পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা | নগর দেখিয়া যতখানি নিরাশ হইবেন, নগরের বহির্ভাগস্থ তরঙ্গায়িত ভূভাগের স্রোতস্বিনী, উপত্যকা, এবং কদলীকুঞ্জবেষ্টিত কুটার ও পল্লী, লবঙ্গবৃক্ষের সারি, এবং বিপুল অরণ্য দেখিয়া ততোধিক উল্লসিত হইবেন । এষ্ট দ্বীপের বিচিত্র সুন্দর শোভা নিঃসন্দেহ দর্শকের চিত্ত স্পর্শ করিবে । * পেম্বাদ্বীপ জাঞ্জিবারের সুলতানের শাসনাধীন। ইতিপূৰ্ব্বে-পারসিক ও পর্তুগিজেরা এই দ্বীপে রাজত্ব করিতেন। রাজত্ব শেষের সঙ্গে সঙ্গে তাঙ্গদের স্মৃতিও বিলুপ্ত হইয়াছে। দ্বীপবাসীদের উপর তাহার কোনো স্থায়ী প্রভাব বিস্তার করিতে পারেন নাই। কিন্তু সুলতানদের শাসনে দ্বীপবাসীদের অবস্থার ও চরিত্রের বিস্ময়কর পরিবর্তন ঘটিয়াছে। প্রায় একশত বৎসর গত চইল জাঞ্জিবারের এক সুলতান এখানকার ভূমি পরীক্ষা করিয়া উচ। লবঙ্গ-চাষের উপযোগী বলিয়, মনে করেন। তিনি এক্ট দ্বীপে সৰ্ব্বপ্রথমে লবঙ্গবৃক্ষ রোপণ করেন । তাঙ্কার চেষ্টা সফলতা লাভ করায় ক্রমশ: এই দ্বীপে লবঙ্গের চাষ বাড়িতে থাকে। এই স্থানটি লবঙ্গের ফসলে পৃথিবীর অপর সকল স্থানকে অতিক্রম করিয়াছে। হিসাব করিয়া দেখা গিয়াছে যে পৃথিবীতে মোট যে পরিমাণ লবঙ্গ উৎপন্ন হইয়া থাকে পেম্বা ও জাঞ্জিবারেই তাঙ্গার সাত-অষ্টমাংশ জন্মিয় থাকে। এই লাভজনক কৃষি প্রবর্তিত হইবামাত্র দ্বীপবাসীদের চরিত্র বদলাইয়া গিয়াছে। তাছার পূৰ্ব্বে একান্ত কৰ্ম্মকুণ্ঠ ও অলস ছিল। এখন বালবৃদ্ধ স্ত্রীপুরুষ কেইষ্ট কৰ্ম্ম-বিমুখ নচে। লবঙ্গ-চয়ন আরম্ভ হইবার পর হইতে উহার সমাপ্তি পৰ্য্যন্ত দ্বীপবাসীদের মুথে দ্বিতীয় কোনো প্রসঙ্গ নাই –লবঙ্গ-সংগ্রহ ও উহার ক্রয় বিক্রয়ের কথা লইয়াই তাহারা দিবারাত্রি মাতিয়া থাকে। নিদাঘ মধ্যাহ্নে যিনি গ্রীষ্মমণ্ডলস্থ এই দ্বীপের লবঙ্গতরুশ্রেণীর মধ্য দিয়া ভ্রমণ করিয়াছেন তিনি তাহার সেই ভ্রমণের সুখ-স্থতি কখনো ভুলিতে পরিবেন না। পত্রিত তরুর বিবামদায়িনী সুশীতল ছায় তাহাকে সাদরে আহবান জানাষ্টয়াছে –নিবিড় মধুর স্বরভি-আকুল বায়ুর শীতলস্পর্শ তাহার আতপ-তপ্ত তনু জুড়াইয়াছে। বহুশাখাযুক্ত সরল লবঙ্গক্রম উচ্চতায় ৬০৭• ফুটের কম নহে। এই বৃক্ষের ঘন পত্রস্তবকের মধ্য দিয়া স্বৰ্য্য সংকলন ও সমালোচন—লবঙ্গ দ্বীপ Q> রশ্মি প্রবেশ করিতে পারে না । শাখাগুলির মাঝখা স্থানে স্থানে যে অবসর আছে সেই সকল ফাঁক দিয়া কির মালা প্রবেশ করিয়া তলদেশে আলো ও ছায়ার লীলা দৃশু স্বষ্টি করে । স্বর্যাস্তের প্রাক্কালে, লবঙ্গকুঞ্জ-মধ্যবং অন্ধকারাবৃত ভূখণ্ডগুলির চারিদিকে অস্তগামী স্বৰ্য্যরশ্মি গুলিকে সোণার রেখা বলিয়া ভ্রম জন্মে। জ্যোৎস্না-ধব রাত্রিকালে লবঙ্গ-তরুকুঞ্জের দৃশু আরো বিস্ময়কর। কোনে কোনো স্থানে রজতণ্ডত্র-চন্দ্রকররাশি ঝক ঝকৃ করিতেছে আবার কোনো স্থানে বা কালো কালো অন্ধকার জমি বসিয়া আছে। এইসময়ে এখানকার গাছপালা ভূমি সকল সজীব বলিয়া প্রতীত হয়। রাত্রি যত বাড়িতে থা:ে প্রাণের স্পন্দন উত্তরোত্তর ততই বাড়িতে থাকে। দিব ভাগে যে জীবগুলি নীরব ছিল, এখন তাহীদের সহঃ কণ্ঠের সমলেত ঝিল্লীরাগিণী দশদিক প্লাবিত করিতেছে মাঝে মাঝে ছোট বড় বানরের কিচিমিচি শব্দও শুনি;ে পাওয়া যায় । লবঙ্গপত্র প্রায় গোলাকার ঈষৎ চেপ্টা । এই চির সবুজ পত্রগুলির উপরিভাগ মন্থণ ও উজ্জ্বল। বাজা:ে যে লবঙ্গ বিক্রীত হয় সেগুলি অবিকশিত পুষ্পমুকুল মুকুলগুলির রং প্রথমে ধূসর থাকে ; ক্রমে বদলাইয়া পাট এবং সর্বশেষে গোলাপী বর্ণে পরিণত হয়। সাধারণত লবঙ্গমুকুলের এক-একটি গুচ্ছে আট হইতে পনরটি— উপরের শাখাগুলির এক একটি গুচ্ছে উহার দ্বিগুণ লবন্ত ফলিয়া থাকে। মুকুলগুলি বিকশিত হইয় ফুলে পরিণত হইলে লবঙ্গের মূল্য কমিয়া যায়। লবঙ্গের অগ্রভাগে টোপরের দ্যায় একটি আবরণ আছে—উৎকৃষ্ট লবঙ্গে সেটি থাকিবেই। মুকুল ফুলে পরিণত হইলে শুকাইবার সময়ে উক্ত আবরণ খসিয়া পড়ে। মুকুল ধরিবার প্রায় পাচ মাস পরে চয়নকার্য আরম্ভ হয়। উক্তকাৰ্য্য প্রায় তিন মাস চলিয়া থাকে । সাধারণতঃ এক একটি বৃক্ষ হইতে একবার মাত্র মুকুল চয়ন করা হয়। কোনো কোনো বৎসর ঐ কাৰ্য্য দ্বিতীয় তৃতীয় বারও চলিয়া থাকে। অছিন্ন মুকুলগুলি কিছুদিন পরে বড় হইয়া একটি দীর্ঘ ফুলের আকার ধারণ করে । এইগুলি হইতে বীজ সংগ্রহ করা হয় ; কারণ সাধারণ লবঙ্গ