পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

86 8 স্বর, নিজের প্রয়োজনের সঙ্গে অহঙ্কারের সঙ্গে যার মিল নেই—যার মিল আছে আকাশের নীলিমার সঙ্গে, প্রভাতের আলোর সঙ্গে, যার মিল আছে ত্যাগীর ত্যাগের সঙ্গে, বীরের অভয়ের সঙ্গে, সাধুর প্রসন্নতার সঙ্গে, সেই মুরটি যখন বাজে তখন মায়ের কোলের অতি ক্ষুদ্র শিশুটিও আমাদের সকল স্বাথের উপরে চেপে বসে ; সেই স্বরেক্ট আমরা ভাইকে চিনি, বন্ধুকে টানি, দেশের কাজে প্রাণ দিই ; সেই স্বরে সত্য আমাদের দুঃসাধ্য সাধনের দুর্গম পথে অনায়াসে আহবান করে ; সেই স্বর যখন বেজে ওঠে তখন আমরা জন্মদরিদ্রের এই চিরাভ্যস্ত কথাটা মুহুর্তেই ভুলে যাই যে, আমরা ক্ষুধাতৃষ্ণার জীব, আমরা জন্মমরণের অধীন, আমরা স্তুতিনিন্দায় আন্দোলিত ; সেই স্বরের স্পন্দনে আমাদের সমস্ত ক্ষুদ্র সীমা স্পন্দিত হয়ে উঠে আপনাকে লুকিয়ে অসীমকেই প্রকাশ করতে থাকে। সে সুর যখন বাজেন তখন আমরা ধূলির ধূলি, তথন আমরা প্রকৃতির অতি ভীষণ প্রকাও যন্ত্রটার মধ্যে আবদ্ধ একটা অত্যন্ত ক্ষুদ্র চাক, কাৰ্য্যকারণের শৃঙ্খলে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িত। তখন বিশ্বজগতের কল্পনাতীত বৃক্তত্ত্বের কাছে আমাদের ক্ষুদ্র আয়তন লজ্জিত, বিশ্বশক্তির অপরিমেয় প্রবলতার কাছে আমাদের ক্ষুদ্র শক্তি কুষ্ঠিত । তখন আমরা মাথা হেঁট করে দুই হাত জোড় করে অহোরাত্র ভয়ে ভয়ে বাতাসকে আলোকে স্বৰ্য্যকে চন্দ্রকে পৰ্ব্বতকে নদীকে নিজের চেয়ে বড় বলে দেবতা বলে যখন-তথন যেখানে-সেখানে প্রণাম করে করে বেড়াঙ্ক । তথন আমাদের সঙ্কল্প সঙ্কীর্ণ, আমাদের আশা ছোট, আকাজক্ষা ছোট, বিশ্বাস ছোট, আমাদের আরাধ্য দেবতাও ছোট। তখন কেবল থাও, পর, স্বখে থাক, হেসে খেলে দিন কাটাও এইটেই আমাদের জীবনের মন্ত্র। কিন্তু সেই ভূমার স্বর যখনি বৃহৎ আননের রাগিণীতে আমাদের আত্মার মধ্যে মঞ্জিত হয়ে ওঠে তখনি কাৰ্য্যকারণের শৃঙ্খলে বাধা থেকেও আমরা তার থেকে মুক্ত হই, তখন আমরা প্রকৃতির অধীন থেকেও অধীন নষ্ট, প্রকৃতির অংশ হয়েও তার চেয়ে বড় ; তখন আমরা জগৎসৌন্দর্যের দর্শক; জগৎঐশ্বৰ্য্যের অধিকারী, জগৎপতির আনন্দভাণ্ডারের অংশ —তখন আমরা প্রকৃতির বিচারক, প্রকৃতির স্বামী । নী—মাঘ, ১৩১৭ • - مح" "م-- ۰ - ۳ مه همه مسیه ۰۰ --.- ,- ع-.-.---ه •ম ভাগ, ২য় খণ্ড আজ বাজুক ভূমানন্দের সেই মেঘমন্ত্র স্বন্দর ভীষণ সঙ্গীত যাতে আমরা নিজেকে নিজে অতিক্রম করে অমৃতলোকে জাগ্রত হষ্ট ! আজি আপনার অধিকারকে বিশ্বক্ষেত্রে প্রশস্ত করে দেখি, শক্তিকে বিশ্বশক্তির সহযোগী করে দেখি, মর্ত্যজীবনকে অনন্তজীবনের মধ্যে বিধৃতরূপে ধ্যান করি । বাজে বাজে জীবনবীণা বাজে ! কেবল আমার একলার বীণা নয়—লোকে লোকে জীবনবীণা বাজে ! কত জীব, , তার কত রূপ, তার কত ভাষা, তার কত সুর, কত দেশে কত কালে, সব মিলে অনন্ত আকাশে বাজে বাজে জীবনবীণা বাজে ! রূপ-রস-শব্দ-গন্ধের নিরস্তর আন্দোলনে, মুখ দুঃখের, জন্ম মৃত্যুর, আলোক অন্ধকারের নিরবচ্ছিন্ন আঘাত অভিঘাতে বাজে বাজে জীবনবীণা বাজে ! ধন্ত আমার প্রাণ, যে, সেই অনন্ত আনন্যসঙ্গীতের মধ্যে আমারও স্বরটুকু জড়িত হয়ে আছে ; এই আমিটুকুর তান সকল-আমির গানে স্বরের পর মুর জুগিয়ে মৗড়ের পর মৗড় টেনে চলেছে। এই আমিটুকুর তান কত স্বর্য্যের আলোয় বাজচে, কত লোকে লোকে জন্মমরণের পর্য্যায়ের মধ্য দিয়ে বিস্তীর্ণ হচ্চে, কত নব নব নিবিড় বেদনার মধ্য দিয়ে অভাবনীয় রূপে বিচিত্র হয়ে উঠচে ; সকল-আমির বিশ্বব্যাপী বিরাটুবীণায় এই আমি এবং আমার মত এমন কত আমির তার আকাশে আকাশে ঝঙ্কত হয়ে উঠচে । কি সুন্দর আমি ! কি মহৎ আমি ! কি সার্থক আমি ! আজ আমাদের সাম্বৎসরিক উৎসবের দিনে আমাদের সমস্ত মন প্রাণকে বিশ্বলোকের মাঝখানে উন্মুখ করে তুলে ধরে এই কথাটি স্বীকার করতে হবে যে, আমাদের আশ্রমের প্রতিদিনের সাধনার লক্ষ্যটি এই যে, বিশ্বের সকল স্পর্শে আমাদের জীবনের সকল তার বাজতে থাকবে অনন্তের আনন্দগানে। সঙ্কোচ নেই, কোথাও সঙ্কোচ নেই, কোথাও কিছুমাত্র সঙ্কোচ নেই ;—স্বার্থের সঙ্কোচ, ক্ষুদ্র সংস্কারের সঙ্কোচ, ঘৃণাবিদ্বেষের সঙ্কোচ– কিছুমাত্র না! সমস্ত অত্যন্ত সহজ, অত্যন্ত পরিষ্কার, অত্যন্ত খোলা, সমস্তই আলোতে ঝলমল করচে তার উপর বিশ্বপতির আঙুল যখন যেমনি এসে পড়চে অকুষ্ঠিত স্বর তৎক্ষণাৎ ঠিকটি বেজে উঠচে। জড় পৃথিবীর জলস্থলের