পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্য ] বিকানীর আমরা বঙ্গবাসী অনেকেই রাজপুতানার বিকানীর রাজ্যের নাম শুনিয়া থাকিলেও, এরাজ্যের বিবরণ অতি অল্পই বিদিত আছি, আজ পাঠকগণের অবগতির জন্য সংক্ষেপে বিকানীরের ঐতিহাসিক বিবরণ কিঞ্চিৎ উল্লেখ করিব। বিকানীর রাজপুতানার মরুভূমি প্রদেশে অবস্থিত। ইঙ্গর উত্তরে ভাওয়ালপুর ও সার্ষ, ; পূৰ্ব্বে হিসার জেলা ( ব্রিটিশ ) ও জয়পুর রাজ্য ; দক্ষিণে যোধপুর ; এবং পশ্চিমে যশল্পীর ও ভায়ালপুর। আয়তনে ২২৩৪০ বর্গমাইল । বোধহয় দেশীয় রাজ্যের মধ্যে আয়তনে বিকানীর চতুর্থ কিম্বা পঞ্চম স্থান অধিকার করিবে, কিন্তু মরুভূমি প্রদেশ বলিয়া ইহার লোকসংখ্যা অতি অল্প এবং কৃষির উপযোগ ক্ষেপ্ত অতি সামান্য । সমগ্র রাজ্যে কলিকাতা নগরীর লোকসংখ্যার চেয়েও কম অধিবাসী । ১৮৯১ খৃষ্টাব্দের আদম-মৃমারিতে দেখা গিয়াছে তৎকালে ৮৩১৯৪৩ জন অধিবাসী ছিল । কিন্তু উঠার পর ১৮৯২, ১৮৯৭ এবং ১৯০e খৃষ্টাব্দে ক্রমে তিনবার ভীষণ দুর্ভিক্ষ হওয়ায় লোকসংখ্যা ১৯০১ খৃষ্টাব্দের আদম-মুমারীতে কিঞ্চিদধিক পাচ লক্ষে দাড়ায়। এ কয়েক বৎসরে তেমন দুর্ভিক্ষ না হক্টলেও পূর্বের সংখ্যা এখনও পূরণ হইতে অনেক বাকী। এখানকার অধিবাসীর দশমাংশ মুসলমান । বিকানীর-রাজবংশের পূর্বপুরুষ কনৌজের মহারাজা জয়টাদ। জয়চাদের বুদ্ধ-প্রপৌত্র রাও সিয়াজি তাহার রাজ্যের পতনাবস্থায় দেশত্যাগ করিয়া বর্তমান যোধপুরের অন্তর্গত পালী নামক স্থানে গিয়া বাস করিতে থাকেন ( ১২১১ খৃঃ ) । তাহার বংশধর রাও যোধা বর্তমান যোধপুর সহর হইতে চারি মাইল দূরবর্তী মান্দোর নামক স্থানে অবস্থান করত: যোধপুর সহর নিৰ্ম্মাণ করিয়া ক্রমে যোধপুর রাজ্য স্থাপন করেন । এই যোধার পুত্র বিকা যোধপুর হইতে কতিপয় আত্মীয় স্বজন এবং পাচশত পদাতিক এবং একশত অশ্বারোলী সৈন্ত লইয়া বর্তমান বিকানীর অভিমুখে যাত্রা করেন ( ১৪৬৫ খৃ: ) এবং বিকানীর হইতে ১৬ মাইল দূরবর্তী দেশমুক গ্রামে পৌছিয়া কাণিজি নামী অলৌকিক শক্তিসম্পন্ন। এক চারণ বিকানীর মহিলার পূজা করেন। তিনি পুজায় সস্তুষ্ট হইয়া বিকার ভবিষ্যৎ বলিতে আরম্ভ করেন এবং বিক। তাছার ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ীই চলিতে থাকেন । এ প্রদেশে এক্ট ভবিষ্যদ্বাণী অনেকটা গ্রীসের ভেলকি আরেকলের দ্যায় বিবেচিত হয়। আজ পর্য্যন্তও এখানকার রাজা এবং সাধারণ লোকে কাণিজিকে দেবীরূপে পূজা করে। বিকাব সহিত এখানকার আদিম অধিবাসী জাট এবং ভাটি প্রভৃতির যুদ্ধ বাধিয়া যায়। বিকার সৈন্তসংখ্যা ক্রমে বৰ্দ্ধিত হইতে থাকে । ক্ষমতা বাড়াইবার জন্তাক্ট বিকা পোগলের ভাট রাজদুহিতার পাণিগ্রহণ করেন, কিন্তু কিছুতেই আর বন্ধুত্ব স্থাপিত হয় না । যুদ্ধ চলিতে থাকে। অবশেষে বিকা একে একে যাবতীয় আদিম এবং স্থানীয় শক্তিকে পরাস্ত করিয়া এ রাজ্যের অধীশ্বর হন । এবং তাহার নাম হইতেই এ রাজ্যের নাম বিকানীর হইয়াছে । ১৪৯০ খৃঃ যোধপুরাধিপতি যোধার মৃত্যু হয়। তাহার জ্যেষ্ঠপুত্র ছাতানের অকালমৃত্যুতে দ্বিতীয় পুত্র বিকাই যোধপুরের গদিরও অধিকারী হয়েন। কিন্তু বিকার অনুপস্থিতিতে র্তাঙ্গার অপর ভ্রাতা সুজোজি গদি দখল করিয়া বসেন। বিকা ত্রিশ সহস্র সৈন্ত সহ যোধপুর আক্রমণ করিয়া দখল করিয়া লয়েন, কিন্তু শেষে তিনি র্তাহার ভাইকে যোধপুর অর্পণ করিয়া বিকানীরে ফিরিয়া আসেন । ইহঁর রাঠোর বংশীয় রাজপুত । এক যোধপুর-রাজ যোধার বংশধরগণই আজ পর্য্যন্ত ছোট বড় আটটি দেশীয় রাজ্যের অধীশ্বর, যথা—বিকানীর, যোধপুর, ইদর, কিষণগড়, ঝাবোয়া, রাৎলাম, শৈলানা এবং শিতামউ। এই সাড়ে চারিশত বৎসরে বিকা হইতে আরম্ভ করিয়া বর্তমান মহারাজা পৰ্য্যন্ত বিশজন রাজা বিকানীরের গদিতে অভিষিক্ত হইয়াছেন । ইহঁাদের রাজত্বের প্রথম ভাগের ইতিহাস কেবল যুদ্ধবিগ্রহেই পূর্ণ। কখন যোধপুর, কখন জয়পুর, কখন উদয়পুর, কখন যশষ্মীর, আবার কখন বা দিল্লীর বাদসাহেরু সঠিত যুদ্ধ চলিত। তাছাড়া বুজ্যের অধীনস্থ সর্দার অর্থাৎ জমিদারগণ প্রায়ই বিদ্রোঙ্গী হইয়া গোলমাল বাধাইত। তাহাদিগকে শাসনে রাখিতে প্রায়ই গৃহ-যুদ্ধ হইত। ষোড়শ রাজা স্বরতের রাজত্বকালে