পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

b”8 কাছে তিন কুড়ি টাকা আছে। তাতে যে সমস্ত খরচ নিৰ্ব্বাহ হয়, এমন ভরসা নেই। সেই জন্তেই একটু গড়িমসি করছি বৈ ত নয়। তা, ভগবানের কৃপায় একটা উপায়ও হয়েছে।” হরিদাসী ঔৎস্থক্যের সহিত বলিল—“কি উপায় হয়েছে ?” গদাই বলিল—“এক মস্ত সাধুপুরুষের দর্শন পেয়েছি। কিছু টাকা আমায় পাইয়ে দেবার উপায় তিনি করেছেন।” হরিদাসীর কৌতুহল অত্যন্ত বৰ্দ্ধিত হইয় উঠিল । বলিল—“কি উপায় হয়েছে বলনা গে৷ ” গদাই গম্ভীরভাবে বলিল—“মেয়েমানুষের সে কথা শুনে কাজ নেই।” হরিদাসী মিনতি করিয়া বলিল—“ন গো, তোমার দুটি পায়ে পড়ি ।” গদাই তখন অনুচ্চস্বরে, ধীরে ধীরে বলিতে আরম্ভ করিল— “কালকে সন্ধ্যের পর নদীর ধারে বেড়াতে গিয়ে দেখি, একটা অশথ গাছের তলায়, ধুনী জালিয়ে এক সন্ন্যাসী বসে আছেন । র্তার মাথার জটা কি ! একবারে মাটীতে লতিয়ে পড়ছে। ইয়া হাতের গুলি, ইয়া বুকের ছাতি, টকৃটক্‌ করছে রঙ--তার উপর বিভূতি মাথা-— গলায় রুদ্রাক্ষের মালা । একটা বোতলে মদ রয়েছে, একটা মড়ার মাথার খুলিতে তাই ঢেলে ঢেলে বাবা খাচ্ছেন। নেশায় দুই চক্ষু যেন একবারে জবার ফুল— দেখে ভক্তি হল। কাছে গিয়ে বাবাকে প্রণাম করে, যোড়হস্ত হয়ে বসে রইলাম । আমাকে দেখে বাবা বল্লেন-- ‘ক্যারে বাচ্চা ?—তের মুখ অ্যাসা মলিন কাজে ?”— আমি বল্লাম—“বাবা—আমি বড় গরীব। বিবাহ করবার ইচ্ছে হয়েছে—পাত্রীও ঠিক, কিন্তু কেবল টাকার অভাবে বিয়ে করতে পারছি নে ! তাই ভেবে ভেবে আমার চেহারা খারাপ হয়ে গেছে বাবা।”—এই কথা শুনে বালা খল খল করে হাসতে লাগলেন। বল্পেন—“রূপিয়া তে৷ খোলামকুচি হায় । কেক্ত রূপিয়া তের চাই ?”—আমি হাতযোড় করে বল্লাম—‘বাবা, শো দুই টাকা হলেই আমার বিয়েটি হয়। শুনে বাবা বল্পেন—“তের পাশ কেত্তা বল বল, প্রবাসী—কাৰ্ত্তিক, ১৩১৭ { ১০ম ভাগ, ২য় খণ্ড রূপিয়া হয় ? আমি বল্লাম—“বাবা- বড় জোর পঞ্চাশ কি ষাট । গরীব মানুষ, কোথা পাব টাকা ?—বাব বল্পেন—“আচ্ছা, কুচ পরোয়া নেই—হাম তুঝে একঠে মস্তর শিখা দেগা-মস্তরক চোটুসে তেরা এক এক রূপিয় চার চার রূপিয়া কে যাগা।--আমি বল্লাম—‘বাবা মস্তরটি তা হলে বলে দিন ।”—বাব বল্লেন—“যাও, নদীমে আসনান করকে আও ”—আমি গিয়ে নদীতে স্নান করে এলাম । ভিজে কাপড়ে এসে বাবার কাছে বস্লাম । বাবা বল্লেন--- ‘তাম যে যে বাৎ বোলতা হায়, মন দেকে শুনে । তের যেত্তা রূপিয়া হায়, একঠো লকড়িকা বাকস্মে বন করন । কৃষ্ণপক্ষ চতুর্দশী রাতমে, কোষ্ট বিধবা আওরংকো কচন কি তুম চুল এলো করকে, মাটীমে উবুড় হয়ে পড় কে, আপন দাতসে, একঠো ঘলঘসে গাছক শিকড় উপড়ায়কে লাও । ঐ শিকড় লাল স্ততাসে বাকসমে বাধ দেন । বাকস্মে পিতলক তালা বন্ধ করকে, চাভি ঐ বিধবা আওরৎকে দে দেন। রোজ রাত দুপুরমে বাকসকে উপর একশো হাট বার মন্তরকে। জপ করন । এক মাচিন বাদ ফিন যব কৃষ্ণপক্ষ চতুর্দশক রাত আওয়েগী,— আওরৎ কে বোলায়কে চাভি থোলনা । তব দেখোগে কি এক এক রূপিয়া চার চার রূপিয়া হো গিয়া ।”—বলে, বাবা আমার কাণে মন্তরটি বলে দিলেন । বেশী নয়, কেবল তিনটি অক্ষর ।” হরিদাসী গালে হাত দিয়া, অবাক হইয়া, গদাধরের কথাগুলি শুনিতেছিল। গদাই থামিলে পরও কিছুক্ষণ তাহার বাক্যস্ফীৰ্ত্তি হইল না । অবশেষে রুদ্ধশ্বাসে হরিদাসী বলিল-–“হঁ্যা গো--- সত্যি ?” গদাই বলিল—“সত্যি কি না পরীক্ষা করে না দেখলে ত বলা যায় না। বাবা যেমন যেমন বলেছেন, সেই রকম করে দেখব, টাকা চারগুণ হয়, ভালই—না হয়, আমার আসল টাকাটা ত কোথাও যাচ্ছে না।” “কবে পরীক্ষা করবে ?” গদাই চিন্তিত হইয়া বলিল—“তাই ত ভাবছি। এখন যাচ্ছি দরিয়াপুরে মাসের জন্তে একটিনি করতে—এখন এ দুমাস ত হবে না । আসি দরিয়াপুর থেকে --তার পর