পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] করিয়া বলিয়াছেন যে এই বয়সে মানুষ দুরন্ত কামরিপুর অত্যাচার হইতে অব্যাহতি লাভ করে । ইহা যে কত বড় লাভ তাক বুঝাইবার প্রয়োজন নাই। প্রৌঢ় বয়সে মানুষের ধীশক্তির পূর্ণ-বিকাশ হয় ইহা বলা বাহুল্য। একজন সুলেখক বলেন যে কোনও গ্রন্থকারের সৰ্ব্বোৎক্লষ্ট গ্রন্থসমূহ প্রায় লেখকের জীবনের শেষ সপ্তদশবর্ষের মধ্যে প্রকাশিত হয় শারীরিক স্বাস্থা সম্বন্ধে একজন ইংরাজ পণ্ডিত বলেন, যে, পঞ্চাশতবর্ষ অতিক্রম করিবার পর মানুষ যে দিন ভাল থাকে তাহার সেই দিনই ভাল ! আমাদের দেশের লোকে পঞ্চাশ পার হইলে বৃদ্ধ বলিয়া পরিগণিত হয়। নানা কারণে এ দেশের স্থবিরের শীঘ্রই স্বাস্থ্য-সুখে বঞ্চিত হন । কিন্তু আমাদিগের মধ্যে অধুনা যেরূপ অকালমৃত্যুর প্রাদুর্ভাব দেখিতেছি তাহাতে বোধ হয় না যে স্বাস্থ্যসম্বন্ধে বুদ্ধের অবস্থা তরুণের অপেক্ষা অধিকতর শোচনীয় । বরং অনেক বৃদ্ধকে যত্নপূর্বক স্বাস্থ্য-নিয়ম পালন করিয়া দীর্ঘজীবী হইতে দেখিয়াছি । শরদাগমে গঙ্গায় মরালমালার দ্যায় বাদ্ধক্য উপস্থিত হইলেই তাহার সঙ্গে সঙ্গে তদুপযোগী সদগণসমূহ আপন হইতে উদয় হইবে এ বিশ্বাস ভিত্তিহীন। জ্ঞান ও চরিত্রের উন্নতি পূৰ্ব্ববয়সের সাধনা-সাপেক্ষ। চুল পাকিলেই বুদ্ধি পাকে না । কয়েক বৎসর অতীত হইল আমি এক বন্ধুর সহিত জলপথে মুর্শিদাবাদে বেড়াইতে গিয়াছিলাম। ফিরিবার সময় আমরা আজিমগঞ্জ ষ্টেশন হইতে রেলগাড়ীর আশ্রয় গ্রহণ করি। আমাদের কম্পার্ট মেণ্টের অব্যবহিত পরবর্তী কম্পার্টমেণ্ট মুর্শিদাবাদ জেলার এক সন্ত্রাস্ত বিপ্র পরিবার অধিকার করেন। র্তাহাদের সঙ্গে বিস্তর লটবহর ছিল। অসংখ্য আম-সত্ত্বের হাড়ী ও আম্রের চারা একে একে গাড়ীর ভিতর সাজাইতে অনেক সময় লাগিল। গাড়ী ছাড়ে ছাড়ে এমন সময়ে প্ল্যাটফর্মের অনতিদূরে একখানি শিবিকা দেখা গেল। বাহকের উৰ্দ্ধশ্বাসে গাড়ীর সম্মুখে আসিয়া পন্থছিবা মাত্র গাড়ী ছাড়িল ও তাহার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পরবর্তী কক্ষ হইতে বামাকণ্ঠোখিত করুণ আৰ্ত্তনাদ শুনা গেল। দয়ালু ষ্টেশন্‌-মাষ্টার ( একজন জীবন-বৈচিত্র্য ව86 মধ্যবয়স্ক হিন্দু ) তৎক্ষণাৎ নিজের দায়িত্বে গার্ডকে গাড়ী থামাইতে ইঙ্গিত করিলেন । গাড়ী থামিলে জানা গেল যে শিবিকায় একটি শিশু ছিল । সে যে পিছাইয়া পড়িয়াছে তাহা আমাদের সহযাত্রা বিপ্ৰপরিবারের পলিতকেশ তত্ত্বাবধায়ক মহাশয় জিনিষপত্র গুচাইতে ব্যস্ত থাকা প্রযুক্ত লক্ষ্য করেন নাই । গাড়ী ছাড়িয়া দিলে শিশুর জননী সস্তানকে দেখিতে না পাঠয়া কাদিয়া উঠিয়াছিলেন । শিশুটি মাতার ক্রোডস্থ হইলে ষ্টেশন মাষ্টার পুনৰ্ব্বার গাড়ী ছাড়িবার অনুমতি দিলেন এবং প্রাগুক্ত তত্ত্বাবধায়ক মহাশয়কে বলিলেন, “ আপনার চুল পাকিয়াছে, কিন্তু বুদ্ধি পাকে নাই।” কোনও পরিহাসরসিক পরিহাস করিয়া বলিয়াছিলেন, আমি কখনও সাবালগ হুইব না। একজন ইংরাজ কবি বলেন, “যে ব্যক্তি চল্লিশ বৎসর বয়সেও নিৰ্ব্বোধ থাকে সেক্ট যথার্থ নিৰ্ব্বোধ ।” বাস্তবিক এক এক জন লোক চিরজীবন নাপালগ থাকে । বাদ্ধক্য তাহাদের মাথার কেবল উপরিভাগে চুণকাম করে, কিন্তু ভিতরে প্রবেশ করিতে পারে না । তুষারমণ্ডিত গিরি-শুঙ্গ উচ্চতার পরিচায়ক বলিয়া তুষার-ধবল মানব-মস্তক সকল সময়ে উন্নত-চিত্ততার পরিচয় দেয় না । এক একজন লঘুচেতা এত অসারআমোদপ্রিয়" যে বৃদ্ধপয়সেও তরুণোচিত বেশভূষা করিয়া যৌবনসুলভ ইন্দ্রিয়সুখে রত থাকে । তাহাদের এরূপ বিসদৃশ আচরণ যে প্রাণদণ্ডে দণ্ডণীয় তাঙ্গ তাহারা ভুলিয়া যায়। সংস্কৃত কবি এই শ্রেণীর একজনের মুখ দিয়া বলাইয়াছেন, যে, "চুল পাকিয়াছে দাত পড়িয়াছে বলিয়৷ একবারও দুঃথ করি না, কিন্তু হরিণ লোচনার যে আমাকে তাঁত-সম্ভাষণ করে ইহাই আমার পক্ষে কুস্তাঘাত।” একজন সুক্ষ্মদৰ্শী পণ্ডিত বলেন, “কিরূপে বুদ্ধ হইতে হয় ইঙ্গ যিনি জানেন তিনি জ্ঞানের পরাকাষ্ঠার পরিচয় দেন।” বস্তুতঃ মানুষ সংসারে ডুবিয়া থাকিতে এত ভালবাসে, যে, চরম দশা উপস্থিত হইয়াছে, এখন কৰ্ম্মক্ষেত্র হইতে অবসর লইতে হইবে, এ জ্ঞান তাঙ্গর জন্মিয়াও জন্মায় না। চিরঅভ্যস্ত অভিনয়-মদে মত্ত হৃষ্টয়া রঙ্গমঞ্চ ছাড়িতে চায় না । শেষে দর্শকবৃন্দ বিরক্ত হইয়া বলে, এই বুড়াটা সরিয়া পড়,ক না, আর কেন ? যথন দেখি মৃত্যু অপরের কপালে