পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SD8있 এই নগরী অবস্থিত। ডক এবং চীন সহরের মধ্যস্থলে নদী-পুলিনে ইংরাজ ফরাসী ও আমেরিকান গণ্ডী (conরাস্তাগুলি সু প্রশস্ত ও পরিচ্ছন্ন, দুই ধার সুসজ্জিত দোকানপাটে পরিপূর্ণ। রাস্তায় একটা পিন পড়িলেও তুলিয়া লইতে কষ্ট হয় না । পৃথিবীস্থ প্রত্যেক জাতিই বাণিজ্যব্যপদেশে এখানে অবস্থিতি কবিতেছে । যুদ্ধের এই সময়ে সকল দেশের সৈনিক ও নাবিকের সমাবেশে এই স্থান এক অপূৰ্ব্ব শ্ৰীধারণ করিয়াছিল । ইংরাজ, জৰ্ম্মান, ফরাসী, রুলীয়, ইতালীয়, জাপানী, আমেরিকান সকলেষ্ট যেন এক সূত্রে গ্রথিত, এক উদ্দেহে অনুপ্রাণিত হইয়াছিল । অল্পকাল মধ্যে যদি কেহ মানবচরিত্র পর্য্যালোচনা করিতে ইচ্ছা করে তাহাকে আমি একবার সাংঘাই দেখিতে অনুরোধ করি । ( ক্রমশ: ) আশুতোষ রায় । cession) i জীবন-বৈচিত্র্য বাৰ্দ্ধক্য । “চাহার দৰ্ব্বেশ্ব” নামক প্রসিদ্ধ উপন্যাসগ্রন্থে বর্ণিত আছে যে রুমের বাদশাহ আজাদ বখত দর্পণে মুখ দেখিতে দেখিতে একদিন একগাছি পাক চুল দর্শনে মৃত্যুর দূত উপস্থিত ভাবিয়া বিষম শোকে মুহমান হষ্টয়াছিলেন । এষ্ট গল্পটি নিতান্ত অমূলক নহে । এমন মধ্যবয়স্ক বা প্রৌঢ় ব্যক্তি নাই যাহার জীবনে আজাদ বখতের দশা কিয়ৎ পরিমাণে ঘটে নাই। মানব-শিশু ভূমিষ্ঠ হইবা মাত্র জরা রাক্ষসীর ক্রোড়ে আশ্রয় লাভ করে বটে এবং জন্ম-দিন হইতেই তিল তিল করিয়া মৃত্যুর অভিমুখে অগ্রসর হইতে থাকে বটে, কিন্তু শিশুর সুকোমল কপোলে কিম্বা তরুণের নিটোল ললাটে মৃত্যুর পদাঙ্ক সহজে দৃষ্ট হয় না। অতুল বিভবের উচ্ছ জ্বল উত্তরাধিকারী বয়ঃপ্রাপ্ত হইয় যেরূপ অকাতরে অর্থব্যয় করিতে কিঞ্চিষ্মাত্র কুষ্ঠিত হয় না এবং মনেও ভাবে না যে অপব্যয়ে কুবেরের ভাণ্ডারও এক দিন রিক্ত হইতে পারে, সেইরূপ জীবনের নববসন্ত-সমাগমে প্রবাসী—পৌষ ১৩১৭ { ১০ম ভাগ, ২য় খণ্ড মানুষ জীবন-ব্যাঙ্কের উপর অবাধে চেক্ কাটিতে থাকে এবং ওভার-ড্রয়িঙ্গের আশঙ্কাকে মনেও স্থান দেয় না । এই রমণীয় ঋতুর প্রভাবে মানুষ অজরামরবৎ অদম্য উদ্যমের সহিত সংসার-ক্ষেত্রে ধাবমান হয় ও অপরিসীম অাশার ভিত্তির উপর বিচিত্র কল্পনাপুরী নিৰ্ম্মাণ করিতে থাকে। মনে করে সে বুঝি কালের একাধিপত্যের বহির্ভূত। কিন্তু হায়! একদিন হঠাৎ তাহার এই ভ্রম দূর হয়। হঠাৎ দেখে তাড়ামান বীণার তার ছিঁড়িয়াছে, হঠাৎ অনুভব করে বাহুবল শিথিল কষ্টয়া পড়িয়াছে, দৃষ্টির আর সে তীক্ষতা নাই, পদযুগের আর সে ক্ষি প্রগতিত্ব নাই, মস্তিষ্কের আর সেরূপ কাৰ্য্যকারিত নাই, আশার আশুগতিও মনীভূত হইয়াছে, জীবনের খরস্রোতে ভাট পড়িয়াছে । ংক্ষেপত: সে বাৰ্দ্ধক্যের সীমান্তে পদার্পণ করিয়াছে । এই পদার্পণ যে একদিনে ঘটে তাঙ্কা বলিতেছি না—ষ্টতা নিশ্চয়ই বহুদিন-সাপেক্ষ, কিন্তু ইহার উপলব্ধি অত্যন্ত অতর্কিতভাবে ও সহসা ঘটিয়া থাকে । তাহার কারণ এই, যে, আমরা সচরাচর কৰ্ম্মক্ষেত্রে নিজশক্তি পূর্ণমাত্রায় প্রয়োগ করি না, উহার চরমসীমার পরিচয় কেবল নিতান্ত দুরূহ ব্যাপারেই পাওয়া যায়, সুতরাং সামর্থ্যের সমধিক অপচয় ন হইলে শনৈঃসঞ্চিত শক্তির লাঘব সহজে ধরা পড়ে না এবং তাহাও কোন বিশেষ-ঘটনা-সাপেক্ষ । আর এক কথা—মানবপ্রকৃতিই এক্ট যে নিজের চীনাবস্তা কেহ সহজে বিশ্বাস বা উপলব্ধি করিতে প্রস্তুত নহে ; এরূপ অপ্রীতিকর সত্য অনেক সময়ে আমরা অপরের মুখ হইতে প্রথমে অবগত হই । আমার নিজের জীবনী হইতে ইহার একটি দৃষ্টান্ত দিব । কয়েক বৎসর অতীত হইল আমি একদিন সায়ংকালে লালদীঘির ধারে ট্র্যামগাড়ীর জন্ত অপেক্ষা করিতেছিলাম। গাড়ী আসিলে আমি উহাতে উঠিবার জন্ত অগ্রসর হইলাম ও চালককে গাড়ী থামাইতে বলিলাম। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্যক্রমে অথবা চালকের অনবধানতাবশতঃ গাড়ীর বেগ একেবারে থামিল না, এবং আমারও গাড়ীতে উঠা অসম্ভব হইল। আমার দূরবস্থা দেখিয়া একজন দয়াশীল আরোহী কণ্ডাক্টারকে সম্বোধন করিয়া বলিলেন, “গাড়ী একেবারে বাধো, দেখিতেছ না বুড়া মানুষটি উঠিতে পারিতেছে না।” কথাগুলি আমার কর্ণে শেল বিদ্ধ করিল,