৃক এ করের দায় হইতে মুক্ত হন। ( ৩য় ) কাপাস ও অন্যান্ত রঙ্গীন বস্ত্রের রঞ্জন কার্যের উপরও কর নিদ্ধারিত ছিল । বাঙ্গালার এরূপ রঞ্জিত বস্তাদি যে প্রধান পণ্য বলিয় গণিত বণিয়ে এ কথা উল্লেখ করিয়াছেন। g? ( ৪র্থ ) হীরকখনিগুলিও, মেনুষী বলেন, সম্রাটের জায়ের আর এক প্রধান উপায়। আয়তনে ও ঔজ্জল্যে যেগুলি সৰ্ব্বোৎকৃষ্ট অর্থাৎ আয়তনে যেগুলি অংশ (r)– প্রবাসী—অগ্রহায়ণ, ১৩১৭ [ ১০ম ভাগ, ২ খণ্ড কোন রাশির ইঙ্গ ভগ্নাংশ সে কথা মেনুষী স্পষ্ট করিয়া বলেন নাই—সেইগুলিই সম্রাট নিজের বাবঙ্গরের জন্য রাখিতেন । * ( ৫ম ) ভারতের সমুদ্রোপকূলস্থিত প্রধান বন্দর (seaports) গুলি আয়ের আর একটী প্রধান উপায় । সেগুলির নাম সিন্দি ( সিন্ধু ? ) পুরোচ, স্বরাট ও ক্যাম্বে । এক স্বরাষ্ট্র বন্দর হইতেই, মেনুষী বলেন, বন্দরে সমাগত পণ্যদ্রব্যের উপর সালিয়ান আয় ৩০ লক্ষ ও মুদ্রাদির প্রকাশজনিত (coinage) লাভ ১১ লক্ষ। (৬ষ্ঠ ) সমগ্র করোমাণ্ডাল উপকুল ও গঙ্গাতীরবর্তী বন্দরগুলি হইতেই প্রভূত রাজস্ব আদায় করা হইত। ( ৭ম ) মুসলমানমাত্রই র্যাঙ্গার সমাটের বেতনভোগ ভৃত্য, তাহার মৃত্যু হইলে তাঙ্গর সময় সম্পত্তির উপর সম্রাটের অধিকার । মোগলরাজ-অতুশাসনমতে সম্রাটষ্ট তাহার প্রকৃত উত্তরাধিকারী । তাঙ্গাদের অর্থ, তৈজসপত্র ও অন্যান্ত দ্রব্যাদি তাঙ্গাদের মৃত্যুর পর সকলই সম্রাটের প্রাপ্য হইত। সাম্রাজ্যের বিভিন্ন প্রদেশের ফৌজদার ও মনসবদারের পত্নীরা স্বামীদের মৃত্যুর পর অপেক্ষাকৃত অল্প পেন্সন ভোগ করিতেন এবং তাঙ্গদের পুত্রের কোনও বিশেষ গুণসম্পন্ন না হইলে নিঃস্ব হইয়া পড়িত । ( ৮ম ) অধীন রাজপুত নৃপতিদের প্রদত্ত রাজকরও মোগল-রাজভাণ্ডারের একটী প্রধান উল্লেখযোগ্য আয় । উল্লিখিত বিভিন্ন অমুকুল উপায়ে মোগল-রাজস্ব ভূমির ফসল হইতে সংগৃহীত পূৰ্ব্বোল্লিখিত করের প্রায় সমতুল্য বা কিঞ্চিদধিক হইত। এই অপরিমিত ধনাগমের কথা শুনিয়া, মেনুষী বলেন, লোকে সহজেই বিস্মিত হয় কিন্তু তাহারা ভাবিয়া দেখে না যে এই রাজস্বের অধিকাংশই দেশের উন্নতির ও উপকারার্থে রায়িত হইত। অর্থাৎ, আমাদের দেশের মহাকবির কথায়, মোগলসম্রাটের, প্রজাদের ‘ভূতাৰ্থং, উন্নতির জন্তই, তাঙ্গাদের নিকট কর গ্রহণ করিতেন, কারণ, - ‘সহস্ৰগুণমুংস্রষ্ট,ং আদত্তে হি রসং রবিঃ ” ভগবান সহস্রাংশু সহস্র ধারায় বর্ষণ করিবার জন্তই পৃথিবীর রস শোষণ করেন । বৈদেশিক পর্য্যটকের এ উচ্চ প্রশংসা আধুনিক শাসনকৰ্ত্তাদের প্রণিধানযোগ্য। মেকুৰী