পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/১১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২১২ প্রসব করিতে লাগিল। খরগোসের পাল এত বাড়িতে লাগিল যে গৃহস্থ বিরক্ত হইয় তাহাদিগকে বিদায় করিয়া দিলেন। একটু অমুসন্ধান করিলে সকলেই দেখিতে পাইবেন যে অধিকাংশ জীবেরই বংশ বেশ সবেগে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হইয়া খাকে । উদ্ভিদবুদের প্রতি ষষ্ঠদেবীর কৃপা কিন্তু সকলের চেয়ে বেশী। আমাদের পরিচিত তিন্তিড়ীবৃক্ষের ( সোজা বাংলায় তেঁতুলগাছের ) বংশবৃদ্ধির মাত্রাট একবার দেখা যাইতে পারে। প্রতি বৎসর একটা বড় তেঁতুল গাছে কতগুলা করিয়া তেঁতুল জন্মে তাহার হিসাব কোন পুস্তকে পাইলাম না। যদি কোন ধৈর্য্যশালী পাঠক এ বিষয়ের একটা সঠিক হিসাব দিতে পারেন তাহ হইলে বিজ্ঞানশাস্ত্র যে তাহার নিকট কিছু ঋণী হইবে তাঁহার সন্দেহ নাই । যাহা হউক আমরা সকলেই জানি যে একটা বড় তেঁতুল গাছ হইতে বহুসংখ্যক ফল হয়—এবং সেই সকল ফল হইতে আরও অনেক বেশী সংখ্যক বীজ পাওয়া যায়। প্রতোক বীজটর মধ্যে কিন্তু একটা করিয়া ক্ষুদ্র তিন্তিড়ীবৃক্ষ লক্কায়িত থাকে। সেই বৃক্ষ-শাবকটীর একটা ক্ষুদ্র কাও, একটী অতিক্ষুদ্র মূল ও একটী ক্ষুদ্র ডগ আছে। সেই ডগে দুটা কি তিনট অতি ক্ষুদ্র পত্র আছে। তদ্ব্যতীত উহাতে আর দুইটী বড় আহাৰ্য্যসম্ভারযুক্ত পত্র থাকে। উপযুক্ত মাত্রায় জল এবং আলোক পাইলে এই ক্ষুদ্র উদ্ভিদটী ক্রমশঃ বৰ্দ্ধিত হইতে থাকিবে । সুবিধার অবস্থায় পড়িলে প্রত্যেক বীজ হইতে এক একটী বড় বৃক্ষ উৎপন্ন হইতে পারে । কিন্তু শাবকের সংখ্যা বুদ্ধি হইলেই যে কোন জাতীয় জীব বা উদ্ভিদের পূর্ণবয়স্কের সংখ্যাও বৃদ্ধি প্রাপ্ত হইবে, এমন কোনও কথা নাই । মধ্য-এসিয়ায় আর্য্যদিগের যেরূপ অবস্থা ঘটিয়াছিল আমাদের তিন্তিড়ী-শাবকগণেরও সেইরূপ অবস্থা ঘটিতে পারে। মনে করা যাউক তেঁতুলের বীজগুলি পাকিয়া তেঁতুল ছের তলাতেই পতিত হইল। পর বৎসর বর্ষাকালে তেঁতুলগাছের তলাট বেশ ভিজা হইল । পর্যাপ্ত মাত্রায় জল পাইয়া বীজমধ্যস্থ উদ্ভিদশিশুগুলি বাহির হইয়া পড়িল। কিন্তু একটু সবল না হইলে তাহারা মাটী ও বায় হইতে আহার সংগ্ৰহ করিতে সমর্থ হয় না। উদ্ভিদ-মাতা সন্তানগণের ভবিষ্য অসুবিধার কথা ভাবিয়া, প্রবাসী-আষাঢ়, ১৩১৭ ১০ম ভাগ নিজের খাদ্য হইতে কিয়দংশ বাচাইয়া, সন্তানগণের গাত্রে দুটা করিয়া খাবারের থলি বাধিয়া দিয়াছেন । তিন্তিড়ীশিশুটী বীজপত্রদ্বয়স্থিত খাদ্যসম্ভার আকর্ষণ করিয়া নিজের অবয়ব বৃদ্ধি করিতে থাকে,–একটু একটু করিয়া নিজের ছোট ছোট শিকড়গুলি মাটীর ভিতর চালাইয়া দেয়,একটু একটু করিয়া দুষ্ট একটী পাতাকে বড় করিয়া ও বিস্তৃত করিয়া আলোকের দিকে ধরে, তাহারা ক্রমশঃ সবুজ হইয় উঠে। এইরূপে তেঁতুলের ছোট চারটি নিজের ছোট ছোট শিকড়গুলির সাহায্যে মাট হইতে একটু একটু করিয়া রস আকর্ষণ করিয়া, সবুজ পাতাকয়ট এবং বায়ু ও রৌদ্রের সাহায্যে একটু একটু পাদ্য প্রস্তুত করিয়া একটু একটু করিয়া বাড়িতে থাকে। তেঁতুলের চারা কত ধীরে বৰ্দ্ধিত হয় তাহা সকলেই অবগত আছেন । কিন্তু আপনারা কি ভাবিতেছেন যে চারাগুলা এই রকমে বাড়িতে বাড়িতে এক একটা বিশাল পাদপে পরিণত হইবে ? ছোট ছোট তেঁতুলের চারাগুলি দেখিতে কতই ন সুন্দর । বোধ হয় কবিতা লিখিবার শক্তি থাকিলে তেঁতুলের চারা সম্বন্ধে একটা কবিতাই আমি লিথিয়া ফেলিতাম। ছোট ছোট চারাগুলি ভায়ে ভায়ে জড়াজড়ি করিয়া, নিজেদের সুন্দর সবুজ ও সুবর্ণ-বৰ্ণ পত্রগুলি ঈষৎ আন্দোলিত করিয়া যেন কত আনন্দেই বাস করে। তখন তাহাদের অল্প বয়স ক্ষুধা কম—সবই ভাল। কিন্তু একটু পরেই বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যখন তাহদের ক্ষুধার মাত্রাটাও ক্রমশঃ প্রচও হইতে প্রচণ্ডতর হইয়া পড়ে তখন কিন্তু তাহদের ভায়ে ভায়ে একটা বিরাট দ্বন্দ্ব উপস্থিত হয়—বৈজ্ঞানিকের ভাষায় “ভীষণ জীবনসংগ্রাম" বাধিয়া যায় । ( এ প্রবন্ধ সম্ভবতঃ বালকেরা পড়িবে না, যদিই বা পড়ে তা তাহারা এত আহম্মক নহে যে ভাল ভাল দেবতুল্য সব মানুষ থাকিতে, শেষটা কিনা উদ্ভিদের অনুকরণ করিলে ) । একটু জমির মধ্যে, যেগানকার রস হইতে একটা চারার কোন রকমে জীবন রক্ষা হইতে পারে, দশটা চারা নিজেদের শিকড় প্রবিষ্ট করাইয়া দেয়। আর সেই বুড়ী তেঁতুল গাছটার নিবিড় শুমচ্ছায়ার তলে চারাগুলি আলোকই বা পায় কতটুকু। বুড়ীর মায় দয়া বীজগুলিকে পরিণত করার সঙ্গে সঙ্গেই শেষ হয়-হাজার হোক i . ৩য় সংখ্য। ] জাতে উদ্ভিদ কিনা ! চারাগুলি আহার অভাবে আর বাড়িতে পারে না এবং ক্রমে ক্রমে পঞ্চস্থ প্রাপ্ত হয় । অতএব আমরা বুঝিতে পারিতেছি যে তেঁতুলের বীজস্থিত শাবকগুলির যদি বুদ্ধবয়স পর্যন্ত বাচিবার ইচ্ছা থাকে, তবে তাহারণ তেঁতুল গাছের তলদেশ ইষ্টতে বিচরণ করিয়া অন্যত্র বসবাসের চেষ্টা করুক। উহাষ্ট তাহদের বাচিবার একমাত্র উপায়। মাতৃত্রেগড় আর তাহাদিগকে রক্ষণ করিতে পারিবে না । কিন্তু পলাষ্টয়াই কি সকলের নিস্তার আছে ? কতকগুলি চারা হয়ত বাটীর আঁস্তাকুড়ে কিছু অন্নজলের সদ্ভাব দেখিয়া, সেখানে বেশ হাসিয়া হাসিয়া বাড়িতেছিল। কিন্তু এমনই দুর্ভাগা, গিরি একদিন বউদের সঙ্গে ঝগড়া করিয়া রাগের ভরে সে বেচারীদের মাথার উপর এক গামলা গরম ফেন ঢালিয়া দিলেন । শিশু তাহারা, অত গরম সহ করিতে পরিবে কেন,—মরিয়া গেল। কোন একটা চারা হয়ত বাড়ীর দেওয়ালের এক নিরিবিলি জায়গায় একটু র্যাক পাষ্টয়া সেখানে বেশ নধর হইয় ফুলিয়া উঠিতেছিল। বড় কৰ্ণ একদিন তাঙ্গ দেখিতে পাইয় রাগিয়াই অস্থির-বাড়ীটা ভাঙ্গিয়া ফেলিবার মতলব ! সে বেচারীর তখনি প্রাণদণ্ডের ব্যবস্থা হইয়া গেল । কোন একটী চারা বাগানের এক কোণে হাতখানেক বাড়িয়া উঠিয়াছিল কোথাকার এক পোড়ারমুখে বানর আসিয়া সেই কচি গাছটাকে উদরসাং করিয়া ফেলিল। বাড়ী ছাড়িয়া অদ্যক্র গিয়াও নিস্তার নাই। রাস্তার পাশের এক থানার মধ্যে বেশ রসাল জমি পাইয়া দুটা চারা সেখানে বাড়িয়া উঠিতেছিল। বর্ষ আসিয়া কিন্তু সে খান জলে ভৰ্ত্তি হইয়া গেল, গাছ ছুটী জলমগ্ন হইল। কিন্তু জলমগ্ন থাকিয় বেশীদিন বাচিয়া রহিবার বিদ্যা তেঁতুল গাছদের কোনও পুরুষ অভ্যাস করে নাই। কাজেই তাহদেরও তেঁতুল-জন্ম হইতে সত্বর অব্যাহতি লাভ হইল। জঙ্গলে দুটী গাছ সবেমাত্র বীজের খোলস ছাড়িয়া বাহির হইয়াছে, কিন্তু অদৃষ্ট কোথায় যাইবে, দুটাে শেয়াল বনের মধ্যে যেন আর কোথাও জায়গা না পাইয়া সেই চারা দুটাের কাছেই তুমুল থেয়োখেয়ি ঝগড়া বাধাইয় দিল ; ঝগড়ার মাঝখানে এক বাঘের সাড়া পাইয়া তাহার দুজন দুদিকে পলায়ন করিল, কিন্তু চারা দুটোর প্রাণ আর বঙ্গদেশীয় কতিপয় উদ্ভিদের বিচরণ-কাহিনী ミ>s) কমিল বটে কিন্তু অন্ত ভয় আছে, কথন কোন পাড়াগেয়ে ছেলের ঘোড়ায় চড়িবার চাবুকের দরকার হয় বলা যায় না। একটা তেঁতুলগাছ অনেক কষ্টে পাঁচ সাত হাত লম্ব হইয়া কিছু গৰ্ব্বিত হইয়া উঠিয়াছিল। একটা র্যাড় সেই গাছের পাশ দিয়া যাইতেছিল। গাছটা দেখিয়া তাহার গাত্ৰকণ্ডুয়নের স্পৃহা বড়ই বলবতী হইয়া উঠিল। কিন্তু তাহার সে পালোয়ানী বেগ সে ক্ষুদ্র গাছটা সহ করিতে পারিবে কেন—সে মড়াৎ করিয়া ভাঙ্গিয়া গেল। এইরূপ অগণা বিপদের হস্ত হইতে রক্ষা পাইয়া কচিৎ একটা দুইটা গাছ সাবালক হইয়া উঠিতে পারে। এপন আমরা বুঝিতেছি তেঁতুলের এত বীজবাহুল্যের কারণ কি। প্রকৃতি যেমন তেঁতুলের সস্তান ধ্বংসের অগণ্যবিধ উপায় করিয়াছেন তেমনি তাহাকে অগণ্য সস্তান উৎপাদন করিবার শক্তি দিয়াছেন—অতগুলোর মধ্যে ছটা একটা যাহাতে কোন ক্রমে বাচিয়া যায়। উদ্ভিদগণের যাহাতে বংশ রক্ষা হইতে পারে তজ্জন্ত তাহাদের যে নানা স্থানে ছড়াইয়া পড়া একান্ত আবশ্যক তাহা আমরা বুঝিতে পারিতেছি। কি উপায়ে যে এই বিচরণ-কাৰ্য্য সমাধা হইতে পারে আমরা এক্ষণে সে বিষয়ের আলোচনা করিব। ইহা সহজেই বুঝা যাইতেছে যে উদ্ভিদগণ জীবগণের মত নিজেরা এক স্থান হইতে অন্য স্থানে যাইতে পারে না। বিবিধ উপায় দ্বারা তাহাদিগকে স্থানান্তরিত করা হয়। মানুষ প্রকৃতির বহিভূত জীব ন হইলেও সুবিধার জন্ত মানুষের কৃত কাৰ্য্যাবলীকে প্রকৃতির অন্তভূক্তি বলিয়া গণ্য করা হয় না। আমরাও সেই পদ্ধতি অবলম্বন করিয়া প্রথমতঃ মানুষের দ্বারা উদ্ভিদ বিচরণের কিরূপ সহায়তা হয় তাহা যৎকিঞ্চিৎ দেখিব, তৎপরে মানুষ ব্যতীত প্রকৃতির অন্তবিধ শক্তিপুঞ্জের দ্বারা এই কার্য্যের কিরূপ সহায়তা হয় তাহা সবিশেষ অনুসন্ধান করিবার চেষ্টা করিব। (১) মামুষের দ্বারা উদ্ভিদ-বিচরণের সহায়তা। মানুষের দ্বারা বিবিধ উদ্ভিদ কিরূপে একস্থান হইতে অল্প স্থানে নীত হয় তাহা আমরা সকলেই অবগত আছি। মানুষের সহায়তা না পাইলে এই সকল উদ্ভিদ নদী নদ,