পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

)ు প্রবাসী-কাৰ্ত্তিক, ১৩১৭ ংকলন ও সমালোচন বাহ-ধৰ্ম্মঞ্চ “মানুষের চিত্ত এমন করিয়া শিক্ষা লাভ করিবে যাহাতে সত্ত্বগুণের দ্বারা মানুষ পশুপ্রবৃত্তির উপর জয় লাভ করিতে পারে ও পুণ্যজ্যোতি সৰ্ব্বত্র অবাধে প্রসারিত হয়—এই অভিপ্রায়েষ্ট জগতে মাঝে মাঝে দিব্যশক্তির আবির্ভাব হইয়া থাকে ।” ইহাই আবদুল বাহার প্রচারিত বাক্য । ইনি বাঙ্গধৰ্ম্মের মূল প্রবর্তক বাহাউল্লার জ্যেষ্ঠ পুত্র। পিত কর্তৃক প্রবর্তিত ধৰ্ম্মের প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার ভার ইহারই প্রতি দ্যস্ত ছিল । বাহাউল্লা তাহার লেখায় ব্যক্ত করিয়াছেন যে তিনিই ঈশ্বরের সাৰ্ব্বজনীন প্রকাশ অর্থাৎ তিনি মানবের সাৰ্ব্বজনীন গুরু । বস্তুত এই বাহা-ধৰ্ম্ম আমাদের যুগে প্রকাশিত একটা সুমহৎ বিশ্বজনীন ধৰ্ম্মোদ্যম, আর সেই কারণেই ইহা আমাদের পক্ষে বিশেষ ভাবে ঔৎসুক্যজনক । ১৮৪৪ খ্ৰীষ্টাব্দে এই ধৰ্ম্মান্দোলনের সূত্রপাত হয় । সকলের নিকট “বব” নামে পরিচিত যুলক আলি মহম্মদ পারস্ত দেশে স্বদেশবাসিগণের নিকট প্রথম চহা প্রচার করেন । তিনি কেবল ছয় বৎসর মাত্র ধৰ্ম্মের প্রকৃত তত্ত্ব শিক্ষাদানে নিযুক্ত থাকিয়া অবশেষে প্রতিকূল পক্ষের হস্তে প্রাণত্যাগ করিয়াছিলেন । পারস্তাদেশে বর্তমান কালে যে এক আশ্চর্যা উদ্বোধন দেখা দিয়াছে “বাব”ষ্ট তাহার সুচনা করেন এবং পরে বাহাউল্লা ও তাঙ্গর পুত্রের চেষ্টায় তাহা সম্পূর্ণ ভাবে বিস্তার লাভ করিয়াছে। যদি এই ধৰ্ম্মান্দোলনের বেগ কেবল মাত্র “বাবে”র শক্তির উপর নির্ভর করিত তবে সম্ভবতঃ ইহা ইসলাম ধৰ্ম্মেরই কথঞ্চিৎ সংস্কার সাধন করিয়া ক্ষান্ত থাকিত। উপদেশ ও ভবিষ্যদ্বাণীর স্বারা “বাব” দলের লোকের মনে, অনতিবিলম্বে র্তাহার অপেক্ষ মহত্তর আর এক গুরুর আগমন-সম্ভাবনার প্রত্যাশা জাগরিত করিয়াছিলেন। বাব কর্তৃক ধৰ্ম্মান্দোলনের উনিশ বৎসর পরে বাহাউল্লা এই ধৰ্ম্মের

  • ধৰ্ম্ম ইতিহাসের আন্তর্জাতিক সভায় মিস্ রোজেনবের্গ, কর্তৃক পঠিত প্রবন্ধ হইতে সঙ্কলিত ।

[ ১০ম ভাগ, ২য় খণ্ড প্রচার-ভার গ্রহণ করিয়া “বাবে”র সেই ভবিষ্যদ্বাণী সফল করেন । তিনি এই ধৰ্ম্মের ক্ষেত্রকে সাৰ্ব্বভৌমিক ভাবে প্রশস্ত করিয়া তুলিয়াছিলেন । বর্তমান কালে পারস্ত দেশের প্রায় একতৃতীয়াংশ লোক এই বাহ-ধৰ্ম্ম গ্রহণ করিয়াছে এবং আমেরিকার যুক্তরাজ্যেও এই মতাবলম্বীর সংখ্যা বহু সহস্ৰ হুইবে । সিকাগোতে, আমেরিকাবাসী বাহামীদিগের উপাসনা-কার্য্যের জন্ত সম্প্রতি একটা স্থান কেনা হইয়াছে ও সেখানে মন্দির প্রতিষ্ঠার আয়োজন চলিতেছে । ইহার উদ্দেশু গির্জার অনুরূপ নহে । সকলে মিলিয়া আধ্যাত্মিক ও শিক্ষা সম্বন্ধীয় আলোচনায় একত্র হইবার জন্তই এই মন্দির সঙ্কল্পিত । রুশীয় তুর্কীস্থানের ইস্কাবাদ নগরে এইরূপ মন্দিরগৃহ সৰ্ব্বপ্রথমে নিৰ্ম্মিত ইয়াছে। ইউরোপে ষ্টুটগার্ট, প্যারিস, লণ্ডন প্রভৃতি স্থানে বাহাধৰ্ম্মীর দল আছে । এষ্ট ধৰ্ম্ম সম্প্রতি ভারত ও ব্রহ্মদেশবাসীদিগের মধ্যেও বিস্তার লাভ করিতেছে ও এই সকল দেশের অসংখ্য মত ও অসংখ্য জাতির মধ্যে প্রকৃত ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব স্থাপনের পক্ষে এই ধৰ্ম্মমত সহায়তা করিলে এরূপ আশা করা যায় । অধিকাংশ চিন্তাশাল ব্যক্তিক্ট স্বীকার কবেন যে আমাদের এই বর্তমান যুগ একটা প্রবল আধ্যাত্মিক চাঞ্চণ্যের যুগ, ইহা গভীরভাবে সত্যানুসন্ধানের যুগ, এবং বর্তমান কালের প্রয়োজন ও আকাজণর সহিত সামঞ্জস্তযুক্ত করিয়া ধৰ্ম্মের মুলতত্ত্বগুলিকে পুনরায় নুতন করিয়া ব্যাখ্যা করিবার জন্স একান্ত ব্যাকুলতার এই যুগ। বাহাউল্লা বলেন যে র্তার ধৰ্ম্মে তিনি নবযুগের এই সমস্ত প্রয়োজন সাধনেরই ব্যবস্থা করিতে পারিয়াছেন । যে প্রণালীতে তিনি তাঙ্গ সাধনের চেষ্টা করিয়াছেন যথাসম্ভব সংক্ষেপে তাহা এস্থলে লিখিত হইবে । বাহাউল্লার শিক্ষা একান্তভাবে কৰ্ম্মপ্রধান । তিনি বলেন, যিনি বিশ্বের সমস্ত যাচাই করিয়া দেখিতেছেন সেই ঈশ্বর, ধৰ্ম্ম সম্বন্ধীয় কেবল মাত্র কতকগুলি মুখের কথাকে আর গ্রহণ করিবেন না—যথার্থ সত্য ও সাধু কৰ্ম্মই কেবল তিনি স্বীকার করিবেন । যাহারা শিষ্য হইতে ইচ্ছা করিয়াছে বাহাউল্লা বিশেষভাবে তাছাদের জন্ত কতকগুলি আচার ও কৰ্ম্মের বিধি স্থির করিয়া দিয়াছেন ।