পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্য। } স্মৃতি ও যুক্তিবিরোধী। এপ্রকার কল্পনা অপেক্ষ উপনিষৎ পরিত্যাগ করাই বরং শ্রেয় ( তস্মাৎ শ্রীতি স্মৃতি দ্যায় বিরোধাৎ অনুপপন্ন ইয়ং কল্পনা ; অস্তাঃ কল্পনায়াঃ বরম্ উপনিষৎ পরিত্যাগ; এব। বৃঃ- ভাঃ., ৫ - ) । ৮ । “সৰ্ব্বং খল্বিদং ব্রহ্ম” ৷ এখানে একটী বিষম সমস্ত উপস্থিত হইল। বেদান্ত শাস্ত্রে বলা হইয়াছে সৰ্ব্বং খন্বিদং ব্ৰহ্ম’ ( ছান্দোগ্য উঃ, ৩১৪১ ) “এই পরিদৃশুমান জগৎ ব্রহ্মই” । ব্রহ্ম ভিন্ন যখন দ্বিতীয় সত্তাই নাই তথন জগৎকে ব্রহ্ম না বfললে চলিলে কেন ? কিন্তু তাই বা কি কবিয়া বলি ? ব্রহ্মে কোন প্রকার ভেদই নাই এবং এই জগৎ নানাত্বপূর্ণ। এঅবস্থায় এজগৎকে ব্ৰহ্ম বলি কি প্রকারে ? আমাদের উভয় শঙ্কট— জগৎকে ব্ৰহ্ম বলাও দেtধ আবার না বলা ও দোষ । উপায় কি ? শঙ্কর ইহাব একটা মীমাংসা করিয়াছেন । রজু দেখিয়া যেমন লোকে সৰ্প বলিয়া ভ্ৰম করিতে পারে, শুক্তিক দেখিয়া যেমন রজত বলিয়। ভ্রম হওয়া সম্ভব, গগনকে যেমন লোকে স্বনীল কটাঙ্গতল বলিয়া ভ্রম করে, তিমির-রোগাক্রান্ত ব্যক্তি যেমন এক চন্দ্রের স্থলে দ্ধিচন্দ্র দশন করে, তেমনি অজ্ঞলোকে স্বগতভেদরহিত ব্ৰহ্মকে বিচিত্রতাপূর্ণ জগৎ বলিয়া ভ্ৰম করিতেছে। বিজ্ঞলোক রজুকে রজু বলিয়াই জানিতেছে । আমি কিন্তু রজ্জ্বর স্থলে রজু না দেখিয়া সৰ্প চ দেখিতেছি। বিজ্ঞব্যক্তি আমাকে বলিতে পারেন যে “তুমি যে সৰ্প দেখিতেছ তাং রজুই”। আমার যদি ভুল ভাঙ্গিয়া যায় আমিও সৰ্প না দেখিয় সেস্থলে রজুই দেখিব । সুতরাং এক অর্থে “সৰ্প রজুই,”—এই অর্থে “জগৎ ব্রহ্মই” । ইষ্ঠাকেই বলে “বিবৰ্ত্তবাদ” । রজ্জ্ব কখন সৰ্পরূপে পরিণত হয় না, ব্ৰহ্মও তেমনি জগৎরুপে পরিণত হন নাই। রজুকে যেমন সৰ্প বলিয়া ভ্ৰম করি, তেমনি ব্ৰহ্মকেও এই জগৎ বলিয়া ভ্রম হইতেছে—স্বগতভেদরহিত বস্তুকে নানাত্বপূর্ণ বলিয়া মনে হইতেছে। এথানে একটা কথা মনে রাখা আবশুক । সৰ্প কখন রজ্জ্ব হইতে পারে না এবং রজ্জ্বও কখন সৰ্প তইতে পারে না । তেমনি জগৎও কখন ব্ৰহ্ম হইতে পারে নী এবং ব্ৰহ্মও কখন জগৎ হইতে পারেন না। “এই আত্মা ও অনাত্মা や>Q হস্তী মৃন্ময়”—এই জ্ঞানে দুইটা জ্ঞানের সমালেশ হইয়াছে । ইকাতে ‘হস্তিজ্ঞান’ রঙ্গিয়াছে এবং মৃত্তিকাঙ্গানও বচিয়াছে। এই উভয় জ্ঞানের সম্মিলনে ‘মৃন্ময় হস্তা’র জ্ঞান কষ্টয়াছে । এই অর্থে ঈ কি বলা কইয়াছে যে “ এই সপ রজুই” ? এখানে কি 'রক্ষুজ্ঞান’ ও ‘সপজ্ঞানের’ সমাধিকরণ গুইয়াছে ? "রঞ্জুজ্ঞান এক, "সপজ্ঞান’ অন্ত । এই উভয় জ্ঞানের সমাবেশ তন্তয়া অবশ্যক্ট এথানে কোন নূতন জ্ঞানের উৎপত্তি হয় নাই। যতক্ষণ ‘সপবুদ্ধি’ থাকিবে ততক্ষণ "রজুবুদ্ধি" জাগ্রত হইবে না। সর্প তিরোচিত না হইলে সেগুলে বৰ্জ্জুর আবির্ভাব হইতে পারে না। বিজ্ঞ লোকের নিকটে রজ্জ্ব রজুরূপেষ্ট প্রকাশিত, তাঙ্গাদিগের নিকটে সপের অস্তিত্বষ্ট নাই। বৰ্জ্জু ও সপের মধ্যে যে সম্পর্ক, ব্ৰহ্ম ও জগতের মধ্যেও ঠিক সেই সম্পর্ক । আমরা যে এই বিচিত্র জগৎ দেখিতেছি, প্রকৃত পক্ষে ইঙ্গ বিচিত্র জগৎ নহে ; কেবল ব্ৰহ্মই রহিয়াছেন, আমরা ভ্ৰমান্ধ হইয়াক্ট এই স্থলে স্বগতভেদ রচিত ব্ৰহ্মকে না দেখিয়া বিচিত্রতীময় জগৎত দেখিতেছি । কিন্তু যখন ভুল ভাঙ্গিয়া যাইবে তখন এষ্ট নানাত্বপূর্ণ জগৎ আর দেখিতে পাইব না, ইঙ্গর পরিবর্তে “একরস” ব্ৰহ্মকেই দেখিতে পাইব । এই মত প্রচার করাই শঙ্করের উদ্দেশ্য । এষ্টজদ্যই তিনি বলিয়াছেন—• "বিদ্য। স্বারা অবিদ্যাজনিত জগৎপ্ৰপঞ্চকে লক্ষ কর । লয় করিয়া সেই আয়তনভূত এক আত্মাকে একরস বলিয়া জান”। বেঃ ভাঃ, ১।৩।১। রজু ও সর্পের দৃষ্টাস্ত গুষ্টতে আমরা বুঝিতেছি যে সপ সর্পরূপে রজু নছে ; প্রকৃত কথা এষ্ট এ সৰ্প সর্পষ্ট নতে উগ রজুষ্ট। তেমনি জগৎ জগৎক্ৰপে ব্ৰহ্ম নহে ; যাচাকে জগৎ পলা চক্টলেছে তাঙ্গা জগৎক্ট নহে, তাঙ্গ ব্ৰহ্মষ্ট । এই অর্থেই “সৰ্ব্বং পন্বিদং ব্রহ্ম” । জগৎ জগৎরূপেষ্ট গৃগত হইবে অথচ বলা হইলে এ জগৎ ব্রহ্ম—ষ্টক শঙ্করের মত নহে । জগতের জগত্ত্ব বিনাশ করিয়া টঙ্গার ব্ৰহ্মত্ব স্থাপন করাই শঙ্করের উদ্দেশু । আমরা চারিটি প্রবন্ধে শঙ্করের দার্শনিক মত ব্যাখ্যা করিলাম। পর প্রবন্ধে এক্ট দর্শনের সমালোচনা করিবার ইচ্ছা রহিল । মহেশচন্দ্র ঘোষ ।