পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S8


SumitaBot (আলাপ)-------------------------------

করিয়া পুড়াইয়া ফেলে—যেন কিছু নয়। কারুর কাছে এবং কিছুতেই সে খাটাে ইয়া থাকে না। ফ্রাঙ্ক তাহাতে কিছুমাত্র অসন্তোষ বোধ মনে করেন না-বরঞ্চ বেশ একটা আমোদ পান। বার্টিকে তার এখন এমন মজার লাগে যে তিনি যেখানে যান, সেইখানেই বার্টির পরিচয় করাইয়া দেন। শীত গিয়া বসন্ত আসিয়া পড়িৰ । তখন লগুন-সহর আমোদ প্রমোদে সরগরম। বার্টি ভারি ব্যস্ত। আজ চায়ের নিমন্ত্রণ, কাল ডিনার, পরশু নাচের মজলিস, তারপর দিন থিয়েটার এমনি করিয়া বেড়ায়। দু পাশে দুজন সুন্দরীকে রাথিয় সে যখন ভোজে বসে—পর্য্যায়ক্রমে দ্ব পাশে ফিরিয়া একবার এর সঙ্গে আলাপ একবার ওর সঙ্গে আলাপ করে তখন সুন্দরীদের হীরক ভূষণের উজ্জ্বল্যে তাহার চক্ষু ধাধিয়া যায় না, যেন এই সকলে সে বহুদিন হইতে অভ্যস্ত! থিয়েটারের ষ্টলে কিম্বা ডেস-সার্কেলে, বুকে ফুল আঁটিয়া হাতে দুরবীণ লইয়া, চকচকে হীরার আংটি পরিয়া লাট মহালাটের মতো গিয়া যখন বসে-তথন তাহার কি চাল! সে যেন মস্ত একজন কেউ! কি গম্ভীর ভাব ! এত যে সুন্দরী ললনা তাহার পাশে বসিয়াছেন তাহদের একজনও যেন তাহার দৃষ্টির যোগ্য নহে—সে এমনি ভাবে তাহাদের দিকে তাকায়। ফাঙ্ক এইসব দেখিয়া মনে মনে হাসিত—এবং সেই হাসির মধ্যে বেশ একটা আমোদ উপভোগ করিত। ফ্র্যাঙ্ক নিষ্কৰ্ম্মা—কাজেই যাহাতে তিনি আমোদ পাইতেন তাহাই প্রশ্রয় দিতেন। তিনি যে বার্টিকে শুধু সাহায্য করিতেছিলেন, তাহা নহে তাহার নিকট হইতে আমোদ পাইতেন বলিয়া তাহাকে এত প্রশ্রয় দিতেন। বার্টির এই সব ধরণধারণ তাহার বেশ লাগিত--তাহাকে লইয়া বেশ একটা মজা চলিত। বার্টি ফ্র্যাঙ্কের এই সকল দানকে দান বলিয়া গ্রহণ করিত না—ঋণ বলিয়া লইত । সে বলিত-তাহার সময় ভালো হইলে ফ্র্যাঙ্কের ঋণ কড়ায় গণ্ডায় শোধ করিয়া দিবে। সেই জন্য সে প্রায়ই পকেট বই বাহির করিয়া তার জন্ত যে টাকা খরচ হইতেছে তাহার একটা হিসাব টুকিয়া রাথিত। পনেরো দিনের মধ্যে দেখা গেল হিসাবের খাতায় একশে পাউণ্ড + ऊँठिंब्रटिष् ! - প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩১৭ । 'উৎসবের আয়োজন করিত। বার্টকে লইয়া বাহিরে যেমন মজা চলিত বাড়ীর মধ্যেও ফ্রাঙ্ক সেইরূপ আমোদ পাইতেন। বার্ট মিষ্ট কথা বলিয়া ফ্রাঙ্গের চাকর-চাকরাণি অ্যানি ও তাহার স্বামীকে বেশ বশ করিয়া লইয়াছিল—এবং তাহাদেরই সাহায্যে ফ্র্যাঙ্কের বাড়ী তার নিজের মনের মতো করিয়া লইতে লাগিল। সব যেন কেমন এলোমেলো ছিল—বার্টি সেগুলো সুন্দর করিয়া সাজাইয়া লইল। পাথরের মূৰ্ত্তি পামগাছ, ভালো ভালো কাপেট পরদ যা-খুসি-তাই কিনিয়া আনিয়া ঘরে পূরিল। ঘর রীতিমত বিলাসের অস্তি হইয়া উঠিল । রাত্রি বেলা সেই ঘরের মধ্যে দুই বন্ধু বসিয়া যখন আলাপ করিতেন তখন নেশার চোথে চুরুটের ধোয়ায়, অস্পষ্ট আলোকে র্তাহীদের মনে হইত যেন আকাশের মধ্যে কোন এক মায়া রাজ্যে র্তাহার রহিয়াছেন । এই ঘরের মধ্যে বার্টি প্রতিদিন বাছ বাছা বন্ধুদের নিমন্ত্রণ করিয়া ডাকিয়া আনিত-তাহীদের লইয়া রীতিমত মজলিস চলিত। - - ফ্র্যাঙ্ক এত আমোদ জীবনে আর কখনো কিছুতে পান নাই। লওনে এতদিন আছেন, বার্টির মতো এমন আমোদ দিতে কেহ পারে নাই। ফ্র্যাঙ্ক ভাবিতেন,— দুনিয়ায় যাহা কিছু আছে সবগুলার ভিতরে একবার প্রবেশ করিয়া দেখায় দোষ কি ! তাই বলিয়া ফ্র্যাঙ্কের চিত্ত যে হীন ছিল তাহা নহে। তিনি সব দিক বিবেচনা করিয়াই চলিতেন। যত-কিছু প্রমোদের,-বিলাসের সামগ্ৰী আছে তার সবগুলিকেই তিনি তার জীবনে উপভোগ করিয়াছেন বটে, কিন্তু জীবনটার উপর তার একটা বিশেষ কদর ছিল না ;—মনে করিতেন সেটা নেহাৎ একটা প্রহসনের মতো, বছর কয়েকের সমষ্টি মাত্র –ইহার বিশেষ কোনো মূল্য নাই! সেই জন্য সংসারযাত্রাকে উচ্চভাবে না দেখিয়া, ‘হেঁসে-খেলে-নাওরে যাছ, গোছের জীবন যাপন করিতেন। যাহাতে আমোদ-প্রমোদ শুধু তাহাতেই মাতিতেন। বাটিকে যে এত প্রশ্রয় দিয়া আসিতেছেন, সেও এই কারণে। মেয়ে মজলিস, মদের ফোয়ার এই গুলোর আমোদে যে তাছার খুব ভালো লাগিত তাহা নহে,—আসল কথা বার্টির এখনকার ধরণ ধারণ তার বড় মজার লাগিত –সেই বাটি যে একমাস আগে অন্নহীন T ১ম সংখ্যা । ] সংকলন ও সমালোচন—ভাগ্যচক্র । &)(: പ്പഹSumitaBot (আলাপ)--১৮:০৯, ২৫ মার্চ ২০১৬ (ইউটিসি)~---- বস্ত্রহীন আশ্রয়হীন অবস্থায় ছিল সে এখন মস্ত ‘বাবু’ হইয়া উঠিয়াছে, বড় ঘরের ছেলেদের সঙ্গে বড়মানুষী চালে মেশে, ভজন ডজন টাই, কলার কেনে, ভালো ভালো দামী দার্থী এসেন্স মাথে, সাজ সজ্জার শ্রাদ্ধ করে, অথচ তার একটি পয়সার সম্বল নাই। সকলকার কাছে সে তার নিজের অবস্থা কেমন গোপন করিয়া চলিতেছে—কথায় বার্তায়, মুখে চোখে ধরণ ধারণে বুঝিবার যো নাই! সে যে অবস্থায় আছে যেন সেই অবস্থারই লোক ! তাহার দৈন্তটাকে সে ফ্র্যাঙ্কের পয়সায় কেনা সাজসজ্জায় কেমন বেমালুম ভাবে ঢাকিয়া রাশিয়াছে। সে এমনি তৈরি যে চালচলনে কোথাও তার ঠেকিতেছেন, তার ছদ্মবেশটা কোনো রকমে প্রকাশ হইয়া পড়িতেছে না। বার্টির এই চতুর ছাতায় ফ্র্যাঙ্ক মনে মনে ভারি আমোদ পাইতেন, এবং. সেই আমোদটাকে অক্ষুণ্ণ রাখিবার জন্য বার্টির ছদ্মত যুহাতে অটুট থাকে তাহার বিধিমত চেষ্টা করিতেন। বার্টি যে ফ্র্যাঙ্ককে ঠকাইয়া যাইতেছিল তাহা নহে, ফ্র্যাঙ্ক বুঝিয় মুঝিয়া ইচ্ছা করিয়াই ঠকিতেছিলেন। বার্টি প্রথম প্রথম নিজের খরচের একটা সঠিক হিসাব রাথিতে খুব তৎপর ছিল, কিন্তু যতই দিন যাইতে লাগিল, যতই টাকার অঙ্ক বাড়িয়া উঠতে লাগিল ততই তাহার হিসাব রাখিবার উৎসাহ কমিয়া আসিতে থাকিল ;–শেষে হিসাবের বইয়ের পাতা শূন্ত পড়িয়া রহিল। এই ভাবে দিন যাইতে লাগিল। ফ্যাঙ্কের মনে মনে যে সংকল্প ছিল, তার কোনো মুরুব্বি বন্ধুকে পাকড়াইয়া বার্টির একটা চাকরি জুটাইয়া দিবেন সে কথা তার আর খেয়ালই রহিল না। তিনি এতই বার্টির আমোদ লইয়া মাতিয়া উঠিয়াছিলেন । হঠাৎ একদিন এক ঘটনা ঘটিল। বার্টি সেদিন ভোরে একেল কোথায় বাহির হইয় গেল, সমস্ত দিন আর ফিরিল না। ফু্যাঙ্ক আহারের সময় তাহার জন্ত অপেক্ষা করিলেন বাট আসিল না, ছথিত মনেসেদিন তিনি একলাই আহার করিলেন । এই-অসে-এই-আসে-করিয়া রাত্রি জাগিয়া বসিয়া রহিলেন, বার্টির দেখা নাই, অনিদ্রায় রাত কাটিয়া গেল। এমনি করিয়া দুদিন যায় বার্টির খোজ নাই । অবশেষে ফ্যাঙ্ক পুলিশে থপর দিলেন। তারপর একদিন খুব ভোরে হঠাৎ বাট ফ্যাঙ্কের বিছানার পাশে আসিয়া দাড়াইল। "ফ্র্যাঙ্ক রাগ করনি তো ভাই। আমার জন্তে কি বিশেষ চিন্তিত হয়ে পড়ে-- , ছিলে ?” এই ঘটনায় সে যেন একটু অপ্রতিভ হইয়াছে - মুখে এমন ভাব দেখাইল। এবং ফ্যাঙ্কের কাছে বিনীত । ভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করিল। কি জানো, এই এক ঘেয়ে । জীবন তার বড়ই অসহঁ হইয়া উঠিয়াছিল—রোজ রোজ । সেই সাজ গোজ, রোজ রোজ সেই মেয়েদের মজলিস, লাট । মহালাটদের সঙ্গে ক্লবে মেশা, বুকে ফুল গুজিয়া থিয়েটারে । যাওয়া তার আর কিছুতে ভালো লাগিতে ছিল না—তাহার । পক্ষে একটু বাড়া-বাড়ি হইয়া উঠিয়াছিল! ফ্যাঙ্গ ভারি বিক্ষিত হইয়া গেলেন, বলিলেন—“কোথায় ছিলে লুকিয়ে ?” “লণ্ডন ছেড়ে যাইনি। এই এখানে সেখানে পুরানে বন্ধুদের আড্ডায় একটু ঘুরে এলুম।” “কিন্তু তোমার সঙ্গে তো কার এখানে জানা-শুনা ছিল न !” “কোনো বড় লোকের সঙ্গে জানা-শুনা ছিল না বটে, কিন্তু দু একজন গরীব বন্ধু এখানে আছে। ভাই, আমার উপর রাগ করনি ত ?” ফু্যাঙ্ক বিছানাতেই উঠিয়া বসিয়া কথা কহিতেছিলেন। তিনি দেখিলেন বাটির চেহারা অত্যন্ত পাংশুবর্ণ হইয়া গেছে, শরীর ভারি ক্লান্ত এবং অত্যন্ত অপরিস্কার-পায়জামা কাদায় ভরা, টুপি দোমড়ানো, কোটের মধ্যে তিনটে ফালা পড়িয়াছে। দোষী যেমন বিচারকের সম্মুখে দাড়ায় সেও তেমনি অত্যন্ত ভীত ত্রস্ত ভাবে দাড়াইয়া আছে! “ভাই আমার উপর রাগ কোরোনা—এবারকার মতো মাপ কর।” অসহ ! ফ্র্যাঙ্ক চটিয়ী উঠিয়া বলিলেন—“একি অভদ্রের মতো চেহারা ! কোথায় গিয়ে ছিলে ?” “এই—কাছাকাছিই ছিলুম।” এর বেশ কথা ফ্র্যাঙ্ক কিছুতেই বাটির পেট হইতে বাহির করিতে পারিলেন না। বাটি শুধু বলিল তার ভালো লাগিতে ছিলনা বলিয়া সে একটু ঘুরিয়া আসিয়াছে। এখন সে ভারি ক্লান্ত–একটু বিশ্রামের জন্য শৰ্য্যা গ্রহণ "