পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨૭ পাদ্রী হয়ও, তথাপি জানু্যানসেন তাহার অপেক্ষ যথেষ্ট - সম্পত্তিশালী লোক বলিয়াই গণ্য হইবে। . বাড়ীতে ফিরিয়া প্রিক প্রাত্যহিক নিয়মানুসারে পুরানো • বাইবেল হইতে কিয়দংশ পাঠ করিল, এবং তারপর রাত্রির মত বিশ্রামের জন্তু কাপড় চোপড় ছাড়িয়া প্রস্তুত হইবার যোগাড় করিল। কালকের দিনে কি হইবে, সে সম্বন্ধে স্ত্রীর সঙ্গে একটু আধটু আলোচনাও চলিতে লাগিল। প্রিক কহল, বাট বেশ যোগ্য লোক, কিন্তু সে ধৰ্ম্ম বলিয়া যাহা চালায়, তাহা তাহার নিজের স্বষ্টি-গ্রন্থকে সে মানে না। বিদ্যা হইলেই তো হয় না, বিদ্যা এক জিনিস আর ধৰ্ম্ম আর এক জিনিস ইত,াদি। এই সমস্ত কথা বলিতেছে, এমন সময় জানালার শাসীতে এক মুষ্টি কাকড় আসিয়া পড়িল। প্রিকের স্ত্রী স্বামীর কথা শুনতেছিল আর ঘন ঘন হাই তুলিতেছিল। কাকড়ের শব্দ শুনিয়া সে চমকিত হইয়া উঠিল এবং কোন অতিথি আগমনের সম্ভাবনায় একটু মাৱামও বোধ করিল। প্রিক জানালা খুলিয়া বাহিরের দিকে তাকাইল । একজন স্ত্রীলোকের কণ্ঠস্বর শোনা গেল। সে বলিতেছে “একবার নেবে এস, তোমার সঙ্গে আমার কথা আছে।" প্রিক কহিল “একি এযে বার্টের ম৷ ” স্ত্রী বলিয়া উঠিল “যেয়ে না, মিথ্য তোমায় বকাবে।" প্রিক কাপড় চোপড় ঠিক্ঠাক্ করিয়া যাইবার জন্য প্রস্তুত হইল। স্নানের জল ঠাণ্ড হইয়া যাইবে বলিয়া স্ত্রী আপত্তি প্রকাশ করিতে লাগিল। গ্রিক ততক্ষণ দরজা খুলিয়া বাহির হইয়া গেছে । কম্পিত কণ্ঠে প্রিক কহিল “এত রাত্রে হঠাৎ তুমি কেন?” বার্টের মা কহিল “তোমায় তো আমি সৰ্ব্বদাই বিরক্ত করতে আসি না। প্রায় চল্লিশ বুৎসর বোধ হয় তোমার সঙ্গে আমার কথা হয় নি ?” - প্রিক কছিল "তাই তো জিজ্ঞেস করছিলুম হঠাৎ কিসের জষ্ঠ আঞ্জ এত রাত্রে আমার সঙ্গে দেখা করবার প্রয়োজন ठू'श ।” “আমি কারুর ঘুমের ব্যাঘাত করবার ইচ্ছা করি নি।” তার কণ্ঠে মানসিক আবেগ বেশ বুঝা যাইতেছিল। প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩১৭ । [ ১০ম ভাগ । প্রিক কছিল “বোস ।" সে বলিল “ন বোস্ত্র না। আমার ছেলের ভবিষ্যৎ তোমার হাতে। আমি সেই জন্যেই এসেছি। তোমায় পাত্রীর পদ দিতেই হবে।” প্রিক কহিল “এসম্বন্ধে তো আমার কোন হাত নেই— ভগবানের—” কথাটা শেষ না হইতেই বার্টের মা বলিয়া উঠিল “কৈ, চল্লিশ বৎসর পূৰ্ব্বে এসব কথা তে তোমার মুখে শোনা যায় নি।" প্রিক নমস্বরে কহিল "তা স্বীকার করি—তখন আমি এসব কথা এভাবে বুঝি নি—এখন বলি।” “আমার কথাও আমি বলি। আমি বলছি, তোমাকে আমার ছেলের জন্য এটি নিশ্চয় করতেই হবে, নিশ্চয়-- শুনলে ?” o অত্যন্ত ক্ষীণভাবে প্রিক উত্তর করিল "নিশ্চয় বলো না ।” - * বিধবা কছিল “বেশী বলার দরকার নেই। তুমিও আমার কথা বোঝ, আমিও তোমার কথা বুঝি। চল্লিশ বৎসর ধ’রে আমি তোমার সঙ্গে দেখা করি নি। এখন আমার ছেলের জন্তে আমি এসেছি, আমার তাতে লজ্জা নেই। আমি কাল গির্জায় তোমাৰ মুখোমুখি বসব। তোমার দিকে আমার চোখ থাকলে । চিনে পুতুলের মত বসে বসে তোমায় ঘাড় নাড়তেই হবে-ই বলতেই হবে - আমার ছেলের জন্তে একাজ তোমায় করতেই তাকে হবে ।" প্রিক কহিল "কিন্তু এ ধৰ্ম্মসংক্রান্ত ব্যাপার-নিরপেক্ষ বিচার—লোকের যাতে মঙ্গল—” বাটের মা বলিল "তুমি কি করবে তাহ’লে তুমিই বোঝ। আমি চললাম। কিন্তু আমি বলে যাচ্ছি, কাল সকালে তুমি যদি ই না বল”—প্রিক উৎকণ্ঠিতভাবে তাঙ্গার মুখের দিকে তাকাইল— "তুমি যদি স্থা না বল তবে উপাসনার শেষে আমি উঠে সবাইকে তোমার পূর্ব ইতিহাস বলব।” বার্টের মার দৃষ্টি স্থির। সে যাহা সংকল্প করিয়াছে, সে তাহা করিবেই বুঝা গেল । ১ম সংখ্যা । ] প্রিক কহিল “আমার স্ত্রী !” “সে তুমি দেখ, সে তোমার বিষয়-আমার সঙ্গে তার সম্পর্ক কি ! আমি তো তাকে কোন দিন ঘাটাই নি । তোমাকেও না। আর তুমি—” দৃঢ় মুষ্টি উষ্ঠত করিয়া সে বলিল “তুমি আমার ছেলের ভবিষ্যং সুখ নষ্ট করবে।” প্রিকের আর কথা কহিবার সাধ্য রহিল না । সে কেবল কহিল "তুমি বুঝতে পার্ছ না ; মেরি! এ চাওয়া ন চাওয়ার প্রশ্ন নয় । আমার ধৰ্ম্মবুদ্ধি– “যাও—তোমার ধৰ্ম্মবুদ্ধি নিয়ে জ্যান জ্যানসেনের সঙ্গে আলাপ কর গিয়ে—” এই বলিয়া সে প্রস্থান করিল। কিছু দূর তাঙ্গার পশ্চাৎ পশ্চাৎ অনুসরণ করিয়া প্রিক “ধৰ্ম্মেৰ ব্যাপার সম্বন্ধে আমার দায়ীত্ব—” বিধবা একবার মাত্র ফিরিয়া কছিল “আমি যা বলেছি,. তা করব।” ..একেবারে হতবুদ্ধির মত প্রিক অন্ধকারে হাতড়াইতে হাতড়াইতে উপরে গেল। জল ঠাও হইয়া গেছে। এই প্রথম শনিবার রাত্রে অস্নাত অধৌত হইয় সে শয়নে গেল। কিন্তু বাহিরে ধৌত করিলে কি হইবে ? ভিতরকে ধৌত করিবার কোন উপায় ছিল না । সমুস্ত রাত্রি সে বেদনায় ছটফট করিতে লাগিল। ঘুম হইল না—শষ্য হইতে উঠিয়া প্রিক অনেকক্ষণ ধরিয়া প্রার্থন করিল যে বাটের উপদেশ যেন সেকেলে ধরণের হয়। গ্রন্থকে যেন কোথাও লঙ্ঘন না করা হয়। কিন্তু তা যদি না হয় তবে ? কি ভয়ানক ! ভাবিতেও তাঙ্গার সৰ্ব্বাঙ্গ কঁপিয়া উঠিতে লাগিল । প্রত্যুষে তাহার পরিবারস্থ সকলেই তাছার মুখ অত্যন্ত বিবর্ণ এবং জাগরণক্লিষ্ট দেখিল। সেদিন সকলেই গির্জায় গেল । গির্জায় প্রবেশ করিবার সময়ই প্রিক বাটের মাকে দেখিতে পাইল । অর্গানে প্রথম সঙ্গীত বাজিতেই সে পাত্রী এবং অন্যান্য গির্জার কৰ্ম্মচারীদের অগ্রগামী श्ब्र। সকলের সম্মুখে যথারীতি উপস্থিত হইল। বেদীর সম্মুখের রেলিংএর পাশেই তাছার স্থান। বসিয়াই সে দেশিল বাটের মাতা তাহারি সম্মুখে তাহার মুখের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করিয়া বসিয়া আছে। ংকলন ও সমালোচন—হল্যাণ্ডের একটি গল্প। বxর্টর উপদেশের বিষয়পছল “প্ৰভূ, তোমার প্ৰেম । যেন জীবনে পরিপূর্ণ হয়।” বার্টের স্বর বলিবার আবেগে কম্পিত হইতেছিল। কিন্তু বিষয় নিৰ্ব্বাচনেই সব মাটি . যত ছেলেমানুষী কথা--প্রেম । শক্তি }, ভীতি নয়, দণ্ড নয়,—প্রেম। এতো গ্রন্থের কথা নয় ! * - থাকিয়া থাকিয় সমস্ত গির্জার লোকের প্রিকের দিকে তাকাইয়াছিল। সে গম্ভীরভাবে বিচারকের মত বসিয়া রহিল। সমস্ত নিস্তব্ধতাকে পরিপূর্ণভাবে সিক্ত করিয়া উপদেশের । স্রোতও প্রবাহিত হইতেছিল। সকলেরি হৃদয় স্পষ্ট হইল, বিশেষতঃ স্ত্রীলোকদের। এমন সরল, এমন পরিপূর্ণ, এমন । হৃদয়ভরা উক্তি তাহার বহুকাল শোনে নাই। সকলকে । মুগ্ধ হইয়া শুনিতে দেখিয়া বক্তারও উৎসাহ ক্রমেই বাড়িয়া যাইতে লাগিল। সে প্রিককে দেখিতে পাইল না। সে । আশায় উদ্বেলিত হইয়া উঠিল । - এদিকে প্রিক একেবারে হতাশ হইয়া হাল ছাড়িয়া দিয়াছে। তাহার সম্মুখে সৰ্ব্বনাশ ! কেবল একটবার সম্মতিস্বচক মাথা নাড়া ! একটি মাত্র ! তাহার বেশ লাগিয়াছে কেবল এইটুকু জ্ঞাপন করার মত। তাহা হইলেই কোন গোল থাকে না—কিন্তু সে হয় না। জি হোভার এমন অবমাননা ! ধৰ্ম্মের এমন বিরুতি! তাহার শক্তি ও দণ্ডদাতৃত্বের কোন কথা নাই, যত মিথ্যা প্রেমের জয় ঘোষণা ! এ কোন মতেই হয় না ! উপদেশ শেষ হইল। শেষ গান কখন আরম্ভ হইল, "কখন শেষ হইল গ্রিক বুঝিতেই পারিল না। গির্জা যখন ভাঙ্গিয়া যায়, তখন হঠাৎ বিধবার কণ্ঠ স্বর শোনা গেল, ৰাম—যেয়ে না—এই লোকটা—” বলিয় সে প্রিকের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করিল। সকলেই নিস্তন্ধ কৌতুহলে ঝুঁকিয়া পড়িল। বিধবা উচ্চৈঃস্বরে কছিল “এই লোকটা—যাহাকে মেষপালের মত তোমরা সৰ্ব্ববিষয়েই অনুসরণ কর—যাহাকে ধৰ্ম্ম বিষয়ে তোমরা গুরু বলিয়া মানিয়া লইয়াছ-একী তা জান ? জারজ সন্তানের পিতা—দুশ্চরিত্র বদমায়েস !” হঠাৎ এমনতর কথা শুনিয়া শ্রোতাদের মধ্যে কেহ . কেছ কলরব করিয়া উঠিল, কিন্তু অনেকেই কৌতুহলী ইয়া । গোলমাল থামাইয়া দিল । - -