পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা । দিয়াছেন যে বাঙ্গালী মুসলমানের ছেলেদের উর্দর মধ্যে দিয়া উচ্চ শিক্ষা দিতে চেষ্টা করায় তাহাদেক পাচটা ভাষা শিখিতে বাধ্য করা হয়। অথচ হিন্দুর ছেলেদের শুধু তিনটী ভাষা শিখিলেই সংসার ও ধৰ্ম্মের সব কাজ চলিয়া যায়। সুতরাং জীবন-সংগ্রামের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এষ্ট প্রকাও ভাষার বোঝায় নত হইয়া মুসলমান বালকের পিছু পড়িয়া রছিতেছে । এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা হইতে বি,এ পৰ্য্যস্ত প্রতি পরীক্ষায় একটা মাতৃভাষায় রচনা লিখিতে হয় । বাঙ্গল সাহিত্যকে তাচ্ছিল্য করায় অনেক বাঙ্গালী মুসলমান যুবক না বাঙ্গল না উর্দু, রচনা করিতে পারে। তাহারা উর্দু, সাধুভাষা শেখে নাই, অথচ বাঙ্গলা চর্চা করিতেও যেন লজ্জা পায় । ইহার এই হাস্তজনক ফল হইয়াছে যে এরূপ দুর্দশাপন্ন কয়েকট ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়কে দরখাস্ত করিয়া নিজেদের “ইংলিশ ভাৰ্ণাকুলার” মঞ্জুর করাষ্টয়া লইয়াছে, অর্থাৎ তাহীদের কোন মাতৃভাষা নাই, ইংরাজীতে একটা অতিরিক্ত প্রবন্ধ লিখিতে হইবে। আচ্ছ, এরূপ করিয়া তাঙ্গর না হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় পাশ হইল ; কিন্তু জগতের পরীক্ষাগারে, কৰ্ম্মের পরীক্ষাগারে, যে প্রত্যহ মাতৃভাষার আবশুক হয়, সেখানে ইহাদের কি গতি হইবে ? (২) পারত্রিক ক্ষতিও কম হইতেছে না। বাঙ্গালী মুসলমানদের মধ্যে প্রায় কেচষ্ট গভীরভাবে আরবী বুঝেন না। কোরাণ ও হদিস উর্দুতে অনুবাদ করিয়া উর্দু, তফসীর বা ব্যাখ্যার সাহায্যে র্তাহাদেক পড়ান হয় । ইহার ফল এক্ট হয় ষে ধৰ্ম্মপুস্তক অপরিচিত ভাষায় থাকিয়া যায়, সহজে হৃদয়ঙ্গম হয় না, তাহ পড়িতে পরিশ্রম লাগে । অথচ এই সব আরবী গ্রন্থের যে বাঙ্গল অনুবাদ হইয়াছে তাহা যদি মুল্লাগণ রণার চক্ষে না দেখিতেন, তবে লক্ষ লক্ষ মুসলমান সহজ সুপাঠ্য মাতৃভাষার ধৰ্ম্মপুস্তকে দিনরাত্রি ডুবিয়া থাকিয়া ভক্ত হইবার অবসর পাইত। মধ্যযুগে ইউরোপেও ঠিক এই মত বিভ্ৰাট ঘটে। আদি বাইবেলখানা ছিক্র ও গ্ৰীকৃ ইষ্টতে লাটিনে অনুবাদ করিয়া তাহাই গির্জায় পড়া হইত, লাটিন ভাষায় পূজা, প্রার্থনা স্তোত্রগান হইত । পুরোহিতেরাষ্ট সব সময় তাহার ঠিক মানে বুঝিতেন না, সাধারণ লোকের ত কথাই নাই। অথচ ৰাঙ্গালীর ভাষা ও সাহিত্য 8 օծ ক্যাথলিক ধৰ্ম্মযাজকগণ ভাবিডেন ষে লাটিন পবিত্র ভাষা, ধৰ্ম্মগ্রন্থ বা স্তোত্র প্রচলিত ভাষায় অনুবাদ করিয়া পাঠ কৰাইলে ধৰ্ম্মের অপমান করা হইবে। ইহার ফলে লক্ষ লক্ষ নরনারী তোতাপার্থীর মত লাটিন ভজন গুনিত, লাটিন স্তোত্র আওড়াইত, এক কথাও বুঝিত না, ধৰ্ম্ম তাঙ্গদের অন্তরে ঢুকিত না। বাঙ্গালী মুসলমানদের নিকট উর্দুতে কোরাগ-ব্যাখ্যা এবং ধৰ্ম্মবিষয়ে বকৃত করার ঠিক এই ফল হইতেছে। তারপর ষোড়শ শতাব্দীতে লুথার উঠিয়া ধৰ্ম্মসংস্কার করিলেন, দেশে শুধু দেশীয় ভাষায় বাইবেল পাঠ, স্তোত্র গান ও পূজা সম্পন্ন হইতে লাগিল। তখন ইউরোপে খৃষ্টধৰ্ম্ম প্রাণময়, অকপট, বিশ্বাসের বস্ত হইয়া দাড়াইল। বঙ্গীয় মুসলমান ভ্রাতাগণ ! ইতিহাসের এই দৃষ্টান্ত হইতে শিক্ষালাভ করুন, সজাগ হউন। আপনাদেরই প্রেরিত পুরুষ বলিয়াছেন—“নমাজের সময় পূৰ্ব্ব বা পশ্চিমদিকে মুখ ফিরানতে ধৰ্ম্ম হয় না ; প্রকৃত ধৰ্ম্ম হয় ঈশ্বরে, শেষ বিচারের দিনে, ধৰ্ম্মগ্রন্থে ও প্রেরিত পুরুষগণে বিশ্বাস করাতে।” ( কোরান, ২য় অধ্যায়, ১৭৭ শ্লোক ) । আপনাদের প্রধান ভাষ্যকার ঘজ্জালী লিখিয়াছেন—“হৃদয়কে ঈশ্বরের দিকে নোয়াইয়া আনাই নমাজের মূল উদ্দেশু, নমাজের অন্তরাত্মা ।” অর্থাৎ আমরা যেমন ংস্কৃতে বলি “ভাবগ্রাহী জনাৰ্দ্দনঃ” । ভাল করিয়া না বুঝিয়া আরবী বা উর্দু, আয়াৎ আওড়াইলে তাছাতেই প্রকৃত ধৰ্ম্ম হইবে, এবং তাহা বাঙ্গল স্তোত্র অপেক্ষ বেশী সফল হইবে এ ভ্রান্ত বিশ্বাস ত্যাগ করুন। কারণ এই ভ্রাস্তির ফল বড় বিষময়, একেবারে নরক ; এই জন্ত কোরণে আছে—“কপট বিশ্বাসী নরনারীরা ঈশ্বরকে ভুলিয়াছে, এজন্ত তিনিও তাহাদিগকে ভুলিয়াছেন ।... তাহাদের প্রতি তিনি নরকের আগুনে বাস করার দণ্ড দিয়াছেন।” ( ৯ অধ্যায়, ৬৮৬৯ শ্লোক ) । ফলতঃ ধৰ্ম্মের সঙ্গে ভাষার কোন সম্বন্ধ নাই । ধৰ্ম্ম প্রাদেশিক বা কোণ বিশেষ ভাষায় লিখিত পুথিতে আবদ্ধ—এমন সংস্কারকে মনে স্থান দিয়া পবিত্র ধৰ্ম্মকে হীন করিবেন না । ধৰ্ম্ম সাৰ্ব্বজনিক, ধৰ্ম্ম সনাতন, ধৰ্ম্ম হৃদরের ভাষায় হৃদয়েশ্বশ্বের সঙ্গে কথা বলে । (৩) তারপর, যদি বা আপনার অনেক চেষ্টার উর্দ