পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\වීම්)” রসালো হয়। দেয়ালের পাশে বসিয়া বসিয়া আঙুলের টোকায় আলাপ করিতে করিতে তরুণী তাঙ্গার ক্লান্ত মাথাটি দেয়ালেব গায়ে রাখে, সৰ্ব্বশরীর এলাইয় দেয়ালে সে ঠেসান দেয়, সেই কঠিন কালো পাযাণ প্রাচীর যেন তাহারই বন্ধুর প্রণয়কোমল বক্ষতট,—ভাবিতে ভাবিতে স্বখাবেশে তাঙ্গর বিনিদ্র নয়ন মুদিয়া আসে । এমনিতর পরিপূর্ণ হুগের সময় থাকে থাকে সে আপন মনে উচ্চরকে হাসিয়া উঠে, হৃদয় ছাপাইয়া গান ছুটে, সারা ঘরময় লঘুতালে সে নাচিয়া ফিরে । এই আনন্দের অমৃতপরশ কারাগারের সকল লোকের দুঃখবেদন যেন মুছিয়া দেয়—হাবসা শাস্ত্রী এমনতর নিয়মভঙ্গ শাসন করিবার মতন কঠোরত সঞ্চয় করিতে পারে না । একদিনকার প্রভাতে একজন কে কয়েদি দরজার জালি দিয়া দেখিল বাহিরের আঙিনায় “কৎল” করিবার আয়োজন হইতেছে। দেখিয়া তাঙ্গার মুখ শুকাইল, বুক কাপিল । তখন টোকায় টোকায় এঘর থেকে ওঘর, ওঘর থেকে সেঘর প্রশ্ন চলিল—কে রে, কে সে হতভাগ৷ যাহার জীবনের অবসান এমনতর আসন্ন ? সবাই নিজেকেই সেই মৃত্যুর নিমন্ত্রিত মনে করিতে লাগিল । সকলেই সঙ্গীদের কাছে বিদায় লইয়া যাত্রার জন্ত প্রস্তুত হইল। ক্রমে ক্রমে টোকার শব্দ থামিয়া গেল। সবাই স্তব্ধ—যেন জনপ্রাণী জীবিত নাই, সবাই সেথায় মরিয়াছে। তরুণীর দেয়ালে আজ তাহার বন্ধুর করাঘাত বড় কম্পিত, বড় ব্যগ্র, বড় গুরু । আগেকার মতন এ চুরিকরা প্রণয়বাণী নয়, আজ যেন এ জীবন মৃত্যুর সমস্তা, প্রাণের সকল কথা এক নিশ্বাসে বলিয়া ফেলিসার প্রাণপণ এ চেষ্টা, আপনাকে নিঃশেষে নিবেদন করিবার উদগ্র এ আকাঙ্ক্ষা । দেয়ালের গায়ে ঘুসি মারিয়া, লাথি কসিয়া, মাথা ঠুকিয়৷ পাষাণ প্রাচীর ভাঙিয়া ফেলিতে সে চায় ! তরুণী কিন্তু বুঝিল না তাহার হৃদয়বন্ধু হৃদয় ভাঙিয়া কি বলিয়া গেল—শুধু সে বুঝিল একটি চুম্বনের শব্দ, একটি বিষাদগভীর দীর্ঘশ্বাস। তারপর সব চুপচাপ। তরুণী ভয়স্তম্ভিত ভাবে বসিয়া রহিল। প্রতীক্ষা করিয়৷ রহিল আবার তাহার বন্ধু তাহাকে ডাকিবে, আবার প্রবাসী—পৌষ, ১৩১৭ ১০ম ভাগ, ২য় খণ্ড তাহার কানে প্রণয়গাথা ঢালিয়া দিবে। কিন্তু বৃথা তাহার আশা, বৃথা তখন প্রতীক্ষা । সমস্ত দিন গেল, রাত্রি ঘনাইল, তবু তো কৈ পাশের ঘরে কোনো সাড়া শব্দ নাচ । সে অজ্ঞাত আশঙ্কায় বিমূঢ় হইয়া বসিয়া বসিয়া কি যে ভাবিতেছিল তাঙ্গ সেই জানে না । তখন বাহিরেও সে কী দুর্য্যোগ ! ঝড় বৃষ্টি বিদ্যুৎ বজ্ৰ ! ঝড়ের হাঙ্গাকার, বৃষ্টির ক্রনন, বিছাভের জাল, বজ্রের হুঙ্কার তাহাকে নূতন করিয়া আঘাত করিতে লাগিল । সেই আঘাতে তরুণী চেতনা পাইয়া চারিদিকে চাক্তিয়া দেখিল । অন্ধকার ঘরের মাঝখানে সে বসিয়া আছে একা । সাঙ্গর এতদিনের সঙ্গীর, তাহার দুঃখদিনের বন্ধুর এখনো কোনো সাড়া নাই। সে ধীরে ধীরে দেয়ালের গায়ে টোকা মারিল । তবু কোনো সাড়া নাই । তাহার বন্ধু যখন তাহাকে ব্যগ্রভাবে ডাকিয়াছিল তখন সে সাড়া দেয় নাই, তাই কি বন্ধু রাগ করিয়াছে ? সে সোহাগভরে আবার ডাকিল ৷ নাক্ট নাই—-কোনো সাড়া নাই। তখন সে দুঃখে অভিমানে কাতর হইয়া বিছানায় গুইয়া পড়িল । শুষ্টয় শুষ্টয়া কত কি ভাবিল, ঘুমষ্টিতে চেষ্টা করিল। কিন্তু ঘুম তো কিছুতেই আসিল না। তখন তাঙ্গর ভারি এক এক বোধ কষ্টতে লাগিল—এতদিন পরে আজ সে কারাগারে এক বন্দিনী ! সে এক-একবার ভাবে আবার একবার ডাকি ; আবার ভাবে, না, সেই আগে ডাকুক। কিন্তু অভিমান করিয়া আর কতক্ষণ থাকা যায়,--সে বিছানা হষ্টতে লাফাইয়া উঠিয়া কাদিয়া কাদিয়া দেয়ালময় আঘাত করিয়া ফিরিল—ওগো বন্ধু, কোথায় তুমি, তুমি কোথায়, কোথায় গেলে ? বল বল—একবার তুমি একটি কথা বল ! সেই আনন্দময়ীর করুণকন্দন আজ সমস্ত কারাগারকে আবার হঠাৎ চমকিত করিয়া তুলিল। হায় হায় ! এমন হাসির প্রতিমাকে কাদাইল আজ সে কোন নিষ্ঠুর । সকল কয়েদি চোখ মুছিল । হাবলী খোজার পায়চারিও ভারি भइन्न ठ्हेब्र श्रफूिल । আনন্দময়ীর কান্নার খবর বাদশাহের কানে গেল । আনন্দিত বাদশাহ তরুণীর ঘরে আসিয়া হাসিয়া বলিলেন---