পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা l হয়—তাহলে তোমাকেও এত পাঠ মুখস্থ করতে হত না, আমাকেও এত বেগ পেতে হত না । একটি মন্ত্রে সব ঠিক যেমনটি হওয়া উচিত ঠিক তেমনি হয়ে যেত । আমি উৎসাহিত হইয়া বলিলাম—কি গাকশা, সে মন্ত্রটি কি ? এস তোমায় শিখিয়ে দি—বলিয়। গাকশ৷ অনেক যত্নে আমায় নুতন রকমের কতকগুলি কথা মুখস্থ করাইল । তারপর বলিল—এই কথা শুনলে চায়া-ওন্ন! একেবারে মুগ্ধ হয়ে একান্ত তোমারি হয়ে যাবে। এই কথা বলিয়া গাকশা খুব হাসিতে লাগিল । অতিরিক্ত ঔৎসুক্য ও আনন্দের বশে সে দিন সন্ধ্যার অন্ধকার ঘনাইতে না ঘনাইতে আমি চায়াতে গেলাম । যথারীতি অভিবাদন ও চা পানের পর আমি চায়া-ওয়াকে খুব নিকটে টানিয়া বসাইলাম—সেই ছোট মানুষটিকে দূরে রাখিলে যেন তাছাকে খুজিয়া পাইতাম না ; সে যেন সারারাত্রি জাগিয়া দূরবীণ করিয়া দেখিবার মতন অতি দূরের জ্যোতিষ্ক, সে যেন টেবিলের উপর সাজাইয়। রাখিবার পুতুল, সে যেন বুকের উপর বোতাম-বিধে সাজাইয়া সে দিন রাখিবার ফুলটি । তাহার ছোট হাতখানি আমার হাতের মধ্যে তুলিয়া লইলাম--তখন প্রয়াগে গঙ্গা-যমুনার সঙ্গমচিত্র আমার মনে পড়িল । আমি হাসিয়া গাকশার শেখান পাঠ তাঙ্কার কানের কাছে আবৃত্তি করিলাম। গাকশা বলিয়াছিল সে মন্ত্র । বাস্তবিকই সে মন্ত্র সয়তানের, সে মন্ত্ৰ সৰ্ব্বনাশের ! আমার কথা শুনিবামাত্র সে আমার হাত হক্টতে হাত ছিনাষ্টয়া লইয়া বড় রূঢ় দৃষ্টিতে আমার দিকে চাহিল । আমি সে দৃষ্টির অর্থ বুঝিতে না পারিয়া গাকশার শেখান কথার আরো খানিকট আবৃত্তি করিলাম । তখন সে ধমুনিক্ষিপ্ত বাণের মত ছিটকাইয়া সরিয়া দাড়াইল ! তাহার সৰ্ব্বাঙ্গ দিয়া ঘৃণা ভৎসনা অবিশ্বাস বিছুরিত চইতেছিল। আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হইয়। আবার গাকশার শেখান পাঠ বলিতে লাগিলাম। তখন চায়া-ওল্ল চীৎকার করিয়া দোকানের লোকজনদের ঢাকিল, অনেক লোক ছুটিয়া চাষা-ওমা ®8Y আসিল । চায়া-ওয়া তাহদের কি বলিতেই তাহারা আমাকে মারিয়া দোকান হইতে বাতির করিয়া দিতে প্রস্তুত হইল। ব্যাপার কি আমি কিছুষ্ট বুঝতে পারিতেছিলাম না, এবং এমন গণ্ডগোল হইয়া উঠিল যে কাহাকেও কোনো কথা বুঝাইয়া বলিবার বা প্রশ্ন করিবার অবসর রহিল না। এবং দোকানীদের রকম মোটেষ্ট না বুঝিবার মতন নয় বলিয়া আমি জানা না জানার মধ্যে পড়িয়া বড় বিত্রত হইয়া পড়িলাম । এমন সময় দেখি ভিড়ের এক পাশে দাড়াইয়া গাকশা মৃদু মৃদ্ধ হাসিক্রেছে । আমি তাহাকে দেখিয়া যেন অকুল সমুদ্রে স্থল পাইলাম। আমি তাড়াতাড়ি বলিশাম—গাকশা গাকশা, চায়া-ওন্ন হঠাৎ আমার উপর কেন রাগ করেছে ? আমি হয় ত কি বলতে কি বলেছি, কিংবা ও-ই হয় ত শুনতে ভুল করেছে ; তুমি আমার কথাগুলো ওকে বুঝিয়ে বল গাকশ ! 娜 গাকশ হাসিয়া বলিল—বন্ধু, তুমি কিছুষ্ট ভুল বল নি, ওকুসামাও ( মহাশয়াও ) কিছু ভুল শোনে নি—তুমি তাকে বলেছ, তুষ্ট কুৎসিত, তুই আমার দাসী হবার ও যোগ্য ন’স, তোকে আমি একটুও ভাল বাসি না, তোকে আমি ঘৃণা করি, শুধু তোকে নিয়ে এতদিন একটু তামাস কচ্ছিলাম, ইত্যাদি, ইত্যাদি । আমি আশ্চর্য্য ੋ। পাংগুল মুখে বলিলাম-—সে কি গাকশা, আমি তো অমন সব কথা বলতে চাটনি ? গাকশ হাসিয়া বলিল— আমি বলাতে চেয়েছিলাম । আমি উদ্বিগ্নভাবে জিজ্ঞাসা করিলাম—সে কি গাকশা, সে কি ? কেন এমন করণে ? গাকশা তেমনি নিৰ্ব্বিকার ভাবে বলিল—ওকুসামা আমার প্রণয়িনী। তুমি নিপ্পন অপবিত্র করবার পূৰ্ব্বেষ্ট আমার হৃদয় ওঁর শ্রীচরণে উৎসর্গ করেছি। হয় না হয় তুমি ওকুসামাকেই জিজ্ঞাসা কর । এক অদ্ভূত সমস্তা ! আমি গাকশাকে বললাম— গাকশা, তুমি ত পরাজিত হয়েছ, এখন ওকুসামা আমার ! গাকশ হাসিয়া তেমনি নরম ভাবেই বলিল—ককৃখনো না ! যত দিন আমি বেঁচে থাকব তত দিন না ! এই বলিয়। সে নিজের পেশীপুষ্ট বান্তখানা অনাবৃত হাসিতে হাসিতে