পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা । ও হিন্দুধৰ্ম্মের আবাসভূমি । এই দুইটি ধৰ্ম্ম যে যে দেশে প্রচলিত সেখানকার বহুদেববাদকে তাতারা আপনার অন্তর্গত করিয়া লইয়াছে ও অনেকটা পরিমাণে বহুদেব বাদকে উন্নত করিয়াছে। পাশ্চাত্য জগতের রাষ্ট্ৰীয় ব্যাপারে ও যুদ্ধক্ষেত্রে ধৰ্ম্মের যে কি মহাশক্তি ছিল তাহা আমরা দেখিয়াছি । এসিয়ার পূর্ব দিকে মুসলমান ধৰ্ম্মের সীমার বাহিরে ধৰ্ম্ম-ইতিহাস অন্তরূপ । যত দিন ভারতে মুসলমান ধৰ্ম্মের প্রাদুর্ভাব ন হইয়াছিল ততদিন এসিয়ার পূর্ব বিভাগে ধৰ্ম্মসংগ্রামের প্রাদুর্ভাব ছিল না । এখানে যত ধৰ্ম্ম-আন্দোলন হইয়াছে বা ধৰ্ম্ম-বিপ্লব ঘটিয়াছে তাঙ্গ রাষ্ট্রবিপ্লবের সহিত জড়িত বা যুদ্ধ বিগ্রঙ্গে অবসিত হয় নাই । ইয়োরোপে ও মুসলমান-অধিকারগত এসিয়ায় বহু শতাব্দী পূৰ্ব্বেষ্ট তথাকার সনাতন দেবমন্দিরের চিকু পৰ্য্যন্ত বিলুপ্ত হইয়াছে ; রাজসরকার ও ধৰ্ম্মসঙ্ঘ এই উভয় শক্তির মিলিত চেষ্টায় ইঙ্গ সম্ভব হইতে পারিয়াছে । ভারতবর্ষেও মুসলমানধৰ্ম্মের তরঙ্গ আঘাত করিয়াছিল ; ভারতবর্ষীয়েরা যদিও পরাভূত হইয়াছিল তথাপি তাহাদের মধ্যে অল্প সংখ্যক ব্যক্তিই মুসলমানধৰ্ম্ম গ্রহণ করিয়াছিল । ভারতের বাচিরে পূর্বদিক্‌বৰ্ত্তী দেশে কোন বিখ্যাত মুসলমান রাজত্বের প্রতিষ্ঠা হয় নাই। এসিয়ার এই অংশে খৃষ্টধৰ্ম্মের বহু পূৰ্ব্ব হইতেই হিন্দুধৰ্ম্ম ও বৌদ্ধধৰ্ম্ম আপনাপন প্রতিপত্তি অক্ষুণ্ণ রাখিয়াছে। এই দুইটি ধৰ্ম্মমতে ব্যাপক ভাবে বহুদেববাদের স্থান আছে, কিন্তু তাঁহা উচ্চতর ভাবুকতার দ্বারা উন্নমিত, ও প্রচলিত নানা মতামতের প্রতিযোগিতায় পরিণতি প্রাপ্ত হুইয়াছে এবং অন্ত কোন অপেক্ষাকৃত সুপ্রতিষ্ঠ ধৰ্ম্মমতের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয় নাই । তখনকার শাসনকৰ্ত্তারা যতই অত্যাচারী থাকুন না কেন, ধৰ্ম্মের প্রতি অত্যাচার তাহাদের নিকট হইতে প্রশ্রয় পায় নাই । বস্তৃত ভিন্ন ধৰ্ম্মাবলম্বীদিগকে নিৰ্ব্বাসিত করা বা বলপুৰ্ব্বক দীক্ষিত করা প্রভৃতি উপদ্রব তখন ছিল না বলিলেই হয়। শাসনকর্তার তাছাদের সিংহাসনকে দৃঢ়প্রতিষ্ঠ করিবার জন্ত প্রজার ধৰ্ম্মকে সমর্থন ও অন্ত ধৰ্ম্মকে দমন করিবার কোন প্রয়োজন বোধ করেন নাই। প্রজা এবং শাসনকর্তার একধৰ্ম্মাবলম্বী হওয়া দরকার, রাষ্ট্রনীতির এই মূলমন্ত্রটি জগতের এই অংশে কোন দিন সংকলন ও সমালোচন—হিন্দুধৰ্ম্ম ও রাষ্ট্রনীতি S)ጳ প্রচলিত ছিল না । উভয় ধৰ্ম্মের জন্মভূমি ভারতবর্ষে বৌদ্ধধৰ্ম্ম হিন্দুধৰ্ম্মকে ডুবাইয়া দিল এবং বহু শতাব্দী পরে হিন্দুধৰ্ম্মের পুনরুত্থানে বৌদ্ধধৰ্ম্ম বিলুপ্ত হইল, কিন্তু ইতিহাসে এই দুই ধৰ্ম্মের সংঘর্ষের কোন বিবরণ প্লাওয়া যায় না অথবা রাজসৈনিক যে এই ধৰ্ম্মবিপ্লবে কোন প্রধান অভিনেতা ছিল এমন কোন কথাও আমরা জানি না। অবশু বৌদ্ধধৰ্ম্ম যে রাজকীয় প্রভাবের নিকট কিছু মাত্র ঋণী নয় এমন কথা বলিতে পারি না । অশোকের চেষ্টায়, তাহার ক্ষমতার গুণে বৌদ্ধধৰ্ম্ম এমন দেশময় ব্যাপ্ত হইতে পারিয়াছিল। অশোক তঁাচার রাজকীয় ক্ষমতাকে বৌদ্ধধৰ্ম্ম প্রচারে নিয়োগ করিয়াছিলেন। যত প্রধান রাজকৰ্ম্মচারীদের প্রতি র্তাঙ্কণর আদেশ ছিল যে তাহারা প্রজাদিগকে মুক্তির পন্থানির্দেশ করিয়া দিবেন । তিনি বিদেশে প্রচারক পাঠাষ্টয়াছিলেন । পুণ্যজীবন লাভ করিতে হইলে কোন সাধনার প্রয়োজন সে সম্বন্ধে অনেক উপদেশপূর্ণ অনুশাসন-লিপি তিনি প্রচার করিয়াছিলেন। অশোক বৌদ্ধধৰ্ম্মকে সমস্ত পৃথিবীর সন্মুখে ধরিয়াছিলেন, তাহা কেবল ভারতবর্ষের মধ্যেই আবদ্ধ ছিল না। অশোক কিন্তু কখনো বলপূৰ্ব্বক প্রজাদিগকে দীক্ষিত করেন নাই। তাহা যদি করিতেন তবে তিনি নিজের অনুশাসন-বিরুদ্ধ কাজ করিতেন, কেন না তাঙ্গার অমুশাসনে পরধৰ্ম্মের প্রতি সহিষ্ণু হইবার জন্য বারম্বাৰ উপদেশ দেওয়া হইয়াছে । অশোক পৌত্তলিকদিগকে নিৰ্য্যাতন করিবার চেষ্টা করেন নাই । যুদ্ধ বিগ্রহের দ্বারা যে বৌদ্ধধৰ্ম্ম ভারতবর্ষে প্রতিষ্ঠিত হয় নাই ইহা সুনিশ্চিত। রাজকীয় প্রভাব ও দৃষ্টাস্তের সাহায্যে বৌদ্ধধৰ্ম্ম-প্রচারের অনেক সুবিধা হইয়াছিল, তথাপি তাহার মধ্যে যে আধ্যাত্মিক শক্তি নিহিত আছে তাহারই জোরে সে জল্পী হইয়াছিল । অন্তসকল ধৰ্ম্মের তুলনায় বৌদ্ধধৰ্ম্মই রাষ্ট্রনীতি হইতে সম্পূর্ণরূপে নির্লিপ্ত, এই কৰ্ম্ম-জগতের কোলাতল হইতে নিভৃতে সন্ন্যাস-সাধনের উচ্চ উপযোগী ধৰ্ম্ম, পার্থিব ব্যাপারেব সঙ্গিত যোগ তাeার एठाब्रट्टे । কোন রাজনৈতিক বিপ্লবের ফলে বৌদ্ধধৰ্ম্ম ভারতবর্ষ হইতে দূরিত হয় নাই। মুসলমানরা ভারতে পদার্পণ করিবার পুৰ্ব্বেষ্ট বৌদ্ধধৰ্ম্ম ভারতবর্ষ হইতে লোপ পাইয়াছে