পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

b-b。 কুলে গলে শকুৱালে ব্ৰক্ষ্য গুণে। মুখটা বংশের যশ জগতে বখানে ॥ কৃত্তিবাস পণ্ডিতের এই কথা বর্ণে বর্ণে সত্য। এই মুখুটী ংশের গোত্র, ভরদ্বাজ । এইবার আমরা কবি গঙ্গানারায়ণের সময় নিরূপণ করিতে চেষ্টা করিব । তিনি একস্থানে লিথিয়াছেন— ব্রাহ্মণ কুলের মণি সকল সভাতে জিনি শ্ৰীযুত আনন্দ চন্দ্র রায় । তার সভাসদ কৰি চওঁীর চরণ ভীবি দ্বিজ গঙ্গানারায়ণে গায় ॥ ইহা হইতে আমরা বুঝিতেছি, কবি গঙ্গানারায়ণ, আনন্দচন্দ্র রায় নামক কোন ধনবান ব্যক্তির সভাসদরূপে বর্তমান ছিলেন । অন্যত্র তিনি লিখিয়াছেন— মহারাজ বসন্তের সস্ততি সকলে । কৃপা করি রাখ মাত কল্যাণকুশলে । এই ‘মহারাজ বসন্তের সন্ততি আনন্দচন্দ্র রায়েরই তিনি সভাসদ ছিলেন। ‘মহারাজ বসন্ত’, রামপুরহাটের সন্নিকট মলুট রাজবংশের আদি পুরুষ। ইনি, তদানীন্তন মৃগয়াপরায়ণ মুশীদাবাদের নবাবের পলায়িত প্রিয়তম বাজপক্ষী ধৃত করিয়া দিলে, নবাল তাঙ্গর প্রতি সস্তুষ্ট হইয়া মলুটার নিকটবৰ্ত্তী বহুতর নানকর’ নাথেরাজ ভূমি জায়গীর স্বরূপ প্রদান করেন । রাজা বসন্ত তদবধি “বাজ বসন্ত” নামে এখনও এতদঞ্চলে পরিচিত রহিয়াছেন । আনন্দচন্দ্র রায় ইহারই বংশধর । রাজা আনন্দচন্দ্র যে, দাবা খেলায় সিদ্ধহস্ত ও সভাসদ কবি ‘গোয়েলী গঙ্গানারায়ণকে বীরভূম রাজনগরের ইতিহাসবিখ্যাত আলিলকি থার নিকট দাবা গেলিবার জন্ত প্রেরণ করিয়াছিলেন, এ কথা আবহমান কাল প্রচলিত আছে । দেওয়ান অলিলকি খা ১৭৬৪ খ্রীঃ ২রা মার্চ, বঙ্গাব্দ ১১৭০, ২১শে ফাল্গুন, নূ্যনাধিক দুই বৎসর কাল শয্যাগত রহিয়৷ দেহত্যাগ করেন । সুতরাং আমরা ধরিয়া লইতে পারি, গঙ্গানারায়ণ খ্ৰীষ্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে বর্তমান ছিলেন। এইরূপ অনুমানের দ্বিতীয় প্রমাণ—এই বংশের মুরারী ওঝার পুত্র মদন ও অনিরুদ্ধ। মদনের অধস্তন দশম পুরুষ, রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র এবং অনিরুদ্ধের অধস্তন দশম পুরুষ আমাদের প্রস্তাবোল্লিখিত গঙ্গানারায়ণ । সুতরাং, এই উভয় কবি যে সমকালে বর্তমান রহিবেন, ইহা অতি সঙ্গত ও প্রবাসী—কাৰ্ত্তিক, ১৩১৭ У o N ভাগ, স্বাভাবিক। কবিবর ভারতচন্দ্র ১৭১২ খ্ৰীঃ জন্মগ্রহণ করিয়া ১৭৬০ খ্ৰীঃ দেহত্যাগ করেন । আমাদের প্রথম অকুমানের সহিত ইহার সৰ্ব্বতোভাবে সামঞ্জস্ত রহিয়াছে । তৃতীয় প্রমাণ—কবির বর্তমান বংশধরগণ হইতে তিনি ষষ্ঠ পুরুষ উদ্ধ। প্রতি পুরুষ গড়ে ২৮ বৎসর করিয়া ধরিলেও তিনি নুনাধিক ১৬৮ বৎসর পুৰ্ব্বে বর্তমান ছিলেন বলিয়া অকুমান করিতে হয় । তাহা হইলেও তিনি, ১৭৪২ খ্ৰীঃ বা খ্ৰীষ্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে বর্তমান ছিলেন ধরিয়া লইলে বিশেষ ভ্রমে পড়িতে হয় না । এইরূপে তিনটি বিভিন্ন প্রকার অনুমানফল যখন বিপরীত না হইয় একমুখী হইতেছে, তখন আমরা নিঃসন্দেতে কবি গঙ্গানারায়ণকে খ্ৰীষ্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগের কবি বলিয়া গ্রহণ করিতেছি । “ভবানী-মঙ্গলের” কবি গঙ্গানারায়ণ, বীরভূমের এক প্রান্তে বসিয়া যে সময়ে “ভবানী-মঙ্গল প্রভৃতি গ্রন্থ রচনা করিতেছিলেন, সেই সময় বীরভূমের অপর প্রান্তে, অপূৰ্ব্ব শব্দ-কবি বৈষ্ণব পদকৰ্ত্ত জগদানন্দ (অম্ল ১৭০২-১৭৮২ খ্ৰীঃ) শ্ৰীকৃষ্ণ ও গৌরাঙ্গলীলা বিষয়ক পদরচনায় তন্ময় ভাবে ব্যাপৃত । সন্নিহিত বাকুড়া অঞ্চলে অষ্টকাওঁীয় সুবৃহৎ রামায়ণ-রচয়িত জগৎরাম রায় ও র্তাহার পুত্র রামপ্রসাদ রায় ‘ভবানীমঙ্গলের" সমবিষয় অবলম্বনে “দুর্গাপঞ্চরাত্র” প্রভৃতি গ্ৰন্থরচনায় নিযুক্ত। এবং নবদ্বীপে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সভাকবিরূপে গঙ্গানারায়ণের স্ববংশীয় কবি রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র ও অম্বষ্ঠ বংশীয় ভক্ত কলি রাম প্রসাদ সেন কবিরঞ্জন স্বকীয় দিগন্তবিছুরিত কবিত্ব-প্রভায় সমগ্ৰ দেশ আলোকিত করিতে অগ্রসর । শাক্তকবি দেওয়ান রঘুনাথ রায়, প্রেমিক কবি রামনিধি রায়, কবি-সঙ্গীত রচয়িত হরু ঠাকুর প্রভৃতির নামও এই সঙ্গে উল্লেখ করা যাইতে পারে । যে যুগে এইসকল কবি জন্ম গ্রহণ করিয়াছিলেন, তৎকালীন দেশের তাহ সমগ্র ভারতবর্ষের ভাগ্যপরিবর্তনের অবস্থা । যুগ। তখন মোগল-স্বৰ্য্য অস্তমিত -- শিখ, জাঠ ও মারাঠা জাতি মস্তকোত্তলনে প্রয়াসী—এ দিকে, প্রবলপ্রতাপান্বিত ইংরাজ বণিক ভারতের ভাগ্যনিয়ন্তার সম্মানিত শূন্ত্য-সিংহাসন অধিকার মানসে দ্রুতগতি অগ্রসর । সমকালিক কবি ।