পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় १९था'] পরোপকার করিবার আকাঙ্ক্ষার নিমিত্তই বোধ হয় জনসমাজে সাহিত্যসেবীর এত অাদর ও সম্মান । এই প্রকার পরোপকার যাঙ্গর সহজ বৃত্তিতে পরিণত হয় তাহাকেই শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক বলা যায় । সুতরাং বঙ্গীয় সাহিত্যসেবকগণ যদি প্রকৃত পক্ষেই আমাদের জ্ঞান বৃদ্ধির সহায়তা করেন তবেই তাহীদের সেই পরম কর্তব্য প্রতিপালন করা হয় । সেই কৰ্ত্তব্য প্রকৃত পক্ষে প্রতিপালিত হইতেছে কিনা তাহারই আলোচনার জন্ত এই ক্ষুদ্র প্রবন্ধের অবতারণা । আত্মার উন্নতিসাধনই জ্ঞানের কার্য্য। যে জ্ঞান সেই কার্য্যে সহায়তা করে না তাহা পুস্তকনিবদ্ধ হইলেও জ্ঞানপদবাচ্য হইতে পারে না । বাঙ্গালা ভাষায় উপন্যাস বিভাগই পৰ্ব্বাপেক্ষ বৃহত্তম। অথচ অধিক সংখ্যক উপন্যাসষ্ট এমন এক প্রকার চিত্র অঙ্কিত করে যাহার ফলে সমাজে কুপ্রবৃত্তির অধিকতর সম্প্রসারণ হয়। বিনা শিক্ষায় আমাদের সমাজে কুপ্রবৃত্তির যে প্রকার তেজ তাহাতে বোধ হয় সাহিত্যচর্চা করিয়া আমাদের তাহা বৃদ্ধির প্রয়োজন নাই। মধ্যে দিনকতক সাহিত্যে দেশভক্তি-প্রোধান্তময় উপদ্যাস আরম্ভ হৃষ্টয়াছিল । কিন্তু আইনের ভয়ে সে পবিত্রতা লোপ পাইয়া পুস্তকাকারে এবং মাসিকের পৃষ্ঠায় পুনরায়;সেই আবিলতাময় চিত্ররচনা চলিতেছে। উপন্যাস সম্বন্ধে যে কথা বলা হইয়াছে গীতি কবিতা সম্বন্ধেও সেই কথা অনেকাংশে প্রযোজ্য। স্বতরাং সে সম্বন্ধে অধিক বলা নিম্প্রয়োজন । অতঃপর বঙ্গভাষায় গবেষণাত্মক সাহিত্যবিভাগ সম্বন্ধে ছু এক কথা বলা কৰ্ত্তব্য। প্রথমতঃ, ইতিহাস। বাঙ্গাল মাসিকে বহু ঐতিহাসিকের সাক্ষাৎ পাই । দুর্ভাগ্যের বিষয়—র্তাঙ্গদের মধ্যে অতি অল্প সংখ্যক ব্যতীত অন্ত সকলে ঐতিহাসিকরূপী অনুবাদক। অথচ স্পষ্টতঃ তাহা স্বীকার না করিয়া ফুটনোটে reference দেওয়া হয় ;–যেন কত অনুসন্ধান ও পরিশ্রম করিয়া লেখা হইয়াছে ! ইহারা নিজের গৃহপাশ্বস্থ স্থানের দশ বৎসর পূর্বেরও ইতিহাস জানেন না অথচ মুদুর শ্রীরঙ্গপত্তনের অথবা গান্ধারের ইতিহাস লিখিতে বড়ই পট ; নিজের বাড়ীর নকট বর্তমানে কি কি শিল্প বাঙ্গালা সাহিত্যের ক্রটি ৩২৫ আছে তাহ জানেন না কিন্তু প্রাচীন অবন্তীর শিল্পসম্বন্ধে অসীম গবেষণাপুৰ্ব্বক জ্ঞান সঞ্চয় করিয়াছেন। হাভেল সাহেবের পুস্তক রচিত হইবার পূৰ্ব্বে যে কেহ ভারতীয় প্রস্তরমূৰ্ত্তিতে বিশেষ সৌন্দৰ্য্য দেখিয়া কিছু লিখিয়াছেন এরূপ স্মরণ হয় না । অথচ যিনি শিল্পের ক খ ও জানেন না তিনিও সেই সব মুৰ্ত্তিতে এখন কত সৌন্দৰ্য্য ও ভাৰ দেখিতেছেন । কিন্তু সেই সব মূৰ্ত্তির অনেকগুলিই তিনি চিত্রে ব্যতীত দেখিয়াছেন কি না সন্দেহ ! অনুবাদের প্রয়োজন থাকিতে পারে বটে কিন্তু এরূপ কৃত্রিমতাপূর্ণ সাহিত্য দেশের অপকারক। কারণ ইষ্ঠাতে প্রায়ই পাঠকের জ্ঞানবৃদ্ধির সহায়তা করে না । যেহেতু পাঠক ত পাঠক। তাহারাও পুস্তক পাঠ করিয়া থাকেন। পরিশ্রম করিয়া যে লেখক নুতন তথ্যসংগ্ৰহ করিয়া পাঠককে দেন তিনিই সম্মানের পাত্র । যিনি পরস্বাপচারী তথাকথিত সাহিত্যসেবক তিনি ঘৃণার পাত্র। বাঙ্গালা ভাষায় বঙ্গদেশের ভূগোলের কত অভাব। এত লোক বাঙ্গালা সাহিত্যের চর্চা করিতেছেন কিন্তু বঙ্গের প্রতি জেলার বিস্তৃত ভূগোল ত কৈ দেখিতে পাওয়া যায় না। এখানে যে শুধু অনুবাদে চলে না। হাতে কলমে অনুসন্ধান দরকার—তাই বুঝি সে ভূগোল এত বিৰল। তাই মনে হয় বাঙ্গালা সাহিত্যের অনেক লেখককে সাহিত্যসেবক না বলিয়া সাহিত্যামোদী বলা সমীচীন। ইহার আমোদের জন্ত লেখনী ধারণ করেন—লোকশিক্ষার জন্য নহে। বঙ্গদেশের প্রত্যেক জেলার পৃথক্ ভূগোল প্রস্তুত হওয়া প্রয়োজন । তাহাতে যেমন গ্রাম, নদী প্রভৃতির নাম থাকিবে—তেমনি আচার, ভাষা, বৃক্ষাদির নাম, শিল্পসংবাদ, পশু পক্ষী প্রভৃতির নাম প্রভৃতি আবশ্যকীয় বিষয় সন্নিবিষ্ট থাকিবে । আমরা পাঠকবর্গ ইহা চাই । বাঙ্গালার সাহিত্যসেবকগণ কি এ দিকে পরিশ্রম করিতে অগ্রসর হইবেন না ? অধুনা আচাৰ্য্য প্রফুল্লচন্দ্র-প্রমুখ জনকয়েক কৰ্ম্মবার সাহিত্যক্ষেত্রে অগ্রসর হইয়া বিজ্ঞানালোচনার জন্ত সকলকে আহবান করিতেছেন ; আর আমাদের সাহিত্যামোদিগণ ইংরাজী গ্রন্থ তর্জমা করিয়া বাহবা লইবার চেষ্টায় আছেন। প্রাণিবিজ্ঞান বঙ্গসাহিত্যে_প্রয়োজন. অতএব বিদেশী_পথ