পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] অন্ধকার আদি ও অস্ত বলিয়া যে দুটা শব্দ আছে তাহ তখন রচনাই হয় নাই। সে অন্ধকার তুলনা দিয়া, বর্ণনা করিয়া বুঝান যাইবে এমন কিছু উপায় নাই। যে জ্ঞানের দ্বারা আমরা পদার্থের সত্তা অনুমান করিয়া লইতে পারি সে জ্ঞান সেই দেশ-কাল-নিমিত্তহীন সৃষ্টিপূৰ্ব্বের কারণবারিধিকে ধরিতেই পারে না, তবে এই জ্ঞানেরও অজ্ঞাত আর কোন জ্ঞান যদি থাকে সেই জ্ঞানে স্বষ্টির আরম্ভের চিত্রাভাস মনে আনিয়া দিতে পারে । পুরাণ বলিতেছেন এষ্ট কারণ-বারিধিতে ব্ৰহ্মা প্রথমে জন্মলাভ করিলেন, তাহার পর বিষ্ণু, তাহার পর রুদ্র । জন্মলাভ করিয়াই তাহারা চারিদিকে চাঙ্গিয়া দেখিলেন,SumitaBot (আলাপ) নাহে ন রাত্রিন নভো ন ভূমির নাসীৎ তমো জ্যোতিরভূন্ন চান্যৎ । • তাঙ্গার দেখিলেন কেবল অন্ধকার । এ অন্ধকার যে জ্যোতির অভাবজনিত অন্ধকার তাঙ্গা নহে, এ অন্ধকার স্বষ্টির পূর্বের নিখিল স্বষ্টির বীজধাত্রী কারণময় অন্ধকার । র্তাঙ্গার মুদিত নয়নে দেখিলেন কেবল অন্ধকার, আবার চোথ চাহিয়া দেখিলেন কেবল অন্ধকার । সহসা অশব্দ্য প্রলয়ান্ধকার, “তপঃ” এই মহাগৰ্ত্তীর শব্দে বিচলিত হইয়। উঠিল । স্মৃষ্টির আরম্ভে এই প্রথম শব্দ তপঃ। যে মাত্র মহা নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করিয়া সৰ্ব্ব প্রথমে এই অতি গভীর অন্তর্ভেদী শব্দ দিগেদশচীন কারণ-সমুদ্রে প্রতিধ্বনিত হুইল তখনই কোথা হইতে এক অপূৰ্ব্ব জ্যোতির রেখা অনন্ত অন্ধকারকে পরাজিত করিয়া প্রস্ফুটিত হইয়া উঠিল । স্বষ্টির প্রারম্ভে ধ্বনিতীন ব্ৰহ্মাণ্ডের সেই সৰ্ব্ব প্রথম ধ্বনি এখনও ধবনিত হইতেছে । আমরা কেবলই যথন অন্ধকারে ছাতড়াইয়া মরিতেছি, দিগেদশ নির্ণয় করিবারও কোন উপায় পাইতেছি না, তখনই সেই এক গম্ভীর শব্দ শুনিতে পাষ্টতেছি “তপঃ !” স্বষ্টি-তত্বের পুরাণবর্ণিত এই উপাখ্যানটা আমাদের মনের কাছে এত সুস্পষ্ট, যে, তাহার জন্য আর কোন যুক্তি তর্ক প্রয়োজন হয় না । স্বষ্টি কিসে আরম্ভ চইল ? তপস্তায় । নুতন স্বষ্টি কিসে হইতে পারে ? সেও এই তপস্তায় । একবার স্বষ্টি হইলে তাঙ্কাতে কিছু চিরদিন চলে না । . প্রতিদিনই প্রলয়,-প্রতিদিনই তন সৃষ্টি । 8 তপস্যা ૨G আরও ভাল করিয়া বলিতে গেলে বণিতে হয়, প্রতি নিমেষেষ্ট প্রলয়, আর প্রতি নিমেষেই নুতন স্বষ্টি হইতেছে, তাই জগৎ চিরনবীন। যেমন বটগাছের ক্ষুদ্র বীজের ভিতরই প্রচ্ছন্নভাবে একটী ক্ষুদ্র বটগাছ রহিয়াছে তেমনি অনন্তকালের সমস্ত লক্ষণগুলি ক্ষুদ্র વાસ્ત્રો নিমেষেও আছে, সে যে অনন্তকাল মহান মহীরুঙ্গেরই একটা ক্ষুদ্র বীজ। স্বষ্টিও যেমন নিত্য, প্রণয়ও তেমনি নিত্য। এই জন্য মুহুর্তে মুহুর্তে প্রলয়, আবার মুহুর্তে মুহূর্তে নুতন নূতন স্বষ্টি । তাই, “তপঃ” এই ধ্বনির আর বিরাম নাই । দিন নাই, রাত্রি নাই, প্রলয়ের অশদ্য অন্ধকার ভেদ করিয়া যে ধ্বনি উঠিয়াছিল, সেই ধ্বনি নিমিষে, নিমিষে প্রাণের প্রতি স্পন্দনে, অস্তরেরও অস্তরে, অস্তরে বাহির,—বৃক্ষলতাগুন্মে—নদীসমুদ্রে, সৰ্ব্বগামী বায়ুতে প্রতিধ্বনিত হইতেছে । আমরা দিনরাত্রিই তপস্যা করিতেছি, কতকটা জানি, আর অনেকটাই জানি না । জানিয়া যে তপস্তা করিতেছি তাহার স্মৃষ্টি প্রত্যক্ষ, অজ্ঞাত তপস্তায় অজ্ঞাত নিগুঢ় স্মৃষ্টিকার্য্য চলিতেছে। “তপঃ” এই শব্দটার অর্থ কি ? ভগবান তপস্তার দ্বারা জগৎ সৃষ্টি করিয়াছিলেন, শাস্ত্রে আমরা এই কথা জানিতে পাই । তিনি অখণ্ড, পূর্ণ ও আনন্দময় । আপনাকে খণ্ড করিয়া, আপনার অংশ দিয়া—আপনার আনন্দ দিয়া তিনি পরিপূর্ণ গ্রহমণ্ডলের সহিত নিখিল জীবধাত্রী জগৎ সৃষ্টি করিলেন । আপনাকে বিলাষ্টয়া দেওয়া সহজ কাজ নহে, জগৎ সৃষ্টি যেমন কঠিন কাজ, আপনাকে বিতরণ করাও তেমনি কঠিন কাজ । এই কঠিন কার্য্য সিদ্ধির জন্ত যে সাধন যে প্রয়াস তাহাচ্চ তপস্তা । ভগবানের তপস্তায় “তপঃ” এই শব্দটা কঠিন প্রস্তরে নিৰ্ম্মিত স্বধাভাণ্ডের স্তায় ত্যলোক হইতে নবজাগ্ৰত জগতে পতিত হইল। ভগবানের তপস্তায় “তপঃ” এই জাগরণের মন্ত্র যেমন দেশ কাল পাত্র জাগ্রত করিয়া ধ্বনিত হইল অমনি প্রথম সূর্য্যোদয়ে যেমন মুদিত পদ্ম প্রস্ফুটিত চট্রয় উঠে, তেমনি অন্ধকার কারণ-রারিধিতে নিবিড় আনন্দ-জ্যোতিতে ধীরে ধীরে লীলtশতদল বিকশিত হইয়া উঠিল । নবজাগ্ৰত সপ্তর্ষিমণ্ডলে সপ্তস্বরায় অনাহত ধ্বনি উঠিল “আনন্দম পরমানন্দম।”