পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা | দূর হইয়া গেল। অথও শাস্তিতে ও চূড়ান্ত বিলাগিতায় এখন তাহার দিন গুজরান হইতে পরিবে ;—আর ভাবনা নাই। কাজেই তখন বার্টির মনে পুনরায় ফ্র্যাঙ্কের প্রতি সেই পুরানো স্নেহ ভালবাসা জাগিয়া উঠিল; এখন বার্টি যখন ফ্র্যাঙ্কের সহিত কথা কহে তখন তাহার ক্ষীণস্বরের মধ্যে সত্যই একটা বেদনাভরা আন্তরিক সহানুভূতি থাকে ! ওঃ ! প্রথম কয়দিন কি দুঃখই গিয়াছে ! কিন্তু তবু আঘাতটা যে কত গুরুতর তাঙ্গা তখন বোঝা যায় নাই । তারপর রাগ ঠাণ্ড হইয়া গেলে ফ্র্যাঙ্ক দুঃখে মুহমান, বিস্ময়ে অবাক হইয়া ভাবিতে লাগিলেন,—এ কি হইল ? কেন এমন হইল ? কেমন করিয়া হইল ? তিনি কিছুতেই এ রহস্তের মৰ্ম্মভেদ করিতে পারিলেন না। এমনি গোলমাল হইতে লাগিল যে তাঙ্গার মনে হইল এ যেন এমন একথান বই কে তাঙ্গার সামনে ধরিয়াছে যাঙ্গার মধ্যের পাতা নাই, তাতাতে এমনি খাপছাড়া হইয়া গেছে যে বইয়ের লিখিত ব্যাপারটা কিছুষ্ট বোঝা যাইতেছে না! ইভার সন্দেছ, তাহার রাগ, এ দুটা কোথা হইতে কোন স্বত্র ধরিয়া কেমন করিয়া আসিল তাহা অনেক ভাবিয়া চিন্তিয়াও তিনি ঠিক করিতে পারিলেন না। এ কি বিষম রহস্ত ! তাহার মনে হইল জীবনটা যেন শুধু একটা ধাধা—তাহার আগ গোড়া কিছু বোঝা যায় না । তিনি জানালার ধারে বসিয়া বসিয়া আকাশের পানে চাহিয়া এই জীবন-রহস্তের সমাধান করিবার চেষ্টা করিতেন কিন্তু কোনো কিনারা কষ্টত না । ঘর ছাড়িয়া বাহির হইতেন না-দিনরাত্রি বাড়ির মধ্যে নিরিবিলি বসিয়া আপন মনে কেবল ভাবিতেন । ভাবিতে ভাবিতে সংসারের প্রতি কেমন একটা নিলিগু ভাব র্তাহার হৃদয় অধিকার করিয়া বসিতে লাগিল । আর কিছুর দিকে র্তাহার কোনো আকর্ষণ রঙ্কিল না--তখন সমস্ত দৃষ্টি র্তাহার নিজের জীবনের দিকে ফিরিল। এই সবপ্রথম র্তাহার জীবন, তাহার চরিত্র ভালো করিয়া অশৃেষণ করিবার অবসর পাইলেন-দেখিলেন, তিনি কি হীন, কি অব্যবস্থিত, তাহার সেই পুষ্ট সবল দেহকে জড়াইয়া কি জঘন্ত দুৰ্ব্বলতা বিরাজ করিতেছে! তাহার মনে হইল—তিনি শিশু ! শিশুর শক্তি লইয়া তিনি উন্মত্ত তরঙ্গের সহিত সংগ্রামে প্রবৃত্ত হইয়াছেন, যে ভৈরব সংকলন ও সমালোচন—ভাগ্যচক্র Ꮼ☾ ঝটিকা তাহার জীবনের মুখ শাস্তিকে প্রবল বেগে উড়াইয়া লষ্টয়া চলিয়াছে তাহাকে বাধা দিতে অগ্রসর হইয়াছেন ! কি ধৃষ্টতা ! সে কি তাহার ক্ষুদ্র শক্তিতে সম্ভব ! তবে উপায় ? উপায় নাই দেখিয়া ফ্র্যাঙ্ক নিরাশার বেদনায় অভিভূত হইয়া পড়িলেন । দুঃখটা এত অধিক কষ্টয়া উঠিল যে তাহার সবটা তিনি অনুভব করিতে পারিলেন না,—মানুষের মনে এতটা শক্তি নাই যে সে অত দুঃখ ধারণ করিতে পারে । সময়ট যখন এমনি নিরানন্দে কাটিতেছিল তখন দুই বন্ধু কাছাকাছি এক সঙ্গেই থাকিতেন —ফ্র্যাঙ্ক এতদূর অভিভূত হইয়াছিলেন যে বাড়ির বাহির হইতে পারিতেন না, বাটিও বাহির হইত না, সে সৰ্ব্বদা ফ্র্যাঙ্কের পাশে পাশে বিষন্ন মুথে ঘুরিয়া বেড়াইত। সে তখন সত্যই ফ্র্যাঙ্কের দুঃখে দুঃখিত হইয়া উঠিয়াছিল। সে যে বুঝিয়াছিল ফ্র্যাঙ্ক তাহাকে আবার স্নেহ করিতে আরম্ভ করিয়াছেন ,—মধ্যে যে বাধা ছিল তাত কাটিয়া গিয়াছে । কেমন করিয়া ফ্র্যাঙ্ক এই ধাক্কাট কাটাষ্টয়া উঠিতে পারেন, কিসে তাতার প্রফুল্লতা ফিরিয়া আসে এখন সে সেই চেষ্টাই করিতে লাগিল। পূৰ্ব্বের মতো আবার থিয়েটারে যাতায়াত, নাচ গানের মজলিস, ভোজের বন্দোবস্ত করিবার পরামর্শ দিতে লাগিল । কখনো বলিল চল দেশভ্রমণে পাঙ্গির হওয়া যাক ; কখনো ফ্র্যাঙ্ককে একটা কিছু কাজ গ্রহণ করিবার জন্য জেদ করিতে লাগিল। . কিন্তু তাঙ্কার সব চেষ্টাই নিস্ফল হইল । ফ্র্যাঙ্ক সে সব কথা কানেও তুলিলেন না—তাহার বিমর্ষতার অতলে সবই যেন তলাইয়া যাইতে লাগিল। কিছুতেই তাঙ্গর মনের নিরানন্দ দূর হইতেছিল না ; তখন তাঙ্গর জীবনের মধ্যে একটিমাত্র সাত্বনা ছিল—তাহা বার্টির সঙ্গ, তাহার স্নেহময় পরিচর্য্যা ! বাটি তাহাকে আন্তরিকতার সহিতষ্ট যত্ন করিত যে ! এখন তাহার স্বার্থসিদ্ধি হইয়াছেদারিদ্র্যের ভয় আর নাই, তবে সে কেন আবার ফ্র্যাঙ্ককে তেমনি করিয়া ভালোবাসিবে না, ফ্র্যাঙ্কের এই দুঃখের দিনে কেন সে সমবেদন ভোগ করিবে না । সে তো তাহাকে বরাবরই ভালোবাসে ; ফ্র্যাঙ্কের উপর তাহার ভালোবাস চলিয়া গিয়াছিল বলিয়া যে সে তাহার শক্রতা করিয়াছে তাহা তো নহে ; সে কেবল নিজেকে দুঃখ দৈন্তোর হাত হইতে বাচাইবার জন্ত, চিরদিনের মতো বিলাসিতার মধ্যে