পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

રંઝ বিধবা বলিতে লাগিল ༤ita জ্যানসেনকে ইনি-ভ্রাতুপুত্র বলিয়া চালাইয়াছেন—তিনিই ইহার পুত্র। আমার ছেলের উপদেশ ওঁর মনঃপূত হয়না কেন শুনিবে ? কারণ ইনি সেই জান জ্যানসেনের সঙ্গে ক্যাটিন ভিক্কম্যানের বিবাহ দিবার ইচ্ছা করিয়াছেন-বার্ট যদি পাদ্রীর পদ পায়, তবে সে কষ্ট বার্টকেই বিবাহ করিবে।” বাটের মুখ বিবর্ণ হইয়া গেল। * তাহার সমস্ত চিত্তের বেদন একটিমাত্র কথায় কক্ত হইল “মা—কি করছ।” প্রিকের স্ত্রী রাগে লাল হইয়৷ চীৎকার করিয়া বলিল “কখনই না-এ সমস্ত মিথ্য কথা ।” সে তাহার স্বামীর দিকে ফিরিয়া কহিল “নিশ্চয় মিথ্যা—একশ বার—প্রিক তুমি বল না।” সকলের দৃষ্টি তখন প্রিকের দিকে । প্রিকের বাকা সরিল না। তখন প্রিকের স্ত্রী বিধবার দিকে ধাইয়া গিয়া বলিল “জ্যানসেন যে প্রিকের ছেলে তার কি প্রমাণ আছে ?” বিধবা উত্তর করিল "সে আমারও ছেলে। আমার এবং প্রিকের।” হঠাৎ সেখানে বজ্রপতন হইলে শ্রোতৃবর্গ এত বিক্ষিত হইত না। মৰ্ম্মাহত বার্ট টেবিলে মুখ লুকাইল। সে কাহারও দিকে চাচিতে পারিল না। দীর্ঘক্ষণ স্তব্ধতার পর প্রিক মুখ তুলিয়া কহিল “এ সত্য কথা।" খুব একটা অসন্তোষের গুঞ্জনধ্বনি প্রিক শুনিতে পাইল । একে একে তাহাকে ফেলিয়া তাহার বন্ধুবান্ধবের চলিয়া গেল। সে তখন আকাশে তাহার হাত দুটি তুলিল । ক্যাটিনের পিতা মুষ্টি উদ্যত করিয়া তাহার নিকটে আসিয়া কছিল “তুমি ভেবেছিলে সমাজে যার পরিচয় দেবার উপায় নেই, এমন লোককে নামি কষ্ঠা দেব ?” বার্ট তখনও মাথা হুই হাতে ঢাকিয় মুখ লুকাইয়া পড়িয়া রহিল। সমস্ত জনতার মাঝখানে ক্যাটিন বেদীর উপরে উঠিয় তাহার গলদেশে নিজের বাহু জড়াইয়া দিল । অ । প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩১৭। | ১০ম ভাগ । ভাগ্যচক্র । o (উপন্যাস ) পকেটের মধ্যে দুটো হাত পুরিয়া এবং শীতের কোর্তার কলারটা দাড়ি পর্যন্ত উন্টাইয়া দিয়া এক ভদ্রলোক পথ চলিতেছিলেন। যেমন তিনি নিজের বাড়ী-হোয়াইটরোজ কটেজের কাছাকাছি হইয়াছেন, অমনি দেখিলেন আর একজন লোক স্বমুখ হইতে তাহার দিকে আসিতেছে। তখন অনেক রাত্রি। পথ জনশূন্ত, অবিরাম তুষার পাত হইতেছে ; হোয়াইট রোজ কটেজটিও আগা গোড়া দুধের মতো সাদা বরফে ঢাকিয়া দিয়াছে ;–দেখিয়া মনে হয় যেন তুলাপুঞ্জের মধ্যে পার্থীর বাসা । * লোকটা ক্রমে তাহার কাছে আসিয়া দাড়াইল । মনে হইল যেন সে তাহারই সহিত কথা কহিতে চাহে । ভদ্রলোকটি আশ্চৰ্য্য বোধ করিলেন —এই দুৰ্য্যোগে এমন সময় কিসের প্রয়োজন । হঠাৎ লোকটা ডচ্‌-ভাষায় কথা কহিল—“মাপ করবেন মশাই! আপনিই কি মিঃ ওয়েষ্ট হোভ ?” অপরিচিত কণ্ঠে নিজের নাম উচ্চারিত হইতে দেখিয়া তিনি ভারি আশ্চৰ্য্য হইয়া গেলেন। বলিলেন—“হা— আমারই নাম ফ্র্যাঙ্ক ওয়েষ্ট হোভ —তুমি কে ? কি চাও?” “আমার নাম—রবার্ট ভ্যানমায়রেন ;–তোমার মনে আছে কি না জানি না—” —“কে ? বার্ট ? তুমি ? আরে তুমি এই লওনে কৰে এলে ?” সেই সময়, সেই তুষার পুঞ্জের মধ্য হইতে, বহু-পুরানোদিনের একখানি ছবি বিস্ময়াভিভূত ফ্র্যাঙ্কের সামনে জাগিয়৷ উঠিল!—সে ছবি বাল্যকালের খেলাধুলার সঙ্গীদের আনন্দপূর্ণ চিরনবীন স্মৃতি লইয়া রচিত। বন্ধুর মুখ হইতে সেই পুরানে আদরের নাম “বাট!" শুনিয়া রবার্টের মনে যেন একটু সাহস হইল। সে বলিল —“এখানে যে হঠাৎ এসে পড়েচি তা নয়। আমি জানতুম --তুমি এখন এখানে আছ—সেই ভরসায় এসেচি। আজ তোমার বাড়ীতে তিনবার খোজ করে গেছি—তুমি ১ম সংখ্যা । । ছিলে না , শুনলুম রাত্রে আসবে, তাই তোমার জন্তে এতক্ষণ অপেক্ষা করচি ” বার্টি এ কথাগুলো তেমন জোরের সহিত বলিতে পারিল না—ভিক্ষুকের আবেদনের মধ্যে যেমন একটা সঙ্কোচ থাকে তেমনি তাহারো বাক্যের মধ্যে একটা সঙ্কোচ রহিয়া গেল । ফ্রাঙ্ক একটু বিস্মিত হইয়া বলিলেন—“তবে তোমার খুব জরুরি দরকার নাকি ?” বাটি আমতা আমতা করিয়া বলিল—“জরুরি বই কি ! কি জানো—তোমার কাছ থেকে আমি কিছু সাহায্য চাই –এখানে আর কারে সঙ্গে তো আমার পরিচয় নেই।” —“তুমি আছ কোথায় ?” -“কোথাও নয় । আমি আজ সকালে এখানে এসে পৌছেচি । আমার কাছে একটি—একটি পয়সাও নেই !" is: বাহিরের শীতে দাড়াইয়া থর থর করিয়া কাপিতেছিল, এবং ক্রমেই কচ্ছপের মত নিজের মধ্যে সঙ্কুচিত হইয়া যাইতেছিল। ফ্র্যাঙ্ক বলিলেন—“এস বাড়ীর মধ্যে ।” তাহার মনে তখনো বাল্যকালের স্নেহপূর্ণ মুখের স্মৃতি খেলা করিতেছিল। বন্ধুর প্রতি একটা প্রগাঢ় সহানুভূতির উদয় হইল, তিনি আবার বলিলেন—“এস, আজ রাত্রিটা আমার এখানেই কাটিয়ে যাও !” বার্টি তাড়াতাড়ি উৎসাহের সহিত বলিয়া উঠিল— "বেশ ত ।” তাহার ভয় হইতেছিল, সময় দিলে পাছে ফ্র্যাঙ্ক আবার ঐ কথাটাকে উণ্টাইয়া লয় । তাহারা দুজনে তখন বাড়ীর দিকে গেলেন। ফ্র্যাঙ্ক পকেট হইতে চাবি লইয়া দরজা খুলিলেন। কড়িকাঠে ঝুলান একটা লণ্ঠন মিটমিট্‌ করিয়া জলিতেছিল, তাহারই আবছায়া আলো হলের মধ্যে পড়িয়াছে ! . ফ্র্যাঙ্ক বলিলেন—“ভিতরে মাওঁ !” এই বলিয়া তিনি বাহিরের দরজা একেবারে বন্ধ করিয়া দিলেন। তখন রাত্রি সাড়ে বারোটা । বাড়ীর দাসী তখনো শুইতে যায় নাই। সে ফ্র্যাঙ্কের কাছে আসিয়া বাটির দিকে সন্দেহস্তচক দৃষ্টিপাত করিয়া ংকলন ও সমালোচন—ভাগ্যচক্র । বলিল। Rs চুপি চুপি ੋਂ नाकfश्राव তিনবার, আপনার খোজে এসেছিল । সমস্ত সন্ধ্যাবেলাটা বাড়ীর কাছে ঘুপটি মেরে বসেছিল। আমার বাপু বড় ভয় ভয় করে— . এ দিকটা যে নির্জন । ফ্র্যাঙ্ক কোনো কথা কহিলেন না, હૈં একবার ঘাড় নাড়িলেন—মানে, ও কিছু নয়! তারপর বলিলেন—“আনি ! আগুন কর । তোমার স্বামী কি এখনো জেগে আছে ?” * –“আগুন জালাবো ?” “ই৷ ”—“বার্টি ! তুমি কিছু থাবে ?” —“যদি কোনো অসুবিধা না থাকে।” বার্টি এই কথাগুলি দাসীর বোধগম্য করিবার জন্য ইংরাজি ভাষায় । কথা শুনিয়া দাসী তাহার দিকে আর একবার কেমন এক সন্দিগ্ধভাবে চাহিল। বার্টি তাহাতে একটু রাগ দেখাইয়৷ কট্‌মটু করিয়া চাহিয়া উঠিল—যেন তার সেই দৃষ্টি দ্বারাই দাসীর সন্দিগ্ধ ভাবটাকে দমন করিয়া দিবে। বার্টি কিন্তু ভিতর থেকে তেমন জোর পাইতেছিল ন –ত্রমেই যেন কাহিল হইয় পড়িতেছিল। কণ্ঠস্বর তেমন উঠে না—তাহাতে কোনো তেজ নাই, কেমন একটা কাতরতায় ভরিয়া উঠিতেছে। ফ্রাঙ্ক তখন বার্টিকে সঙ্গে লইয়া পিছনকার একটা ঘরে গেলেন। ঘরটি অন্ধকার এবং কনকনে ঠাণ্ড । কিন্তু শীঘ্রই তাহাতে আলো ও আগুন আনা হইল, তখন তাহা বেশ আরামপ্রদ হইয়া উঠিল। অ্যানি টেবিল পাতিয়া জিজ্ঞাসা করিল—“খাবার কি এক জনের মতো আনব ;" - একেল থাইতে বার্টি কিন্তু বোধ করিবে বলিয়া ফ্রাঙ্ক বলিল—“না দুজনের মতো –আমিও কিছু খাবো।” - বাটি আসিয়া আগুনের ধারে আরাম-কেদারার উপর পা ছড়াইয়া বসিয়া পড়িয়াছিল। মুখে কথা ছিল না। দাসী জিনিসপত্র আনিতে বার বার যাতায়াত করিতেছিল, তাহাকে যতবার সে ঘরের উজ্জ্বল আলোয় দেখিতেছিল, . ততবারই সে কেমন নিজেকে কুষ্ঠিত বোধ করিতেছিল । অন্ধকারে যতক্ষণ ছিল একরকম ছিল ভালো। নিজেকে o