পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S)88 কলপ লাগাইয়া লোকে বাৰ্দ্ধক্য ঢাকিবার চেষ্টা করিত। বরাষ্ট-মিহির-কৃত বৃহৎ সংহিতাতে কলপ প্রস্তত করিবার প্রণালী বিশেষরূপে বিবৃত আছে। কিন্তু যদি যথার্থ চিরযৌবন লাভ করিতে চাও, তবে কলপ বর্জন করিয়া যত্ন পূৰ্ব্বক হৃদয়ে উৎসাহ ও আনন্দ পোষণ কর। আমি এক সদানন্দ বর্ষীয়ান মহাপুরুষকে জানিতাম, যিনি আজীবন তরুণের দ্যায় উৎসাহশীল ছিলেন । আরববাসিগণের সংস্কার এই, যে, বালিকার নিশ্বাস সেবন করিলে বৃদ্ধের জীর্ণদেহে বল-সঞ্চার হয়। এ সংস্কার কতদূর সত্য তাহ জানি না । কিন্তু শিশুর সংসর্গ যে বৃদ্ধের পক্ষে বিশেষ হিতকর, সে বিষয়ে অণুমাত্র সংশয় নাই । আমার তিন বৎসরের নাতিনীর রঙ্গভঙ্গ দেখিয়া আমি অনেক সময়ে বিষঃ চিত্তের প্রফুল্লতা সম্পাদন করি, এবং তাঙ্গর সেই ক্ষুদ্র, নিষ্কলঙ্ক প্রাণটি এই বুড়া প্রাণে মিশাইয়া শুষ্ক তরুকে কিশলয়িত ও কুসুম-শোভিত করি । ডাক্তার জনসন এই জন্তই প্রাচীন বয়সে তরুণ বন্ধুর বড় সমাদর করিতেন । তিনি বণিতেন যে, তরুণ-সহবাসে আমি আপনাকেও তরুণ বোধ করি । এইরূপে বৃদ্ধবয়সে জীবনের সকল ঋতুর একত্র সমাবেশ ঘটে এবং উহা কি অপূৰ্ব্ব দৃশু ! তিনকুড়ি বৎসরের বোঝা কাধে করিয়া বৃদ্ধ বৈষ্ণবকে কীৰ্ত্তনাঙ্গনে বালকের দ্যায় আনন্দে অধীর হইয়া নৃত্য করিতে দেখিয়া কি অভূতপূৰ্ব্ব আনন্দরসে আপ্লুত হইয়াছি । লাপ্লাণ্ডের ছয়মাস-ব্যাপিনী রজনী সুর্য্যবিবর্জিত হইলে কি পরিতাপের বিষয় হইত ! নিরানন্দ বাদ্ধক্য তদধিক ভয়াবহ । অনেকের ধারণা যে যৌবনকালই মুখভোগের সময়। কিন্তু এ সংস্কার ভ্ৰমাত্মক । জীবনের অপরাহই প্রকৃত সুখের সময় । যৌবনের আবেগ ও চাঞ্চল্য মুখভোগের প্রধান অন্তরায় । তখন মুখ বেগবতী-স্রোতস্বতী-বক্ষে প্রতিবিম্বিত সুধাংশুর দ্যায় শতধা বিভক্ত ও বিচলিত হয়। মধ্যাহ্নের প্রচণ্ড মাৰ্ত্তণ্ডতাপে শান্তির ছায়া কোথায় মিলিবে ? যুবা প্রেমের উন্মাদনী শক্তি মাত্র অনুভব করে । প্রেমের পবিত্র স্নিগ্ধ জ্যোতিঃ কেবল জীবনের অপরাহ্নে দেখা দেয়। যুবার সমক্ষে প্রমদা মোহিনী-প্রতিমারূপে প্রতিভাত হয় । নারীর দেবীমূৰ্ত্তি দর্শন কেবল সংযমী মধ্যবয়স্কের ভাগ্যে ঘটে । ফলকথা এক্ট, যে, প্রকৃত সুখভোগ করিতে গেলে তরুণকে প্রবাসী—পৌষ, ১৩১৭ [ ১০ম ভাগ, ২য় খণ্ড প্রৌঢ়ের নিকট সংযম শিখিতে হইবে, এবং প্রৌঢ়কে তরুণের নিকট জলন্ত উৎসাহ ও অনুরাগ ধার করিতে হইবে । জীবন-মহাকাব্যের প্রত্যেক সর্গের মধ্যে এক একটি বিশেষ গুণ নিহিত থাকা আবশুক—যথা শৈশবে প্রসাদগুণ, যৌবনে ওজোগুণ, প্রৌঢ় বয়সে গাম্ভীৰ্য্য, বাৰ্দ্ধক্যে শাস্তি । এই সকল গুণের সমাচাবে সমগ্র জীবন-কাব্যের সৌন্দর্য্য উদ্ভাসিত হয়। দ্রাক্ষালতার ফল পাকিলে পাত শুষ্ক হইয়া ঝরিয়া পড়ে। যৌবনান্তে যেমন শারীরিক সৌন্দর্য্য ও শক্তির হ্রাস শুষ্টতে থাকে সেই সঙ্গে যদি প্রবীণোচিত জ্ঞান ও চরিত্রোৎকর্ষত লাভ করিতে পারি তাহা হইলে যৌবন হারাইয়াছি বলিয়া কেন দুঃখ করিব ? বেগবতী নদী যেমন এক কুল ভাঙ্গে ও অপর কূল গড়ে, সেইরূপ কাল-তস্কর এক হস্তে যাহা অপহরণ করে অপর হস্তে তাহার ক্ষতিপূরণ করে। যৌবনের উদাম প্রেম হারাষ্টয়াছি বটে, কিন্তু বিশুদ্ধ পারিবারিক প্রেমের কত উৎস চারিদিকে উৎসারিত হইয়াছে। প্রৌঢ় ঠাকুরদাদার নাতি নাতিনী লইয়া আমোদ যৌবনে কবে সম্ভোগ করিয়াছিলাম ? নিজের সামর্থ্য পরিমাণ করিতে শিখিয়াছি । যৌবনে কত অসম্ভব আশা পোষণ করিতাম ও তজ্জন্ত কতবার নৈরাশু-সাগরে নিমগ্ন হইতাম ! এখন নিজের ওজন বুঝিয়া চলি । যে-সকল বিষয়ে ভগ্নমনোরথ হইয়া জীবন বিফল হইল বলিয়া আক্ষেপ করিয়াছি, জীবনাচলের শিখরে উঠিয়া তাহাদিগকে কত অকিঞ্চিৎকর, কত ক্ষুদ্র দেখিতেছি ! কত অভিসম্পাত এখন বর বলিয়া বোধ হইতেছে ! একই বস্তুকে মানুষ বিভিন্ন বয়সে কত বিভিন্ন চক্ষে দেখে ! যৌবনে যে বস্তুকে কুৎসিত ও অপ্রতিকর ভাবিতাম, এখন তাহার ভিতরের সৌন্দৰ্য্য দেখিয়া মুগ্ধ হই। যৌবনের ঔদ্ধত্যে লোকের দোষগুণ প্রশান্তভাবে বিচার করিতে পারিতাম না। লঘুপাপে গুরুদণ্ড বিধান করিতে কিছুমাত্র সঙ্কোচ করিতাম না। সংসারে বারম্বার টোল খাইয়া ও ঠেকিয়া শিথিয়া এখন মানুষের দুর্বলতা হৃদয়ঙ্গম করিতে ও ক্ষমা করিতে শিখিয়াছি । মহাযাত্রার চরমমঞ্জিলের যতই নিকটবর্তী হইতেছি ততই সহযাত্রীদিগের প্রতি সহানুভূতি বাড়িতেছে। প্রৌঢ় বয়সে রিপুগণ নিস্তেজ হইয়া আসে। সিসিরো প্রৌঢ় বয়সের গুণকীৰ্ত্তনে বিশেষ