পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] বিকাশ লাভ করিতেছে । এমন কি সম্প্রতি আমাদের সমাজে ত্যাগ, বৈরাগ্য, সন্ন্যাস, পরোপকার, লোকহিত, মানবসেবা প্রভৃতি আধাত্মিক ও নৈতিক সত্যগুলিকে জীবনে উপলব্ধি করিবার যে সকল প্রয়াস দেখিতে পাওয়া যাক্টতেছে তাহাও প্রকৃত প্রস্তাবে পাশ্চাত্যশিক্ষাপ্রস্থত । আমাদের প্রাচীন উপনিষদ ও বেদান্তের উপদেশ আমরা নুতনভাবে ইউরোপের নিকট প্রাপ্ত কষ্টয়া গীতা-প্রচারে দর্শনালোচনায় এবং নিষ্কাম কৰ্ম্মে জীবন উৎসর্গীকরণে প্রবৃত্ত হইয়াছি। আমাদের আধুনিক সন্ন্যাসী ও কৰ্ম্মযোগিগণ গেটে, কালাইল, এমার্সন, রাঙ্কিন, টলষ্টয় প্রভৃতি ইউরোপীয় ঋষিগণের শিষ্য। ফরাসীবিপ্লবের সময় কষ্টতে ইউরোপ নানা কারণে বহু ঘাত প্রতিঘাতের পরে, সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীন চিন্তা, ব্যক্তিত্ব বিকাশ, আত্মার পরিপূর্ণত, নিম্নজাতির অধিকাব, ডিমক্রেসি, সোঙ্গালিজম প্রভৃতি সমাক্‌ অবধারণ করিতে আরম্ভ করিয়াছে । ইহার ফলে ইউরোপের সাহিত্যক্ষেত্রে, ব্যবসায়ে, ধৰ্ম্ম ও নৈতিক জীবনে যে ব্যাপক ও সৰ্ব্বতোমুখী আন্দোলন উপস্থিত হইয়াছে তাঙ্গর প্রভাবে সমাজে ভাবুকত, আধ্যাত্মিকতা এবং অতিপ্রাকৃত ও অভাবনীয় ভােব প্রবিষ্ট কষ্টয়া ইউরোপে এক “অফ-ক্লেবাঙ্গ” বা নবযুগেব প্রবর্তন করিয়াছে। ইউবোপের এষ্ট “রোমাণ্টিক” আধ্যাত্মিক বিপ্লবই আমাদের আধুনিক বৈদাস্তিক আন্দোলনের মূল প্রস্রবণ । ভারতবর্ষ ইউরোপেব নিকট ঋণী একথা স্বীকার করিলে ভারতবর্ষের কোন গৌরব হানির আশঙ্কা নাই । মানবজাতির সভ্যতা এষ্টরূপ পরস্পর আদান প্রদানেই পরিপুষ্টলাভ করিয়া থাকে। ভারতবর্ষ প্রাচীনকালে কতকগুলি সত্য আবিষ্কার করিয়া মানলের সভ্যতা ভাণ্ডারে দান করিয়াছিল। আজকাল কতকগুলি নূতন সত্যের উপহার লইয়া আধুনিক ইউরোপ মানবজাতির দ্বারে দণ্ডায়মান । মিশরীয়, ব্যাবিলনীয়, গ্ৰীক প্রভৃতি অন্যান্য প্রাচীন সমাজ নিজ নিজ দাতব্য দান করিতে করিতেই অতীতের গর্ভে লীন হইয়া গিয়াছে। তাহারা স্বতন্ত্র উপায়ে এই আধুনিক সভ্যতা গ্রহণ করিয়া নূতন সত্য দান সাহিত্যসেবী হষ্টতেছে । সকল দিকে আমাদের স্বতন্ত্র জীবনীশক্তি 8ፃ » করিবার অধিকার প্রাপ্ত হয় নাই। কিন্তু প্রাচীন ভারত এক বিচিত্র অমরতা লাভ করিয়া আজিও বিদ্যমান রহিয়াছে এবং আধুনিক সত্যগুলিকে নিজ বিশেষত্বের দ্বারা অমুরঞ্জিত করিয়া মানবজাতির ইতিহাসের এক নূতন অধ্যায় উন্মুক্ত করিবার আয়োজন করিতেছে । আধুনিক গ্রীস আধুনিক মিশর প্রাচীন জীবনের কোন সাক্ষ্যই বহন করে না, কিন্তু আধুনিক ভারত ইউরোপীয় জলে ধৌত হুইয়াও প্রাচীনের পারম্পর্য্য রক্ষা করিতেছে। ভারতবর্ষই যথার্থ ভাবে প্রাচীন ও নবীন, প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের সম্মিলনস্থল । এই সঙ্গমক্ষেত্রে যে অপূৰ্ব্ব সমন্বয়ের সংঘটন হইতেছে তাহ কেবলমাত্র ষ্টউরোপেরই অভিনয় বা প্রাচীন ভারতেরক্ট পুনরাবৃত্তি নষ্ঠে, ইহা নূতন মূৰ্ত্তিতে ভারতবর্ষের অভিনব শক্তির প্রকাশ-নবযুগোপযোগী নবরূপ পরিগ্রহ । আমাদের সমাজ যে জীবনীশক্তি হারাষ্টয়া বিশ্বসভ্যতার এক অতি নিম্নস্তর-প্রোথিত অস্থিকঙ্কালের দ্যায় নিম্পন্দ অসাড় কষ্টয়া পড়িয়া নাই তাহার প্রধান পরিচয় এই ষে নূতন পারিপাশ্বিকের অম্ববর্তন এবং নুতন নুতন হযোগসমূহ ব্যবহার করিতে যাইয়াও আমাদের স্বাতন্ত্র্য বিনষ্ট হয় নাট। আমরা বেষ্টনীকে নিজের স্বতন্ত্র পুষ্ট সাধনের উপযোগীরূপে ব্যবহার করিতে সমর্থ হইতেছি ; ইহার ফলে যে এক নূতন জীবনে পদার্পণ করিতেছি তাহার অভিবাক্তিস্বরূপ এক অভিনব সাহিত্যের গঠন আরম্ভ শ্লষ্টয়াছে। যে ভাষাসম্পদের অধিকারী হষ্টয়া মানব নিজের বিশেষত্বের উপলব্ধি করে, এবং ষে সাহিত্যশক্তির প্রভাবে মানবের জাতিগত বৈষম্য পরিপুষ্ট হয়, ৰে ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশের ফলে আধুনিক ইউরোপের বিভিন্ন জাতিসকল মধ্যযুগে স্বাতন্ত্র্য ও স্বাধীনতার পথে অগ্রসর হইতেছিল, যাচfর বিক্ষোভে আন্দোলিত হইয়া ফ্রান্সের রাষ্ট্র বিপৰ্য্যস্ত হইয়া পড়িয়াছিল এবং যাহার ঐশ্বৰ্য্য ত্রিধা-বিভক্ত অস্তিত্ববিহীন পোলাও প্রদেশেরও অধিবাসীবৃন্দকে আলোকিত ও অনুপ্রাণিত করিয়া রাথিয়াছে, আমরা নূতনু ভাব ও কৰ্ম্মশক্তিসমূহের সংস্পর্শে আসিয়া জীবস্ত জাতির বিশেষ লক্ষণ সেই ভাষাসম্পদ ও সাহিত্য-ঐশ্বর্ঘ্যের অধিকারী হইয়াছি। আমাদের নূতন স্বভাব, নূতন জীবন, নূতন আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করিবার