পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্য। ] না থাকার মধ্যে —অন্ততঃ আমার ত কিছু দেখিতে পাইলাম না। বড়দিনের পূৰ্ব্বে খুব কম লোকে এই প্রদর্শনী দেখিয়াছে। বড়দিনের ছুটিতে এলাহাবাদে নান প্রকার সভাসমিতির অধিবেশন হু ওয়ায় লোকে একাগ্রচিত্তে বেশী সময় দিয়া উহ। দেখিতে পায় নাই, দেখিতে গিয়া অতিরিক্ত জনতা বশতঃ কোন বিভাগই ভাল করিয়া দেখে নাই এবং কোন কোন গৃহে ঢুকিতেই পারে নাই। এখন জনতা নাই, সভাসমিতিও শেষ হইয়া গিয়াছে, কিন্তু দর্শক কোথায় ? সেইজন্ত মনে হয় যে প্রদর্শনীতে সংগৃহীত শিক্ষার জিনিস ও বিষয়গুলি একটি মিউজিয়ম্ (Musium) করিয়া এলাহাবাদে রাখিলে বড় ভাল হয়। প্রদর্শনীর গৃহ রহিয়াছে, জিনিসগুলিও আছে, কেবল রক্ষণাবেক্ষণের খরচ স্বদ হইতে চলিতে পারে এরূপ টাকা সংগৃহীত হইলেই হয়। পূৰ্ব্বেষ্ট বলিয়াছি অধিকাংশ লোকে আমোদের জন্ত তামাসা দেখিতে গিয়াছিল ও যাইবে । আমোদের বন্দোবস্তও আছে বহুবিধ। সন্ধ্যা হইতে না হইতে বৈদ্যুতিক আলোকমালায় সমুদয় প্রদর্শনী-গৃহ ও ক্ষেত্র উদ্ভাসিত হষ্টয় উঠে। সিংহদ্বার ও ঘড়িস্তম্ভ (Clocktower) আলোকেই গঠিত বলিয়া মনে হয়। সতার ও তারবিহীন টেলিগ্রাফের গৃহের উপরের মাস্তুলে Telegraph কথাটি পৰ্য্যায়ক্রমে শ্বেত ও লোহিত আলোকে স্বদুর হইতে দৃষ্টিগোচর হয়। পুষ্পকরথে আকাশে উড্ডয়ন, পালোয়ানের কুস্তি, নাগরদোলা, বিলাতী বাদ্য, দেশী সানাই, হাস্তোদ্দীপন গৃহ, প্রভৃতি আরও কত কি আমোদের বন্দোবস্ত আছে। কিন্তু এতদ্ব্যতীত নাচওয়ালীর গানের বন্দোবস্ত করিয়া প্রদর্শনীর কর্তৃপক্ষেরা দুনীতির পরিপোষণ করিয়াছেন। এ বিষয়ে আগ্ৰা-অযোধ্যা ও অদ্যান্ত কোন কোন প্রদেশের লোকের রুচি যথেষ্ট জঘন্ত, তাহাতে ঘৃতাহুতি দিবার প্রয়োজন ছিল না । এই প্রদর্শনীটি বাস্তবিক সরকারী। সরকার বাহাদুর মনে করেন যে ছাত্র ও ছাত্রীরা একটা রাজনৈতিক বা স্বদেশী মিছিল দেখিলে এবং সুরেন্দ্র বাবু বা শ্ৰীযুক্ত গোখলের বক্তৃতা শুনিলে অধঃপাতে যাইবে। অথচ নাচওয়ালীর গান শুনিতে কাহারও কোন নিষেধ নাই। ভিন্ন প্রদেশের ছাত্রীদের পর্য্যস্ত প্রদর্শনীতে এলাহাবাদ প্রদর্শনী 料>> পাঠাইবার বন্দোবস্ত হইয়াছে । সরকার বাহাদুরের আচরণের মধ্যে এই যে অসঙ্গতি ইহার কারণ সকলেই অকুমান করিতে পারেন। ক্ষুদ্র হইলেও এই প্রসঙ্গে আর একটা কথার উল্লেখ করা উচিত। একটা ঘরে ফুট সীল (seal) নামক সামুদ্রিক জন্তু, তাঙ্গাদের পাখনা (flippers) কাটিয়া ফেলিয়া, রাখা কষ্টয়াছে। নাম c7 sai ķēgtzş mermaid ( Nswatī ) s merman ( মৎস্তনর), এবং হিন্দীতে বড় বড় অক্ষরে "মচ্ছ অবঙার” লেখা হইয়াছে। বড় আশ্চর্য্যের বিষয় যে প্রদর্শনীর কর্তারা জানিয়া শুনিয়া এই জুয়াচুরির প্রশ্রয় দিয়াছেন। উপরে বিলাতী বাদ্য ও দেশী সানাইয়ের উল্লেখ করিয়াছি । এই উভয় প্রকার বাষ্ঠের বন্দোবস্ত আমাদের দুর্দশার কথা মনে পড়াইয় দেয় । কেমন স্বন্দর বারদ্বারীতে বিলাতী বাষ্ঠের বন্দোবস্ত ! তাছার বাহিরে চারিদিকে কেমন সুন্দর বসিবার বন্দোবস্ত । আর দেশী সানাই বাজিতেছে এক অনাবৃত স্থানে ; বাস্তুকরদের দুইজন একটা বেঞ্চে বসিয়া আছে, এবং একজন মাটীতে বসিয়া আছে । আবার ভারতবাসীদেরও রসগ্রাহিতা ও স্বদেশপ্রেম এমনি যে দলে দলে তাঙ্গার বিলাতী ব্যাও, শুনিতেছে,—যদিও তাঙ্কা তাহার। কিছুই বুঝে না এবং তাহা তাহাদের ভালও লাগে না ; কিন্তু দেশী বাস্তের শ্রোতা এক হাতের আঙ্গুলেই গোণা যায়। অথচ আমরা নিজের কথা বলিতে পারি যে এমন স্বমিষ্ট, এমন ভাবোন্দীপক সানাই জীবনে কথনও শুনি নাই । আমাদের যে কেৰল রাজনৈতিক পরাধীনতা ঘটিয়াছে তাহা নয়, হৃদয় মনও পাশ্চাত্য ফ্যাশানের দাস কইয়া পড়িয়াছে। এই প্রদর্শনীতে দেখিবার জিনিস বিস্তর আছে । যাহাদের এলাহাবাদ পর্য্যন্ত গিয়া তথায় তিন চারি দিন থাকিবার সামর্থ্য ও সুবিধা আছে, তাহাদের সকলেরই যাওয়া উচিত। বিশেষতঃ এখন ভিড় না থাকায় আগেকার চেয়ে সকল জিনিস ভাল করিয়া দেখা যাইবে । সঙ্গে সঙ্গে এলাহাবাদের মত প্রাচীন স্থানের সমুদয় তীর্থ এবং ঐতিহাসিক স্তম্ভাদিও "দেখা যাইবে । আমরা কোন বিভাগের বিস্তারিত বৃত্তান্ত লিখিবার চেষ্টা করিব না। কারণ, প্রবাসীর কয়েকখও কেবল প্রদর্শনীর বিবরণে